শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে ১ রানের জয় চট্টগ্রামের

|

কাগজে কলমের হিসেবকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে বঙ্গবন্ধু টু-টোয়েন্টি কাপে সবচেয়ে বেশি আলো ছড়ানো দুই দলের ম্যাচ ছিল আজ। যথারীতি ক্রিকেটীয় রোমাঞ্চের কমতি ছিল না তাতে। আর তাতে চট্টগ্রামকে প্রবল শঙ্কার চোরাস্রোতে ফেলেও শেষ পর্যন্ত জয় ছিনেয়ে আনতে ব্যর্থ হলো রাজশাহী। চট্টগ্রামের দেয়া ১৭৬ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে এক রানের হারের বেদনায় নীল হতে হলো নাজমুল হোসেন শান্তর রাজশাহীকে।

লিটন দাসের ৫৩ বলে অপরাজিত ৭৮ রানের ক্যামিওর সঙ্গে মোসাদ্দেক হোসেনের ২৮ বলে ৪২ ও সৌম্য সরকারের ২৫ বলে ৩৪ রানে ভর করে টুর্নামেন্ট-সর্বোচ্চ ১৭৬ রান তোলা গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল। কারণ তাদের বোলিং অ্যাটাক টুর্নামেন্টে প্রতিপক্ষকে সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছে।

কিন্তু এই ম্যাচই যে এতটা শ্বাসরুদ্ধকর হবে তা কে ভেবেছিল? শেষ ৩ বলে মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহীর প্রয়োজন ছিল ১৪ রান, চতুর্থ ও পঞ্চম বলে যথাক্রমে ক্লিন-হিটে ছয়, ইনসাইড-এজে চারের পর শেষ বলে ২ রানের বেশি নিতে পারলেন না রনি তালুকদার। ফলে টুর্নামেন্টের বাকি চার দলকেই টানা হারনোর চক্রপূরণ করলো চট্টগ্রাম।

১৭৭ রান তাড়া করে শেষ ১৪ বলে রাজশাহীর প্রয়োজন ছিল ৩৩ রান। ১৮-তম ওভারের পঞ্চম বলে মোস্তাফিজকে ছয় মেরে আশা জোগালেন নুরুল, এরপর শরিফুলকে চার-ছয় মারেন ফরহাদ রেজা।

তবে রেজা ফিরলেন লো-ফুলটসে লং-অনে ধরা পড়ে, শেষ ওভারের প্রথম বলে নুরুল মোস্তাফিজের বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে। এরপরের দুই বল ডট দিলেন রনি, ৪র্থ বলে মারলেন লং-অন দিয়ে ছয়। পরের ইনসাইড-এজটা ফাঁকি দিল লিটনকে, একটু আগের কঠিন সমীকরণটা এসে দাঁড়ালো একটা শটের ব্যবধানে। যেটি আর মেলাতে পারলেন না রনি।

রাজশাহীকে শুরুতে আশা দিয়েছিলেন শান্ত-ইমন। পাওয়ার প্লের প্রথম ৫ ওভারেই দু’জন তুলে ফেলেছিলেন ৫১, এর মাঝে নাহিদুলের করা তৃতীয় ওভারে এসেছিল ১৮। শান্ত মেরেছিলেন দুই ছয়। তবে ৬ষ্ঠ ওভারে ছন্দপতন হলো, মোস্তাফিজ এসেই ব্রেকথ্রু দেওয়াতে। ডাউন দ্য লেগের বলে এজড হওয়ার আগে শান্ত করেছেন ১৪ বলে ২৫।

মাঝে ২ ওভার আঁটসাঁট যাওয়ার পর আবারও শেকল ভেঙেছিলেন ইমন, তাইজুলকে একটা ছয় মেরে। বড় শটের চেয়ে আশরাফুল স্ট্রাইক বদলের দিকেই মনযোগী ছিলেন বেশি। একবার জীবন পেলেন মোসাদ্দেকের বলে ক্যাচ তুলেও সৈকত মিস করায়, সে বলে ওভারথ্রো থেকে ছয় রানও পেলেন। তবে সে ওভারেই সুইপের চেষ্টায় টপ-এজড হয়ে ফিরতে হয়েছে তাকে, ১৯ বলে ২০ রান করেছেন ‘অ্যাশ’। পুরো ইনিংসেই আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভুগতে দেখা গেছে তাকে। ইমন ফিফটি পেয়েছিলেন ৩৫ বলে, তবে শেষদিকে গতি কমে এসেছিল তার। ফিফটির পর ৯ বলে করেছেন ৭ রান, জিয়াকে আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন৪ ৪৪ বলে ৬ চার ও ১ ছয়ে ৫৮ রান করে।

শেষ ৬ ওভারে রাজশাহীর প্রয়োজন ছিল ৬৯ রান। তাইজুলকে প্রথম দুই বলেই চার, এরপর মোস্তাফিজকে ছয় মেরে আশা জুগিয়েছিলেন মাহাদি। শরিফুলের বলে স্কুপ করতে গিয়ে মিস করে এলবিডব্লিউ হয়েছেন তিনি, রিভিউ নিয়েও বদলাতে পারেননি তানভির আহমেদের সিদ্ধান্তটা। পরের বলে মোস্তাফিজের শিকার ফজলে রাব্বি, যিনি আগের ওভারে মেরেছিলেন একটি ছয়। মাহাদি পারলেন না, রাব্বি পারলেন না, এরপর সোহান বা রনিও তাই।

এর আগে, টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে দুর্দান্ত শুরু করে দলের দুই ওপেনার সৌম্য ও লিটন দাস। লিটন অপরাজিত ছিলেন ৫৩ বলে ৭৮ রানে যার মধ্যে চার ছিলো ৯ টি ও ছক্কার মার একটি। সৌম্য সরকার আউট হয়েছেন ৩৪ রানে। মোসাদ্দেক করেছেন ৪২ রান। নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে মিঠুনদের দল সংগ্রহ করে ৫ উইকেটে ১৭৬ রান। শেষ পর্যন্ত এই স্কোরই শ্বাসরুদ্ধকর এক ম্যাচ উপহার দিলো।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply