গাইবান্ধায় বন্যায় আড়াই লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত, ৪ জনের মৃত্যু

|

গাইবান্ধায় বন্যায় আড়াই লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত, ৪ জনের মৃত্যু

গাইবান্ধা প্রতিনিধি:

তিন দফার দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় গাইবান্ধার ছয় উপজেলার ৪৪টি ইউনিয়নের ৩৫ হাজার ৫৫১টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির শিকার হয়েছেন এসব পরিবারের ২ লাখ ৫২ হাজার ৭৮৬ জন মানুষ। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে কেউ ঘরবাড়ি ও পুকুরের মাছ, কেউ জমির ফসল হারিয়ে হয়েছেন নিঃস্ব। এছাড়া দুর্গত এলাকায় পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে শিশুসহ চারজনের।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর বন্যার পানিতে তলিয়ে বীজতলা, আউশ ধান, পাট, ভুট্টা, বাদাম ও শাকসবজিসহ জেলার ২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল পানিতে নষ্ট হয়েছে। সবমিলে এবার বন্যায় ১২ কোটি ৭২ লাখ টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন জেলার ২৭ হাজার ছোট, মাঝারী ও প্রান্তিক কৃষক। ফলে পরবর্তী চাষাবাদ নিয়ে চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা।

এছাড়া বন্যার পানিতে ভেসে গেছে জেলার ছোট-বড় ৯৪৩টি পুকুর ও খাল-বিলের বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। সেই সাথে পানির চাপে পুকুরের পাড়ও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবু দাইয়ান জানান, আকস্মিক বন্যায় সাড়ে ৯ শতাধিক পুকুর-জলাশয়ের মাছ ভেসে গেছে। এসব পুকুর ও জলাশয়ে বিভিন্ন এলাকার ৬৭৭ জন পেশাদার মৎস্য চাষী মাছ চাষ করেন। কিন্তু বন্যায় মাছ ভেসে যাওয়ায় এসব মৎস্যজীবী স্বল্প পুঁজি হারিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। বন্যায় মাছ ভেসে যাওয়ায় জেলার মৎস্যজীবীদের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।

এদিকে, বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুর্গত এলাকার ২৪.২০ কিলোমিটার কাঁচা-পাকা সড়ক। আংশিক ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ১৩টি ছোট ব্রিজ ও কালর্ভাট।

বন্যা দুর্গত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গত পাঁচদিন ধরে তিস্তা, যমুনা, ঘাঘট ও করতোয়াসহ জেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। দীর্ঘ একমাসেরও বেশি সময় ধরে জেলার সদর, সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা, ফুলছড়ি, গোবিন্দগঞ্জ ও সাদুল্লাপুর উপজেলার আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন।

গাইবান্ধা জেলা প্রশাসনের হিসেবে, উজানের ঢল ও অবিরাম বৃষ্টিপাতে গাইবান্ধা জেলার সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা, সাদুল্লাপুর ও গোবিন্দগঞ্জসহ আরও অনেক এলাকা বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে। তিনি আরও জানান, বন্যার্তদের মাঝে ৫১০ মেট্রিকটন চাল, ৩০ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও ৫ হাজার ৬৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া বন্যা কবলিত এলাকায় সরকারিসহ বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি বন্যা কবলিত মানুষের চিকিৎসা সেবায় ৮০টি মেডিকেল টিম কাজ করছে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply