সত্য প্রকাশ করায় ড. ফাউসিকে টার্গেট করেছে ট্রাম্প প্রশাসন?

|

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে ট্রাম্প প্রশাসন যে আসলে ব্যর্থ তা পরোক্ষভাবে সামনে তুলে ধরেছেন সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. অ্যান্থনি ফাউসি। আর এই সত্য প্রকাশ করায় ফাউসিকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।

গণমাধ্যম বিবিসি সরাসরি অভিযোগ করে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র তথা বিশ্বের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এবং হোয়াইট হাউসের করোনা টাস্কফোর্সের অন্যতম সদস্য ডা. অ্যান্থনি ফাউসিকে ফাঁসাতে মরিয়া ট্রাম্প প্রশাসন। ওই প্রতিবেদনে বিবিসি বলছে, দেশজুড়ে করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ নিয়ে কাজ করা নয় বরং হোয়াইট হাউস এখন অ্যান্থনি ফাউসির মতো গোটা আমেরিকায় সবচেয়ে জনপ্রিয় একজন ব্যক্তিত্বের সুনাম নষ্ট করার মতো গর্হিত কাজে ব্যস্ত। ডা. ফাউসিকে নিয়ে হোয়াইট হাউসে সমালোচনা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।

প্রতিবেদনে বিবিসি আরও জানায়, হোয়াইট হাউসে অ্যান্থনি ফাউসির সমালোচনা বৃদ্ধির মধ্যেই রোববার ট্রাম্প প্রশাসন এক তালিকা প্রকাশ করেছে। তাতে অতীতে ‘বিভ্রান্তিকর’ মন্তব্য করেছেন সেগুলোর বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়েছে। ওই তালিকায় ডা. অ্যান্থনি ফাউসির মন্তব্যও তুলে দিয়েছে হোয়াইট হাউস। এর আগে, যুক্তরাষ্ট্রে করোনা প্রকোপ বৃদ্ধির কারণ জানিয়ে তোপের মুখে পড়েন অ্যান্থনি ফাউসি

দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি), চিকিৎসক, গণমাধ্যম এবং বিরোধী দল ডেমোক্র্যাট মিথ্যা বলছে বলে দাবি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের। অথচ যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের শীর্ষ আক্রান্ত দেশ। সংক্রমণ ও মৃত্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের ধারে কাছে নেই কোনো দেশ। ট্রাম্প এগুলো স্বীকার করেন না কখনোই।

বিবিসির ওই প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প করোনা নিয়ে এখন পর্যন্ত অসংখ্যবার অসংলগ্ন কথাবার্তা বলেছেন। এ কারণেই প্রেসিডেন্টের এসব মন্তব্য নিয়ে অ্যান্থনি ফাউসির সঙ্গে মতপার্থক্য দেখা গেছে অনেকবার। ট্রাম্পের দাবি, মহামারির অবস্থা ভালোর দিকে অথচ তার মন্তব্যের সময় দেশটিতে রেকর্ড সর্বোচ্চ শনাক্তের ঘটনা ঘটছে।

করোনা সংকটের শুরু থেকেই ফাউসি হয়ে ওঠেন যুক্তরাষ্ট্রের সব মানুষের একটা ভরসার জায়গা। যুক্তরাষ্ট্র যেহেতু গবেষণা ক্ষেত্রে বিশেষ আধিপত্য দেখায়, বিশ্বজুড়েই অ্যান্থনি ফাউসির ওপর এক ধরনের ভরসা তৈরি হয়েছে। তিনি এর আগে থেকেই মার্কিনিদের চোখে একজন ইতিবাচক চরিত্র হিসেবেই পরিচিত।

কিন্তু গোপন তথ্য বলছে, ফাউসি অনেক সময় ভুল কথা বলেছেন। সেগুলো হলো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যেসব কথা বলেছেন বিজ্ঞানকে ভিত্তি হিসেবে ধরে ফাউসি যেসব পাল্টা যুক্তি তুলে ধরেছেন সবসময়েই। আর এ জন্যই হোয়াইট হাউসের অনেকেই তার ওপর খুশি নয়।

এর আগে ট্রাম্প যে দাবি করেন, বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে ভালোভাবে যুক্তরাষ্ট্র করোনা প্রতিরোধ করছে। তবে এর বিরোধিতা করেন ফাউসি। এর পেছনে যথেষ্ট কারণ রয়েছে। অনেক দেশ ভাইরাসটির সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনলেও ট্রাম্প প্রশাসনের ব্যর্থতায় ছয় মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্রে আরও বেশি মাত্রায় তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে ভাইরাসটি।

ফাউসি প্রথম আলোচনায় আসেন এইডসের প্রাদূর্ভাব থেকে। ১৯৮১ সালে পাঁচজন তরুণের নিউমোনিয়া ধরা পড়ে। তখনও বোঝা যায়নি যে সেটা এইডস। পরের বছর ফাউসি একটা গবেষণাপত্র লিখে এইডস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার মতো যথেষ্ট প্রমাণও পাওয়া যাচ্ছে- প্রথম তিনি বিশ্ববাসীকে জানান।

তবে এইডসের এখনও কোনো কার্যকর সমাধান না পাওয়া গেলেও যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে এসেছে সেটা। এর পেছনে ফাউসির অবদান অনেক। এভাবেই তিনি হয়ে উঠেছেন এসব নতুন নতুন রোগের প্রধান মুখপাত্র। নতুন কোন রোগ দেখা গেলেই সবার আগে ডাক পড়ে অ্যান্থনি ফাউসিরই।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply