ঢাকার চারদিকে বন্যার পানি বাড়ছে

|

রাজধানীর চারদিকে বন্যার পানি থইথই করছে। দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চল থেকে নেমে আসা পানি জমা হচ্ছে মধ্যাঞ্চলে। বঙ্গোপসাগরে এ পানি নামছে খুব ধীরগতিতে। এ পানিতে রাজধানীর নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

এক সপ্তাহ ধরে ঢাকা শহরের চারপাশের নদীর সমতল উঁচু হচ্ছে। এতে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। অন্তত আগামী ২৪ ঘণ্টা পরিস্থিতি একইভাবে অবনতিশীল থাকতে পারে।

চরের বন্যার্ত মানুষ যারা বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তাদের কেউ কেউ ঘরে ফিরছে। ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি মেরামতের কাজ শুরু করেছে তারা। বন্যার পানি সম্পূর্ণ নেমে যাওয়ার পরও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে বেশ কিছুদিন সময় লাগবে।

এদিকে ভারতের পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন রাজ্য ও দেশের ভেতরে পরিস্থিতি হ্রাস-বৃদ্ধির মধ্যে আছে। এ কারণে বন্যা পরিস্থিতিও একইভাবে কোনো দিন উন্নতি শুরু করে, আবার কোনো দিন অবনতি হয়। ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানির সমতল হ্রাস পেয়েছে।

একইভাবে কমছে গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি। এ উভয় অববাহিকায় আরও ৪৮ ঘণ্টা পানি নেমে যাওয়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে।

কিন্তু ব্রহ্মপুত্র-যমুনা বাদে এ অববাহিকার অন্য নদীগুলোয় আগামী ৪৮ ঘণ্টা পানির সমতল বাড়তে পারে। তবে পানির সমতল উঁচু হচ্ছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার সব নদ-নদীতে।

বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. একেএম সাইফুল ইসলাম বলেন, ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মেঘালয়, আসাম, অরুণাচলসহ হিমালয় পর্বতমালার পাদদেশীয় অঞ্চলে দু’দিন বৃষ্টিপাত তেমন একটা নেই।

তবে ১ আগস্টের পর ফের বৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে মেঘালয়ের দিকে এরপর প্রায় ৫০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস আছে।

এতে মনে হচ্ছে, আপার মেঘনা অববাহিকা ৪-৫ আগস্টের পর ফের বন্যাকবলিত হতে পারে। রাজধানীর নিম্নাঞ্চল বিশেষ করে পূর্বাঞ্চল আরও ৮-৯ দিন বন্যাকবলিত থাকতে পারে।

জানা গেছে, রাজধানীর বালু নদী ডেমরা পয়েন্টে বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। তুরাগ মিরপুর পয়েন্টে ৩২ সেন্টিমিটার এবং টঙ্গী খাল টঙ্গীতে ২৪ সেন্টিমিটার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বেড়েছে বুড়িগঙ্গায়। এ কারণে ঢাকার চারপাশ বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

কেরানীগঞ্জ উপজেলার তারানপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মাসুম আহমেদ বলেন, তুরাগ নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে কেরানীগঞ্জ ও সাভারের বিস্তীর্ণ এলাকা পানির নিচে চলে গেছে। গাবতলী পেরিয়ে আমিনবাজার ঢুকলে রাস্তার দুই পাশে দেখা যায় থইথই পানি।

তিনি জানান, বন্যার পানিতে ওই এলাকার উত্তর বাহেরচর, বটতলী, বরইকান্দিসহ বেশকিছু গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তুরাগের পানি বৃদ্ধি ছাড়াও প্লাবনের আরেকটি কারণ হচ্ছে স্থানীয় সোলাই মার্কেট এলাকায় খালের ওপর স্থানীয়রা অবৈধভাবে বাঁধ দিয়েছে।

পানি প্রবাহিত হতে পারছে না। ডেমরা এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ সেলিম উল্লাহ বলেন, এক সপ্তাহ ধরে বালু নদীর পানি এতটাই বেড়েছে যে, নিুস্তরের ঘরবাড়ি ডুবিয়ে দিয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর (ডিডিএম) বলছে, এ মুহূর্তে দেশের ৩১টি জেলা বন্যা উপদ্রুত। জেলাগুলো হচ্ছে- লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারী, রংপুর, সুনামগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, জামালপুর, সিলেট, টাঙ্গাইল, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, নেত্রকোনা, নওগাঁ, শরীয়তপুর, ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, নাটোর, হবিগঞ্জ, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, মৌলভীবাজার ও গাজীপুর।

সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (এফএফডব্লিউসি) বলছে, উল্লিখিত জেলাগুলোর মধ্যে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নওগাঁ, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, চাঁদপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর ও ঢাকা জেলার বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হতে পারে। স্থিতিশীল থাকবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নারায়ণগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি।

এফএফডব্লিউসির তথ্য অনুযায়ী, এ মুহূর্তে ১৮টি নদীর পানি ২৮টি স্থানে বিপৎসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। সারাদেশে ১০১ স্থানে পানির প্রবাহ পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, এগুলোর মধ্যে ৪১ স্থানে ২৪ ঘণ্টায় পানি সমতল বেড়েছে আর কমেছে ৫৭ স্থানে। ৩টি স্থানে অপরিবর্তিত ছিল। বিপদসীমার উপরে থাকা নদীগুলো হচ্ছে- পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, ঘাঘট, গুড়, আত্রাই, ধলেশ্বরী, বালু, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ, টঙ্গী খাল, কালিগঙ্গা, বানশি, আড়িয়ালখাঁ, পুরাতন সুরমা ও তিতাস


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply