ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাদা কাগজে স্বাক্ষীদের স্বাক্ষর নেয়ার অভিযোগ এসআইয়ের বিরুদ্ধে

|

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হারুনুর রশিদ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি:

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হারুনুর রশিদের বিরুদ্ধে মারধরের মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়ার কথা বলে এক লাখ টাকা ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগ উঠেছে টাকা না দেওয়ায় খালি সাদা কাগজে মামলার ৭ জন স্বাক্ষীর কাছ থেকে স্বাক্ষর নিয়েছেন এসআই হারুন। এসআই হারুনুর রশিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেনে মামলার বাদি আছিয়া খানম।

আছিয়া খানম জেলার সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের চান্দপুর গ্রামের বাসিন্দা মৃত আমীর খানের স্ত্রী।

পুলিশ সুপারের কাছে দেওয়া অভিযোগ থেকে জানা যায় গত ২৩ মে ও ২৯ মে বাড়ির সীমানা সংক্রান্ত বিরোধের জের নিয়ে প্রতিবেশীর সঙ্গে আছিয়া খানম ও তার স্বজনদের ঝগড়া হয়। প্রতিবেশী প্রতিপক্ষের লোকজন হামলা চালিয়ে আছিয়া খানম ও স্বজনদের মারধর করেন।

এই ঘটনায় আছিয়া খানম বাদি হয়ে গত ৩ জুন সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর প্রতিপক্ষের লোকজন বেপরোয়া হয়ে ওঠে। গত ৬ ও ৯ জুন প্রতিপক্ষের লোকজন আছিয়া খানম ও তার ভাই রবিন আহমেদকে মারধর করে বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাট চালিয়ে ১২ লাখ টাকার ক্ষতিসাধন করে।

এই ঘটনায় গত ১৪ জুন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করেন আছিয়া খানম। সদর থানা মডেল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন মামলাটি তদন্তের জন্য উপ-পরির্দশক (এসআই) হারুনুর রশিদকে দায়িত্ব দেন। এসআই হারুনুর রশিদ গত ১৫ জুন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং স্বাক্ষীদের উপস্থিতিতে ভাঙচুরের আলামত জব্দ করেন।

আছিয়া খানমের অভিযোগ, পরবর্তীতে আসামিপক্ষ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এসআই হারুন আছিয়া খানমের মামলায় কোনো আসামিকে গ্রেফতার করেননি এবং চেষ্টাও করেননি। এসআই হারুনুর রশিদ আসামিদের গ্রেফতারের কথা বলে মামলার বাদি আছিয়ার কাছ থেকে বিভিন্ন সময় ২৫ হাজার টাকা নেন।

আছিয়া খানম আরও অভিযোগ করেন, একপর্যায়ে অভিযোগপত্র দাখিল করার কথা বলে এক লাখ টাকা ঘুষ চান এসআই হারুন। টাকা না দিলে মামলার চুড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে দিবে বলে হুমকিও দেন তিনি। মামলার স্বাক্ষীদের নিয়ে মামলা সংক্রান্ত জবানবন্দি প্রদান করার এসআই হারুনেরর নিকট গেলেও তিনি আজ নয় কাল বলে সময়ক্ষেপণ করেন।

আছিয়া খানম জানান, গত ১২ আগস্ট বুধবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে পুনরায় স্বাক্ষীদের নিয়ে থানায় হাজির হই। সে সময় এসআই হারুনুর রশিদ খালি সাদা কাগজে মামলার ৭ জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষর গ্রহন করেন। স্বাক্ষর নেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলতে এসআই হারুন স্বাক্ষী ও আমার সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন।

স্বাক্ষীদের বিভিন্ন মামলা মোকাদ্দমায় জড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে এসআই হারুণ স্বাক্ষীদের খালি কাগজে স্বাক্ষরও নেন। অভিযোগকারী আছিয়া খানম বলেন, এসআই হারুন এই মামলায় আমাকে কোনো ধরনের সহযোগিতা করেননি। এখন স্বাক্ষীদের স্বাক্ষর নেওয়া খালি কাগজ দিয়ে স্বাক্ষী ও আমাকে ক্ষতি ও হয়রানি করতে পারে বলে আশঙ্কা করছি। এসআই হারুনের কাজটি নিয়ম বহির্ভূত। এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেই এসপির কাছে বৃহস্প্রতিবার দপুরে লিখিত দিয়েছি।

অভিযুক্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হারুনুর রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, আমি স্বাক্ষীর জন্য তাদের ডেকেছিলাম। সাদা কাগজে আমি মুচলেকা নিয়েছি। আর আসামি ধরার জন্য কোনো টাকা নেইনি এবং অভিযোগপত্র দাখিল করার কথা বলে আমি কোনো টাকাও চাইনি।

এই ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান জানান এই সংক্রান্ত কোন অভিযোগ হাতে পড়েনি। তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন বলে জানান।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply