গোল করতে সক্ষম খেলোয়াড় খুঁজে বের করতে হবে: টম সেন্টফিট

|

টম সেন্টফিট এই নামটির সাথে বেশ পরিচিত বাংলাদেশের ফুটবল অঙ্গন। জাতীয় দলের ফুটবলার মামুনুল, জীবন, আশরাফুল রানা ও জামাল ভূঁইয়াদের গুরু ছিলেন এই বেলজিয়ান কোচ। ২০১৬ সালে দুই ম্যাচের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন বাফুফের সাথে। তার আমলে বাংলাদেশ ফুটবলের তেমন কোনো সফলতা ছিল না। দলের সাথে যোগ দিতে না দিতেই কঠিন এক পরীক্ষা দিতে হয়েছিল এই কোচকে।

এশিয়া কাপের বাছাইপর্বে ঘরের মাঠে ভুটানের সাথে গোলশূন্য ড্রয়ের পর অ্যাওয়ে ম্যাচে ২-০ গোলে হেরে বিশ্ব ফুটবল থেকে নির্বাসনে যেতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। ২০১৮ সালে জামালদের ছেড়ে দায়িত্ব নেন গাম্বিয়া জাতীয় ফুটবল দলের। সেখানে কাজ করছেন সফলতার সাথেই। বেলজিয়ামে জন্মগ্রহণ করা এই কোচ বাংলাদেশ ফুটবলের বর্তমান ও ভবিষ্যত নিয়ে একান্তে আলাপ করেছেন যমুনা নিউজের সাথে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সুখন সরকার

প্রশ্ন: মি. সেন্টফিট, কেমন আছেন? বাংলাদেশের কথা মনে পড়ে?
হ্যাঁ, অবশ্যই বাংলাদেশের প্রতিটি মুহূর্ত আমার মনে আছে। খেলোয়াড় থেকে শুরু করে অফিসিয়াল সবাইকে খুব বেশি মনে পড়ে। সব সময়ই চেষ্টা করি বাংলাদেশের ফুটবল ও ফুটবলারদের খোঁজ খবর রাখতে। যদি কখনো সুযোগ আসে তবে আমি আবারও বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নিয়ে তোমাদের মাঝে ফিরে আসবো। এর একমাত্র কারণ, কাজ করার জন্য বাংলাদেশ অসাধারণ জায়গা।

প্রশ্ন: আপনার কি মনে হয় ২০১৮ সালের পর বাংলাদেশের ফুটবলের কোনো পরিবর্তন এসেছে?বাংলাদেশের ফুটবলে বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে, বিশেষ করে জেমি ডে কোচ হিসেবে দারুণ কাজ করছেন। পুরো দলেকে একটা শেপে নিয়ে এসেছেন জেমি। ফিটনেস, আগের চেয়ে বেশ ভালো হয়েছে জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের। দল হিসেবে খেলার যে প্রবণতা সেটা কিন্তু স্পষ্ট। নতুন খেলোয়াড়রা দলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার চেষ্টা করছে। সব কিছু মিলিয়ে সু-সময়ের দিকেই এগুচ্ছে বাংলাদেশের ফুটবল।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের কাদের কাদের খেলা ভালো লাগে?
জামাল ভূঁইয়া খুবই ভালো এবং অভিজ্ঞ একজন খেলোয়াড়। মামুনুল ইসলামও একজন ভালো খেলোয়াড় ছিল। গোলরক্ষক রানার কথাও আমি বলবো। সে দারুণ একজন খেলোয়াড়। এছাড়াও একঝাঁক তরুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড় আছে বাংলাদেশের।

প্রশ্ন: নেপালের সাথে দুই ম্যাচ সিরিজ জয় এই ব্যাপারটা ঠিক কীভাবে দেখছেন?
জয় তো জয়ই, যদিও নেপাল কাতার, আফগানিস্তান বা ভারতের মতো, খুব একটা শক্তিশালী দল নয় তারপরও মাঠে যখন ফুটবলরা একটি ম্যাচে জয় পায় তখন তাদের মাথায় চেপে বসে জয়ের নেশা আর এই নেশাতেই ফুটবলাররা পরবর্তী ম্যাচগুলোতে প্রতিপক্ষকে গুড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করতে পারে। নেপালের সাথে দুটি ম্যাচেই প্রাণবন্ত ফুটবল খেলেছে বাংলাদেশ। বহুদিন পরে এই জয়ে দারুণ এক অনুভূতি কাজ করছে আমার মধ্যে যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। অভিনন্দন ও শুভ কামনা দুটোই সব সময়ই থাকবে জামালদের জন্য।

প্রশ্ন: ফিফা ও এশিয়া কাপ বাছাইপর্বে অংশ নিতে কাতার গেছে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল, আপনার কী মনে হয়, কেমন করবে বাংলাদেশ?

কাতার খুব শক্ত প্রতিপক্ষ, এবারের বিশ্বকাপ ফুটবলে তারা স্বাগতিক দেশ হিসেবে খেলবে। তাই তারা নিজেদের সেভাবেই প্রস্তুত করছে। তবে একটা ব্যাপার ই- গ্রুপে বাংলাদেশ যতগুলো ম্যাচ খেলেছে সেগুলোতে কিন্তু খুব বড় ব্যাবধানে হারেনি। তাই কাতারের বিপক্ষে জয় পাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছুই নয়। মাঠে নিজেদের সেরা ফুটবলটা খেলতে পারলে সব কিছুই সম্ভব।

প্রশ্ন: বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে কোনো পরামর্শ দিতে চান?
আসলে সত্য কথা ফুটবল ফেডারেশনকে পরামর্শ দেয়ার কিছু নেই। তারা সঠিক পথেই আছে। ফুটবলকে এগিয়ে নিতে তারা যথেষ্ট চেষ্টা করছে। আমি আশা করছি, বাংলাদেশের সবাই তাদের এই কার্যক্রমে সহযোগিতা করছে এবং সাপোর্ট করছে।

প্রশ্ন: আপনার মতে বাংলাদেশ ফুটবলের উন্নয়নের ক্ষেত্রে মূল বাধাগুলো কী কী?
আসলে ভারতের ফুটবলের সাথে তুলনা করা হলে বাংলাদেশের ফুটবল তাদের চাইতে কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। অথচ, ভারত ফুটবলের পেছনে যে বাজেট করে তার অর্ধেকও বাংলাদেশের নেই। বাংলাদেশের মানুষ ফুটবল ভালোবাসে। কিছু কিছু সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে ক্লাবগুলোকেই যেন ১২-১৩ বছরের ছোট ছোট বাচ্চারা ভালো পরিবেশ ও ভালো মানের কোচের কাছে নিয়মিত অনুশীলন করতে পারে। বয়স ভিত্তিক দলগুলোকে প্রাধান্য দিতে হবে। সেই সাথে খুঁজে বের করতে হবে এমন কিছু ফুটবলার যারা ম্যাচে স্কোর করতে পারে। বেশ কিছু ভালো স্কোরার খুঁজে পেলে অনেক সমস্যাই সমাধান হবে । আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে অনেক ট্যালেন্ট ফুটবলার রয়েছে তাদের খুঁজে বের করে আনাটাই বড় চ্যালেঞ্জ।

যমুনা নিউজকে সময় দেয়ায় আপনাকে ধন্যবাদ।
তোমাদেরও অনেক ধন্যবাদ। শুভকামনা।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply