রাস্তায় পড়ে মৃত্যু, তাকিয়ে দেখল শহর

|

শুধুই কি ছোঁয়াচের ভয়, না কি খানিকটা হলেও নাগরিক কর্তব্য পালনের দায় এড়াতে চাওয়া। শহরের রাস্তার বুকে কার্যত পড়ে থেকে এক বৃদ্ধের মৃত্যু যেন সেই প্রশ্নই তুলে দিল। পূর্ব মেদিনীপুর থেকে কলকাতায় আসা ওই বৃদ্ধ বৃহস্পতিবার দুপুরে ধর্মতলা বাস টার্মিনালে অসুস্থ হয়ে পড়ে যান। সবাই ঘটনাটি দেখলেও কেউ তাকে তুলতে ছুটে যাননি। অভিযোগ, সকলের চোখের সামনেই তিনি দীর্ঘক্ষণ পড়ে ছিলেন। পরে ময়দান থানার পুলিশ বৃদ্ধকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। খরব আনন্দবাজার পত্রিকার।

পুলিশ জানায়, পান্নালাল প্রধান নামে ওই বৃদ্ধ পূর্ব মেদিনীপুরের সুতাহাটা থানা এলাকার চৈতন্যপুরের বাসিন্দা। বাড়ি ফেরার বাস ধরতে তিনি ওই সময়ে ধর্মতলা বাস টার্মিনাসে এসেছিলেন। প্লাস্টিকের থালা-বাটি, গ্লাসের ব্যবসায়ী পান্নালাল এ দিন সকালে কেনাকাটা করতে কলকাতায় আসেন। ফেরার জন্য দুপুর আড়াইটা নাগাদ তিনি হলদিয়াগামী শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি বেসরকারি বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। হঠাৎ অসুস্থ বোধ করতে থাকায় তিনি রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ সংলগ্ন একটি চায়ের দোকানে পানি কিনতে গিয়েছিলেন। সেখানেই তিনি পড়ে যান।

করোনার পরিবেশে অসুস্থ ব্যক্তিকে সাহায্য করার বদলে তার দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়ার ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে অহরহই ঘটেছে। কোথাও ডেথ সার্টিফিকেটের অভাবে ১৫ ঘণ্টা পড়ে থেকেছে কোভিড আক্রান্তের মৃতদেহ। কোথাও আবার পথচারী রাস্তায় অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকলেও কেউ ফিরে তাকাচ্ছেন না। মঙ্গলবার হাওড়ায় কোমরের সমস্যা নিয়ে রাস্তায় ছ’ঘণ্টা পড়েছিলেন এক বৃদ্ধ। তার আগে বনগাঁয় হাসপাতালের বাইরে সাহায্যের অভাবে অ্যাম্বুল্যান্সের সামনে পড়ে মৃত্যু হয়েছে বৃদ্ধের। চোখের সামনে স্বামীর মৃত্যু দেখতে বাধ্য হয়েছেন স্ত্রী।

একের পর এক এমন ঘটনায় সমাজবিদেরা তাই প্রশ্ন তুলছেন এই আচরণ কি শুধুই ছোঁয়াচের আশঙ্কায়। না কি এর পিছনে দায় এড়ানোর মানসিকতাও কাজ করছে। কোভিড পূর্ববর্তী সময়েও এই শহরের রাস্তায় পড়ে মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সঙ্কটাপন্ন মানুষের দিকে না চেয়ে পথচারীরা চলে গিয়েছেন। সমাজবিদদের অনেকেরই প্রশ্ন, এতই যদি মানুষ সচেতন হন, তবে থুতনিতে মাস্ক ঝুলিয়ে দিনের পর দিন বাজারে বাজারে ভিড়ের ছবি দেখা যায় কেন? কেনই বা দূরত্ব-বিধি উপেক্ষা করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে কিংবা ধর্মীয় উৎসবে যোগ দেন তারা।

পুলিশ জানিয়েছে, ৬৪ বছরের পান্নালাল ব্যবসার জিনিসপত্র কিনতে কলকাতায় আসা-যাওয়া করতেন। উদ্ধারের পরে পুলিশ পান্নালালের মোবাইল ঘেঁটে প্রথমে তার পরিচয় জানতে পারে। তার পরে ময়দান থানা ঘটনার খবর তার পরিবারকে জানায়। পরে তার দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়। পুলিশ জানায়, আকস্মিক এই ঘটনায় শোকস্তব্ধ তার পরিজনেরা।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply