বদিকে পিতা দাবি করে যুবকের মামলা; বদি বললেন, ‘ম্যাটার না’

|

কক্সবাজার প্রতিনিধি :

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) আবদুর রহমান বদিকে পিতা দাবি করে আদালতে মামলা করেছেন ইসহাক নামের এক যুবক। পাশাপাশি সাবেক এই এমপিকে পিতা প্রমাণে আদালতের কাছে ডিএনএ টেস্টের দাবিও করেছেন তিনি।

রোববার টেকনাফ সহকারী জজ জিয়াউল হকের আদালতে আবেদনটি করেন মো. ইসহাক (২৬) নামের ওই যুবক। পরে অভিযোগ আমলে নিয়ে আদালত বদির বিরুদ্ধে সমন জারি করেছেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ওসমান গনি বলেন, অভিযোগ আমলে নিয়ে আদালত অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছেন। আগামী ১৩ জানুয়ারি মামলাটির পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেছেন আদালত।

আদালতে দেয়া অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯২ সালের ৫ এপ্রিল মামলার বাদি ইসহাকের মা সুফিয়া খাতুনকে কালেমা পড়ে বিয়ে করেন আবদুর রহমান বদি। ওই সময়ে বিয়ে পড়ানোর আয়োজন হয় বদির পারিবারিক আবাসিক হোটেল নিরিবিলির ইবাদত খানায়। তখন বিয়ে পড়ান কর্মরত মৌলবি আবদুস সালাম। বিয়ের সাক্ষী ছিলেন ওই হোটেলের দারোয়ান এখলাছ।

মো. ইসহাক বলেন, আমি সর্বপ্রথম আমার পিতৃত্বের পরিচয়টা চাই, আমি আমার অধিকার চাই।

ছোটবেলা থেকে তিনি মায়ের কাছে শুনে এসেছেন তার বাবা আবদুর রহমান বদি। কিন্তু কখনও তিনি বাবার স্নেহ-ভালোবাসা পাননি। বাবার স্বীকৃতির দাবিতে মায়ের সঙ্গে তিনি অসংখ্যবার আবদুর রহমান বদির কাছে যান কিন্তু বদি তার রাজনৈতিক শত্রু ও সামাজিক অবস্থানসহ নানা সমীকরণ দেখিয়ে তাকে এবং তার মাকে বিয়ের বিষয়টি গোপন রাখতে বলেন। এ কারণে তার মা স্বামীর (আবদুর রহমান বদি) কথার অবাধ্য হননি। তাই তার মা সুফিয়া খাতুন এতোদিন চুপ ছিলেন। কিন্তু দিনের পর দিন স্বীকৃতি দেয়ার আশ্বাসে কালক্ষেপণ করায় আদালত পর্যন্ত এসেছেন বলে জানান মামলার বাদি মো. ইসহাক।

সর্বশেষ গত জাতীয় নির্বাচনের আগেও তিনি সন্তানের স্বীকৃতি আদায়ের জন্য বদির আত্মীয় স্বজন এবং আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সবার কাছে ধর্না দিয়েছেন। কিন্তু সবাই আশ্বাস দিলেও কেউ তার বিষয়টি সুরাহা করতে পারেননি।

ইসহাকের দাবি, বিষয়টি নিয়ে তারা মা-ছেলে আবদুর রহমান বদির ছোটবোন শামসুন নাহারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তারা ঘরোয়াভাবে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেন কিন্তু বদি কৌশলে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন।

ইসহাক আরও জানান, সম্প্রতি দুদকের মামলায় হাজিরা দিয়ে টেকনাফে ফুলেল সংবর্ধনা গ্রহণকালে বদি তার একমাত্র ছেলে শাওন ছাড়া আর কোনো ছেলে নেই দাবি করে বক্তব্য দেন। এরপর ইসহাক সিদ্ধান্ত নেন তিনি আর চুপ থাকবেন না। তাই তিনি আদালতের আশ্রয় নেন। এছাড়া এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরও অভিযোগ করেছেন তিনি।

এ বিষয়ে আবদুর রহমান বদি সাংবাদিকদের জানান, এটা কোনো ম্যাটার না। উখিয়া টেকনাফের যে কেউ তাকে পিতা দাবি করতে পারেন। ইসহাক সন্তান কিনা এমন প্রশ্নের সরাসরি জবাব এড়িয়ে যান। মামলার কাগজ হাতে পেলে কথা বলবেন বলেও জানান তিনি।

জানা যায়, ইসহাকের নানার বসবাস ছিল সদর ইউনিয়নের ধুমপ্রাংবিল এলাকায়। তার নানা প্রবাসে থাকায় তাদের বাড়িতে বারবার চুরি ডাকাতি সংগঠিত হচ্ছিলো। তখন তৎকালীন সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এজাহার কোম্পানি ইসহাকের নানি ও মাকে তার বাড়িতে আশ্রয় দেন। সেখানেই বদির সাথে সুফিয়া খাতুনের প্রেম ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠে। একপর্যায়ে কলেমা পড়ে বিয়ে করে বদি। পরে বদির সন্তান ইসহাক সুফিয়া খাতুনের গর্ভে চলে আসলে এজাহার কোম্পানি তাকে জোরপূর্বক এক রাজমিস্ত্রির সাথে বিয়ে দেন। অন্যথায় গর্ভের সন্তান নষ্ট করে ফেলার হুমকি দেন। বাধ্য হয়ে সুফিয়া খাতুন সেই রাজমিস্ত্রিকে বিয়ে করে উখিয়ার মরিচ্যা এলাকায় চলে আসেন। জন্ম হয় ইসহাকের। সেই রাজমিস্ত্রির পিতৃ পরিচয়ে ইসহাক বড় হয়েছেন। কিন্তু এখন তিনি আসল পিতার পরিচয়ে পরিচিত হতে চান।

ইউএইচ/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply