শ্রদ্ধা আর হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসায় চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন নুরুল ইসলাম

|

গভীর শোক, বিনম্র শ্রদ্ধা আর হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসায় চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন বিশিষ্ট শিল্পপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা, যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম। মঙ্গলবার দুপুরে এ কর্মবীরকে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়।

এরআগে, মঙ্গলবার বাদ জোহর যমুনা ফিউচার পার্ক প্রাঙ্গণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে রণাঙ্গণের এই যোদ্ধাকে দেয়া হয় গার্ড অব অনার। এসময় সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

এর আগে, সকাল ১১ টার দিকে নুরুল ইসলামের মরদেহ যমুনা ফিউচার পার্কে আনা হয়। এসময় একমাত্র অভিভাবককে শেষ বারের মতো দেখতে এসে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। কেউ যেন বিশ্বাসই করতে পারছেন না আজীবন উন্নয়নের স্বপ্নদ্রষ্টা নুরুল ইসলাম আর নেই।

বেলা ১২ টার দিকে নিজের কর্মস্থল যমুনা ফিউচার পার্ক প্রাঙ্গনে প্রয়াত শিল্পপতির গোসল সম্পন্ন হয়। আল মারকাজুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে গোসলে অংশ নেন পরিবারের সদসরাও। পরিবারের সদস্যরা শিল্পপতি নুরুল ইসলামের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।

গত ১৪ জুন থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম। ১০ জনের মেডিকেল বোর্ডের অধীনে চলছিলো তার চিকিৎসা। সোমবার বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে সব চেষ্টা ব্যর্থ করে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন নুরুল ইসলাম। সমাপ্তি ঘটে বাংলাদেশের শিল্প জগতের এক বর্ণিল অধ্যায়ের।

জনাব নুরুল ইসলাম ১৯৪৬ সালের ৩ মে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জে। ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনীর নাগপাশ থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। স্বাধীন বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার মানসে ১৯৭৪ সালে যমুনা গ্রুপের প্রতিষ্ঠা করেন। মেধা, দক্ষতা, পরিশ্রম ও সাহসিকতার মাধ্যমে একে একে শিল্প এবং সেবা খাতে গড়ে তোলেন ৪১টি প্রতিষ্ঠান।

তার স্ত্রী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম একজন সংসদ সদস্য। দেশের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা সালমা ইসলাম জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য। এ দম্পতির সংসারে আছে ১ পুত্র ও ৩ কন্যা। ছেলে শামীম ইসলাম যমুনা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, তিন মেয়ে- রোজালিন ইসলাম, মনিকা ইসলাম এবং সোনিয়া ইসলাম যমুনা গ্রুপের পরিচালক।

নিজ যোগ্যতায় অল্পদিনেই নুরুল ইসলাম বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান শিল্প উদ্যোক্তা হয়ে ওঠেন। তার প্রতিষ্ঠিত যমুনা গ্রুপ দেশের অন্যতম প্রধান ব্যবসায়ী গ্রুপ। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও মানুষের কর্মসংস্থান তৈরিতে নুরুল ইসলাম একজন আধুনিক চিন্তার সাহসী উদ্যোক্তা। বর্তমানে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ কাজ করছেন যমুনা গ্রুপে। এশিয়ার সবচেয়ে বড় শপিংমল যমুনা ফিউচার পার্ক, যমুনা নির্মাণাধীন মেরিয়টস হোটেলসহ শিল্প ও সেবা খাতে শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছে গ্রুপটি। ইলেকট্রনিকস, বস্ত্র, ওভেন গার্মেন্টস, রাসায়নিক, চামড়া, মোটরসাইকেল, বেভারেজ টয়লেট্রিজ, নির্মাণ এবং আবাসন খাতে ব্যবসায় শীর্ষস্থানে রয়েছে এই গ্রুপ।

গণমানুষের সুবিধা, অসুবিধা, বঞ্চনা ও অধিকারের বিষয় তুলে ধরতে তিনি দৈনিক যুগান্তর পত্রিকা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি এটি প্রথম প্রকাশিত হয়। সত্যের সন্ধানে নির্ভীক স্লোগান নিয়ে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত স্বাধীন সাংবাদিকতার চর্চা করে এসেছে পত্রিকাটি। গণমাধ্যমে আরও বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখার মানসে তিনি চালু করেন যমুনা টেলিভিশন। তার অনুপ্রেরণায় ও দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার কারণে অল্পদিনেই দেশের শীর্ষ টেলিভিশন চ্যানেল হিসেবে জায়গা করে নেয় যমুনা টেলিভিশন। জনাব নুরুল ইসলাম মৃত্যুতে একজন নির্ভীক ও দায়িত্বশীল অভিভাবক হারালো প্রতিষ্ঠান দুটির সহস্রাধিক কর্মী ও যমুনা গ্রুপের অর্ধলক্ষাধিক কর্মী।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply