নারীর গাড়ি চালানো বিষয়ে ইসলাম ধর্ম কী বলে

|

ইসলাম এমনই এক ধর্ম, যার চোখে নারী-পুরুষ কোনো বৈষম্যের বিষয় নয়। ইসলামের দৃষ্টিতে নারী-পুরুষের পরিচয় হচ্ছে ‘মানুষ’। মানুষ হিসেবেই নারী সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘পুরুষ বা নারীর মধ্য থেকে যে-ই ভালো কাজ করল, সে মুমিন হলে আমি তাকে একটি পবিত্র জীবনযাপন করার সুযোগ দেব এবং তারা যে কাজ করছিল আমি তাদের তার উত্তম পারিশ্রমিক দান করব।’ (সূরা আন-নাহল : ৯৭)।

এছাড়াও ইসলাম নারীকে শিক্ষা অর্জনের অধিকার, সম্পত্তির অধিকার, স্বাধীন চিন্তা ও মত প্রকাশের অধিকার দিয়েছে।

পরিতাপের কথা হচ্ছে, আল্লাহতায়ালা যেখানে নারীকে এসব অধিকার দিয়ে সম্মানিত করেছেন, সেখানে নামধারী কিছু মুসলমান নারীবিদ্বেষী হয়ে উঠছে।

এই যেমন নারীর উচ্চশিক্ষায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা বা নারী হয়ে কেন গাড়ি চালাবে? এ রকম অবান্তর প্রশ্ন ছুড়ে যাচ্ছে। যারা এমন অবান্তর প্রশ্ন করেন তারা যে ইসলাম সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান রাখেন না- তা নিঃসন্দেহেই বলা যায়।

কেননা ইসলামের সোনালি যুগের ইতিহাসে চোখ রাখলেই দেখা যায়, তখনকার সময়ে নারীর ধর্মীয়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থান ছিল আজকের চেয়েও অনেক ঊর্ধ্বে। তাদের এ সম্মান আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় বন্ধু নবী মুহাম্মদ (সা.) বৃদ্ধি করেছেন।

নবীজি সব সময় নারী শিক্ষাকে উৎসাহিত করতেন। বলতেন, ‘আনসারি নারীরা কতই না উত্তম! লজ্জা কখনই তাদের জ্ঞানান্বেষণে বিরত রাখতে পারে না।’ (মুসলিম, হাদিস : ৭৭২)।

এ তো গেল নারীর উচ্চশিক্ষার কথা। এবার আসুন দেখি, নারীর গাড়ি চালানোয় ইসলাম কী বলে?

ইসলাম বলে, ‘নারী ও পুরুষ একে-অপরের পরিপূরক’। একজন পুরুষ রাষ্ট্রীয় আইন ও ইসলামের হুকুম মেনে যেমন গাড়ি চালাতে পারেন, তেমনি একজন নারীও রাষ্ট্রীয় আইন ও ইসলামের হুকুম মেনে গাড়ি চালাতে পারবেন।

যেমনিভাবে নবীজির যুগে নারীরা উট, গাধা ও ঘোড়া হাঁকাতেন, তেমনিভাবে আজকের আধুনিক যুগেও নারী বাইক বা কার চালাতে পারবেন। নারীদের জন্য উট, গাধা ও ঘোড়ায় চড়া যেমন নিষিদ্ধ ছিল না, তেমনি আজকের যুগে নারীর সাইকেল, বাইক ও কার চালানোও নিষিদ্ধ নয়। বরং নারী-পুরুষ গণপরিবহনে ঘেঁষাঘেঁষি না করে শালীনতা বজায় রেখে সাইকেল, বাইক বা কার চালিয়ে যাওয়াই উত্তম।

মহিলারা বাইক চালালে যারা মনে করে, ইমান হালকা হয়ে গেছে অথবা ইসলামের সর্বনাশ করেছে- তাদেরও জেনে রাখা উচিত, আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর আগে হজরত আয়েশা (রা) উটের পিঠে বসে সিফফিনের যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন।

ইতিহাসে যা উটের যুদ্ধ নামে পরিচিত হয়ে আছে। শুধু সিফফিনের যুদ্ধেই নয়, উহুদ যুদ্ধসহ আরও বেশ কিছু যুদ্ধেই তিনি নবীজির সঙ্গে উটে সওয়ার হয়েছেন। উহুদের যুদ্ধে আয়েশা (রা.) দৌড়ে দৌড়ে আহত সৈনিকদের পানি পান করিয়েছেন। (দ্র. সিরাতে আয়েশা, পৃষ্ঠা : ১৮৫)।

দেড় হাজার বছর আগে নবীজির যুগে নারীরা ঘোড়সওয়ার ছিলেন, উট হাঁকাতেন- শুনে আমরা গর্ব করি। বাহবা দেই। কিন্তু আজকের আধুনিক যুগে নবীজি নেই বলে নারীরা বাইক বা গাড়ি চালাতে চাইলে ফতোয়ার ঝড় তুলি। নিন্দা জানাই, অপমান করি। ইসলাম কি এ শিক্ষাই দিয়েছে?

ইসলাম শালীনতার কথা বলে। এ শালীনতা নারী-পুরুষ সবার জন্যই সমান। শালীনতা বিষয়ে ইসলামের নির্দেশনা- লিঙ্গ নিরপেক্ষ। যারা ইসলামের এ মহান নীতির বিরুদ্ধাচরণ করেন, তারা আদৌ ভালো মুসলমান কিনা- সন্দেহ জাগে।

নারীর গাড়ি চালানোর ব্যাপারে সৌদি আরবের সর্বোচ্চ উলামা পরিষদ ‘হাইয়াতুল কিবারিল উলামা’-এর সদস্যরা বলেন, ‘সুস্পষ্ট কোনো দলিল না থাকলে প্রতিটি জিনিসের আমল হবে বৈধ। এ নীতির ভিত্তিতে নারীদের গাড়ি চালানোতে কোনো সমস্যা নেই’।

নারীর সাইকেল, বাইক ও কার চালানোতে যে অসুবিধা নেই, তার সাপেক্ষে আরও বিস্তর দলিল রয়েছে। যেমন হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। উম্মে সুলাই (রা.) ও তার সঙ্গের আনসার নারীদের নিয়ে রাসূল (সা.) যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতেন। যুদ্ধক্ষেত্রে তারা সৈনিকদের পানি পান করাতেন এবং আহতদের জখমে ওষুধ লাগিয়ে দিতেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ১৫৭৫)।

এ হাদিস জানার পরও কেউ কেউ হয়তো বলবে, নারীরা উটের ওপর হাওদায় থাকতেন। যারা এমন বলে থাকে তাদের কাছে প্রশ্ন থাকছে, সব নারীই কি উটে চড়ে যেতেন?

যারা ঘোড়া বা গাধায় সওয়ার হতেন, তারা কোন হাওদায় বসতেন? আবার কেউ হয়তো বলবেন, নারীরা তখন ধর্মের জন্য যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন তাই তারা উট, গাধা ও ঘোড়া হাঁকিয়েছেন। এখন তো যুদ্ধ নেই তাহলে কেন তারা সাইকেল, বাইক ও কার চালাবেন?

এমন যুক্তিবাদীদের জ্ঞাতার্থে বলছি, নবীজির যুগে নারীরা শুধু যুদ্ধেই অংশ নিতেন না, তারা ব্যবসা-বাণিজ্যেও প্রচুর খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-এর স্ত্রী রায়িতা (রা.) ছিলেন একজন হস্তশিল্পী। তিনি বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে তা বিক্রি করতেন এবং উপার্জিত অর্থ দান করতেন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৬০৩০)।

লেখক-
আমিনুল ইসলাম হুসাইনী


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply