কুড়িগ্রামে খাদ্য ও চিকিৎসা সংকটে গর্ভবতী মা ও শিশু

|

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ

ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমারসহ ১৬টি নদ-নদী বেষ্টিত জেলা কুড়িগ্রাম। এসব নদীর চরাঞ্চলে পাঁচ-ছয় লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। বিভিন্ন সময় বন্যা, খরা, শীতসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে এই জনপদের মানুষগুলোকে। কিন্তু এবার বন্যা আর করোনার দুর্যোগ এক সাথে মোকাবেলা করতে হচ্ছে। এতে ভোগান্তি বেড়েছে কয়েকগুণ।

সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে রয়েছে গর্ভবতী মা এবং নবজাতকরা। পুষ্টিকর খাবার সংকটের পাশাপাশি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতেও পড়েছেন তারা।

তবে এসব ঝুঁকি মোকাবেলায় স্বাস্থ্য বিভাগের ৮৫টি মেডিকেল টিম মাঠে কাজ করছে বলে জানান জেলার সিভিল সার্জন ডা: হাবিবুর রহমান। কিন্তু করোনার ভয় এবং বন্যার কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা কিছুটা বাধাগ্রস্থ হওয়ায় চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হবার কথা স্বীকার করেন তিনি।

উলিপুর উপজেলায় ধরলা নদী এবং ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায় হাতিয়া ইউনিয়ন। প্রতিবছরের বন্যায় মারাত্নকভাবে ক্ষতির মুখে পড়ে এই ইউনিয়নটি। এবারের বন্যাতেও ব্যতিক্রম ঘটেনি। গত ২৬ জুন এই ইউনিয়নের চর বাগুয়া গ্রামের ইয়াসমিন বেগম- আবু সাঈদ দম্পতির ঘর আলো করে জমজ ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। এতে সিজার করাতে জমানো টাকা শেষ হয়ে যায়। বন্যার কারণে কোন কাজ না থাকায় এখন পরিবারটির দুর্দিন কাটছে। দেখা দিয়েছে খাবারের অভাব; তার সাথে বাড়িত চাপ হিসেবে যোগ হয়েছে ওষুধ কেনা। এতে করে পুষ্টিকর খাবারসহ চিকিৎসার অভাবে পড়েছে মা ও নবজাতক শিশু দুটি।

একই অবস্থা বিরাজ করছে গাবুরজান গুচ্ছগ্রামের আমিন- রাসেদা দম্পতির। তাদের ঘরেও দু’মাসের জমজ কন্যা সন্তান। করোনার কারণে তেমন কাজকর্ম নেই। এরমধ্যে এক সপ্তাহের বন্যায় পানিবন্দি থাকায় পরিবারের খাবার জোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন আমিন। এদিকে, মা যেখানে খাদ্য সংকটে পড়েছেন সেখানে শিশুদের দুধ কিংবা পুষ্টিকর খাবারের চাহিদা পূরণ করা যেন আমিনের কাছে স্বপ্নের মতো।

এই বন্যা ও করোনায় গর্ভবতী মা ও নবজাতক সন্তান নিয়ে চরম দুর্দিন অতিবাহিত করছে চরাঞ্চলের শত পরিবার। এমন দুর্যোগে শিশুদের খাবার বলতে চালের গুড়িই একমাত্র সম্বল।

হাতিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসেন দুর্ভোগের বিষয়টি অবগত আছেন। এজন্য সরকারি ত্রাণ সহায়তার পাশাপাশি শিশু খাদ্য বিতরণের উপর জোর দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। এছাড়াও সুষ্ঠু চিকিৎসা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য বিভাগকে আরও কার্যকরী পদক্ষেপ নেবার দাবি তার।

গর্ভবতী মা ও নবজাতক শিশুর দুর্ভোগের কথা জানতে পারলে দ্রুতই সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন কুড়িগ্রাম-৩ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক এমএ মতিন।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply