ভালোবাসা না রিলেশন?

|

প্রিয়তমা,
সোনালী সন্ধ্যায় আকাঁবাকা পথ ধরে তুমি এসেছিলে। আমি ছিলাম চলন্ত পথিক, থমকে দাঁড়িয়ে ছিলাম, বিজলির মতো চমকে উঠেছিলো আমার হৃদয়।

এক সময়ের আবেগঘন এমন প্রেম পত্র এখন কেবলই ইতিহাস। এরকম চিঠির মধ্য দিয়ে নরনারীর মধ্যে গড়ে উঠতো প্রেম-ভালোবাসার অটুট বন্ধন। এমন সময় অনেক আগেই পার হয়ে গেছে। ডাক হরকরার সাথে বিলীন হয়েছে সেই সব দিন। কারো সাথে কথা বলা, কাউকে চিঠি দেয়া আবার সেই চিঠির উত্তরের অপেক্ষায় থাকা। নিজে চিঠি লিখতে না পারলে সাহায্য নেয়া অভিজ্ঞ বন্ধুর। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করা, কখন সে আসবে। চৈত্রের দুপুড়ে গাছের পাশে লুকিয়ে থাকা, কখন প্রিয়তমা একটু বারান্দায় এসে দাঁড়াবে। এক নজর দেখার জন্য তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা। পছন্দের মানুষটির মুখের, একটু মিষ্টি হাসির তীর কখন বিদ্ধ হবে হদয়ে । এসবই সোনালী অতীত। আর এখন, প্রেম বা ভালোবাসা নেই। এখন হয় রিলেশন। আগে প্রেমে পড়ে খেতো ‘ছ্যাঁকা’ এখন রিলেশনে হয় ‘ব্রেকাপ’। অর্থাৎ আবার নতুন রিলেশনের প্রস্তুতি।

আবেগ এখন আরো অনেক যান্ত্রিক। সম্পর্ক গড়া থেকে, খোঁজখবর রাখা সবই এখন ডিজিটাল পদ্ধতি। আগে নিজের প্রেমকে সমাজ আর পরিবারের কাছে গোপন রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হতো। আর এখন স্ট্যাটাস দিয়ে ঘটা করে জানানো হয় রিলেশনের খবর। ফেসবুকে কারো ছবি একটু ভালো লাগছে, দেখি একটু ট্রাই করে হয় কিনা। ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে যাত্রা শুরু। এসব বন্ধনে আগের মতো যদি আবেগ থাকতো তাহলে কী এমন ক্ষতি হতো? নাহয় বিরহের জ্বালায় নিজেকে জ্বালানো যেতো।

প্রযুক্তির এই যুগে মানুষের চিন্তাধারায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। সে আমাকে পাত্তা দিচ্ছে না, দেখি নতুন কাউকে পাওয়া কিনা। গুগলের মতো সার্চ ইঞ্জিনতো আছেই। বর্তমান সময় কাছে যাওয়ার যেমন অনেক সুযোগ তৈরি করেছে, তেমনি ভালোবাসার ক্ষেত্রে অনেক বাধারও সৃষ্টি করেছে। তবে সুযোগ তৈরি করেছে রিলেশন তৈরি করার। ভাঙ্গা গড়ার নির্মম খেলার। ডিজিটাল যুগে এসে সম্পর্কের স্থায়িত্ব কমবে এটাই স্বাভাবিক। কারণ মানুষের বরাবরের আকর্ষণ নতুনত্বের প্রতি। প্রেম বা ভালোবাসায় ‘ছ্যাঁকা’ খাওয়ার কষ্ট কম নয়, রিলেশনের এই যুগে ব্রেকআপের জ্বালা ফাস্টফুটে বসে ফ্রেস মুরগীর রানে কামড় বসিয়ে মেটাতে পারলে ক্ষতি কী? তবে নতুনের মধ্যে পুরনো অনেক ফ্লেভার প্রকৃতিই রেখে দেয়। যেমন এখনো মেয়েরা কবি, সাহত্যিক, বেকার আর একটু মাস্তান টাইপের ছেলেদের প্রেমে পরে বেশি। আর নম্র-ভদ্র, খুব ভালো ছেলেদের প্রিয় বন্ধুর তালিকায় রাখতেই পছন্দ করে। ভালোবাসা আর রিলেশানের মধ্যে দ্বন্দ্ব আর থামবার নয়।

হোসাইন শাহীদ: সাংবাদিক


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply