বাঁচাতে পারলেন না রোগীকে, মরদেহের পাশে বসে পড়লেন ডাক্তার

|

নোয়াখালী প্রতিনিধি:

রোগীকে বাঁচানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও হারতে হলো ডাক্তার নিজাম উদ্দিনকে। হতাশায় হাত-পা ছড়িয়ে বসে পড়লেন মরদেহের পাশে। হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনের এই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন ভাইরাল।

সূত্র জানায়, মঙ্গলবার সারাদিন করোনা আক্রান্ত রোগীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ওষুধ সরবরাহ করেন ডা. নিজাম। সেই সাথে চলে নতুন পজেটিভ রোগীদের বাড়ি লক-ডাউনের কাজও। এরই মধ্যে এক বাড়িতে রবিউল নামে একজনের শারীরিক অবস্থা খারাপ দেখে লোক পাঠিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে আসেন তিনি। অক্সিজেন দেয়ার পর অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও অক্সিজেন সরিয়ে নিলে আবারও শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। পরে রবিউলকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন ডা. নিজাম।

ক্লান্ত শরীর নিয়ে রাত ১১টায় ফেরেন হাসপাতালে। সেখানেই থাকার ব্যবস্থা। পিপিই খুলে বিশ্রাম নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ডা. নিজাম। এরই মধ্যে খবর আসে, নিচে একজন রোগী এসেছেন। তার অবস্থা ভালো নয়। রয়েছে করোনা উপসর্গ। আবার পিপিই পরে নিচে নেমে গেলেন তিনি। দেখলেন হাসপাতালের সামনে রাস্তায় এক কিশোর তার নিথর বাবাকে কোলে নিয়ে বসে আছে। কাঁদতে কাঁদতে সাহায্য চাইছে সবার কাছে। অবস্থা এতোই খারাপ হাসপাতালের ভেতরে নেয়ারও অপেক্ষা করেননি ডা. নিজাম।

দ্রুত গিয়ে রোগীর নাড়ি চেক করলেন। পালস নেই। রোগীকে মাটিতে শুইয়ে দিয়ে সিপিআর দেয়া শুরু করলেন তিনি। একটা সময় পরে গিয়ে পালস পেলেন। তখনও সিপিআর চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। সারাদিনের পরিশ্রমের কারণে শরীর সায় দেয় না। ডা. নিজাম ক্লান্ত হয়ে থেমে যেতেই কিশোর ছেলেটা দায়িত্ব নেয়। ততক্ষণে পাশে থেকে কীভাবে সিপিআর দিতে হয় শিখে গেছে ছেলেটি। বাবাকে বাঁচানোর চেষ্টায় ক্রমাগত সিপিআর দিয়ে চলে সে। পাশে বসে রোগীর দিকে নজর রাখছিলেন ডা. নিজাম। হঠাৎ করেই রোগীর চোখ স্থির হয়ে গেল। এটা দেখেই দ্রুত পালস চেক করলেন তিনি। পালস নেই। তার চোখের সামনেই রোগী চলে গেলেন না ফেরার দেশে। হতাশায় মুষড়ে পড়লেন ডা. নিজাম। হাত-পা ছড়িয়ে বসে পড়লেন রোগীর মরদেহের পাশে।

মারা যাওয়া ওই রোগীর নাম পবন চন্দ্র দাস (৫০)। পরিবার থেকে জানানো হয়, বেশ কিছুদিন ধরে তিনি কাশি, জ্বর, গলা ব্যথায় ভুগছিলেন তিনি। মারা যাওয়ার পরদিন প্রশাসন তার বাড়ি লকডাউন করে দেয়।

ডা. নিজাম উদ্দিন বলেন, রোগীকে যখন আনা হয় তখনই ওনার খুব খারাপ অবস্থা ছিলো। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলাম।

উল্লেখ্য, হাতিয়া উপজেলায় করোনায় আক্রান্ত রোগী রয়েছেন ১৫ জন। এদের মধ্যে সাতজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply