প্রতারণা মাধ্যমে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে ব্যাংক কর্মকর্তাসহ তিনজন গ্রেফতার

|

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি:

প্রতারণা মাধ্যমে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে ব্যাংক কর্মকর্তাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন এবি ব্যাংকের মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার পারিল শাখার শিক্ষানবিশ কর্মকর্তা ফয়সাল আলম সিহাব, তার দুই বন্ধু মুত্তাকিন আহমেদ সিয়াম ও সবুজ।

জানা গেছে, অব্যাহতি নেয়ার বিষয়টি গোপন রেখে শাখা থেকে ১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা সরিয়ে ফেলেন এবি ব্যাংকের মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার পারিল শাখার শিক্ষানবিশ কর্মকর্তা ফয়সাল আলম সিহাব। দুই বন্ধুর সহযোগিতায় টাকা সরিয়ে কেনেন দুইটি নতুন গাড়ি।

কানাডায় যাবেন বলে দায়িত্ব পালনে অনীহা ছিলো শিক্ষানবিশ কর্মকর্তা ফয়সাল আলম সিহাবের। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এ কারণে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি সিহাবের। সিআইডির জালে ধরা পড়েছেন ফয়সাল। গ্রেফতার হয়েছেন ফয়সালের দুই বন্ধু মুত্তাকিন আহমেদ সিয়াম এবং সবুজ। গ্রেফতারের পর আদালতে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।

সোমবার দুপুরে মানিকগঞ্জ জেলা সিআইডি কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এই বিষয়টি সাংবাদিকের জানানো হয়। সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মীর্জা আব্দুল্লাহেল বাকী জানান, কীভাবে সিহাব ব্যাংক থেকে টাকা সরিয়েছেন এবং কিভাবে এই চক্রকে ধরা হয়েছে।

ওই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ফয়সাল আলম সিহাব (২৪) শিক্ষানবিশ অফিসার হিসেবে এবি ব্যাংকের মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার পারিল শাখায় কর্মরত ছিলেন। সিহাব যেহেতু কানাডায় পাড়ি জমাবেন তাই ব্যাংকের দায়িত্ব পালনে অনীহা ছিলো। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সিহাবকে গত ৫ জুলাই তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেন। কিন্তু বিষয়টি গোপন থাকায় সিহাব ৭ জুলাই তার কর্মস্থলে যান। সেখানে সহকর্মীর পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে এবি ব্যাংকের উত্তরা শাখার একটি ভুয়া একাউন্টে এক কোটি ৩০ লাখ টাকা জমা করেন তিনি। সাথে সাথে এক সহযোগীর মাধ্যমে সেখান থেকে ৫০ লাখ টাকা উত্তোলন এবং ৭৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা আরটিজিএস এর মাধ্যমে গাড়ি বিক্রেতা এবি সিদ্দীকির একাউন্টে দিয়ে দুইটি নতুন গাড়ি ক্রয় করেন ফয়সাল।

এদিকে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানতে পারেন পারিল শাখায় কোনো টাকা জমা না হলেও ওই শাখা থেকে ১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা উত্তরা শাখায় জমা হয়েছে বেলা ১১টার দিকে। তাৎক্ষণিক উত্তরা শাখায় যোগাযোগ করে আরও জানতে পারেন ১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকার মধ্যে ৫০ লক্ষ টাকা নগদ উত্তোলন হয়েছে বেলা ১২টার দিকে ও ৭৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা চেকের মাধ্যমে বেলা ১টার দিকে মিউচুয়াল ব্যাংকের এবি সিদ্দীক নামে একটি হিসাবে জমা হয়েছে।

এবি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ মিউচুয়াল ব্যাংকে জমা টাকা গ্রাহকে প্রদান না করার নির্দেশ দেন। প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি টের পেয়ে ১০ জুলাই সিংগাইর থানায় ফয়সালসহ চারজনকে আসামি করে মামলা করেন এবি ব্যাংকের পারিল শাখার ব্যবস্থাপক আরিফ আহমেদ।

মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পান সিআইডির পরিদর্শক আওরাঙ্গজেব। তদন্তকারী কর্মকর্তা তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ক্রয়কৃত নতুন গাড়ি দুইটি ঢাকার ঝিগাতলা থেকে ১৮ জুলাই উদ্ধার করেন। আর এই কাজে সহায়তার জন্য একই দিনে গ্রেফতার করা হয় মুত্তাকিন আহমেদ সিয়াম নামে ফয়সালের এক বন্ধুকে। সিয়াম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

এরই ধারাবাহিকতায় ২৬ জুলাই রাতে ঢাকার নিজ বাড়ি থেকে ফয়সাল আলম সিহাবকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় ৩৫ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। পরে চক্রের আরেক সদস্য সবুজকে গ্রেফতার করা হয়। বাকি টাকাগুলো উদ্ধার এবং এই প্রতারণার সাথে জড়িত সকল ব্যক্তিকে গ্রেফতারে অভিযান চলমান রয়েছে।

তদন্তকারী কর্মকর্তা আওরাঙ্গজেব জানান, এবি ব্যাংকে ভুয়া হিসাব খোলা ও রিকুইজেশন ছাড়া ৫০ লক্ষ টাকা উত্তোলন করার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। মামলার স্বার্থে এবি ব্যাংক উত্তরা শাখা থেকে যিনি ৫০ লক্ষ টাকা উত্তোলন করেছেন তার নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না। তাকে গ্রেফতারের সব ধরনের চেষ্টা চলছে। সেই সাথে উদ্ধার হওয়া গাড়ি দুটি আদালতের মাধ্যমে গাড়ি বিক্রেতা এবি সিদ্দিক তার নিজ জিম্মায় নিয়ে গেছেন।

ইউএইস/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply