সৈয়দ আশরাফের মতো স্বল্পভাষী-মিষ্টভাষী ও প্রজ্ঞাবান মানুষ রাজনীতিতে বিরল: হানিফ

|

সৈয়দ আশরাফের মতো স্বল্পভাষী-মিষ্টভাষী, পরিমিতিবোধসম্পন্ন ও প্রজ্ঞাবান মানুষ রাজনীতিতে বিরল বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ। তিনি তার ফেসবুক পেজে সৈয়দ আশরাফের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এ কথা বলেন।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ। সৈয়দ আশরাফ ২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারি থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। তার বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর।

মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ওয়ান ইলেভেনের কঠিন দুঃসময়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা তখন আদর্শের পরীক্ষায় হাবুডুবু খাচ্ছেন। লোভের কাছে বশ্যতা স্বীকার করেছেন অনেকে। যখন প্রিয় নেত্রীর গ্রেফতারে হতবিহবল কর্মীরা। হতাশা, বিভক্তি আর অজানা আশঙ্কায় বিপর্যস্ত আওয়ামী লীগ। এ সময় সৈয়দ আশরাফ শেখ হাসিনার পক্ষে এক অনবদ্য অবস্থান নেন। দলকে টেনে তোলেন খাদের কিনারা থেকে।

তিনি বলেন, সৈয়দ আশরাফ দলের বাইরেও ছিলেন সমান জনপ্রিয়। এমন স্বল্পভাষী, মিষ্টভাষী, পরিমিতিবোধসম্পন্ন প্রজ্ঞাবান মানুষ রাজনীতিতে বিরল। দেশ, বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনার প্রতি সৈয়দ আশরাফের কমিটমেন্ট ছিল সব কিছুর ঊর্ধ্বে। কর্মীদেরকে উনার মত করে ধারণ করতে খুব কম নেতাই পেরেছেন। দলের ভেতরে বাইরে কাউকেই তিনি ব্যক্তিগত আক্রমণ বা আঘাত করে কথা বলেননি। আদর্শিক রাজনীতিতে পূর্বসূরিদের উত্তরাধিকারীত্ব বহন করে পথ হাঁটা সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ঈর্ষণীয় ইমেজের পর অন্যান্য নেতাদের মধ্যে ছিলেন জনপ্রিয়তার শীর্ষে।

মাহবুব উল আলম হানিফ আরও বলেন, ৫ মে’র হেফাজতী তাণ্ডব। সেদিন আশরাফ ভাইয়ের ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তার কারণেই হেফাজত লেজ গুটিয়ে পালিয়েছিলো। ২০১৩ সালের ৫ মে। পুরো ঢাকা শহর হেফাজতে ইসলামের দখলে। মতিঝিলের শাপলা চত্বরে তাদের সমাবেশ থাকলেও দুপুর থেকে তাণ্ডব শুরু হয়ে যায়। হেফাজতের কর্মীরা বায়তুল মোকাররমে বইয়ের দোকান পুড়িয়ে দেন। তারা হুংকার ছাড়ে অপরাজেয় বাংলা গুঁড়িয়ে দেবে। হাজার হাজার হেফাজত কর্মীর সামনে র‍্যাব-পুলিশ ছিল অসহায়। শুধু বিএনপি নয়, হেফাজতের সঙ্গে সেদিন হাত মিলিয়েছিলো দেশি বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা। আওয়ামী লীগের কিছু নেতা-মন্ত্রীরাও হয়ে পড়েছিলেন কিংকর্তব্যবিমূঢ়। সর্বত্র ছিল উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।

এই অবস্থায় হেফাজতের উদ্দেশে যেই মানুষটি বলিষ্ঠ কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘আমাদের সরলতাকে দুর্বলতা ভাববেন না, রাতের মধ্যেই আপনারা ঘরে ফিরে যাবেন এবং ভবিষ্যতে আপনাদের আর ঘর থেকে বের হতে দেওয়া হবে না’ তিনি সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী। তার কথায় কাজ হয়েছিলো। পরদিন হেফাজতের কর্মীরা ঢাকা শহর থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছিলো।

হানিফ বলেন, ২০১৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২০ তম কাউন্সিলে আশরাফ ভাইয়ের দেওয়া বক্তব্যটি আজো মাথায় গেঁথে আছে। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের সন্তান। আওয়ামী লীগের ঘরেই আমার জন্ম। আওয়ামী লীগ যখন ব্যথা পায়, আমার তখন ব্যথা লাগে। একজন আওয়ামী লীগ কর্মী ব্যথা পেলে আমি ব্যথা পাই। আমার রক্ত আর আপনার রক্ত একই। রক্তে কোনো বিভেদ নাই।’

তিনি আরও বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগ তাই শুধু যেকোন একটি দল নয়, আওয়ামী লীগ কোনো সনাতনী দলও নয়, আওয়ামী লীগ একটি ত্যাগের নাম, আওয়ামী লীগ একটি অনুভূতির নাম, যে অনুভূতি ত্যাগের এবং আত্মত্যাগের।’

আমার খুব স্পষ্ট মনে আছে, ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল। কত নেতার কত রকম দৌড়-ঝাঁপ! নানা রকম কায়দা-কৌশলে বিভিন্ন মিডিয়ায় সৈয়দ আশরাফকে দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অযোগ্য প্রমাণিত করার জন্য প্রচারণা চালানো হলো। কিন্তু যাকে সরানোর জন্য এত কিছু, সেই মানুষটি নির্বিকার। বরাবরের মতোই নির্বিকার। কাউকে কিছু বলেননি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কাউন্সিল অধিবেশনে বক্তৃতার জন্য যখন তার নাম ঘোষিত হলো, মিতভাষী এই জ্ঞানতাপস, মুক্তিযোদ্ধা এবং আধুনিক বাংলাদেশের রাজনীতির ঋষিপুরুষ ধীরস্থির পায়ে মাইকের সামনে এসে দাঁড়ালেন। তার পক্ষে-বিপক্ষের লাখো জনতা পিনপতন নীরবতায় অপেক্ষমাণ। সবার চোখেমুখে একটাই প্রশ্ন-তিনি কী বলবেন? বলেন হানিফ।

তিনি অত্যন্ত আবেগ জড়ানো কণ্ঠে উচ্চারণ করলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি অনুভূতির নাম’। এমন গভীরতর মর্মস্পর্শী শব্দাবলী বঙ্গবন্ধু ছাড়া আর কোনো নেতার মুখে বাঙালি জাতি কখনো শোনেনি।

ক্ষমতার রাজনীতিতে সৈয়দ আশরাফ বিরল এক ক্লাস। উনার চলে যাওয়ার দুই বছর হয়ে গেলো। যেকোন সংকটে এখনো আমাদের আপার পাশে সৈয়দ আশরাফ ভাইকেই খুঁজে ফিরি। পরলোকে খুব ভালো থাকবেন শ্রদ্ধেয় নেতা।

ইউএইচ/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply