নাটোরে ইমামের ফতোয়ার শিকার হয়ে একঘরে এক পরিবার

|

নাটোর প্রতিনিধি:

নাটোরের গুরুদাসপুরে মধ্যযুগীয় কায়দায় সামাজিক ফতোয়া দিয়ে একটি অসহায় পরিবারকে একঘরে করে রাখার অভিযোগ উঠেছে মসজিদের ইমাম, গ্রাম প্রধান ও জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে।

তিন দিন ধরে অমানবিক জীবন যাপন করার পর পুলিশ ওই পরিবারের সদস্যদের উদ্ধার করে। পরে এ অমানবিক ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সোমবার দুপুরে ইউপি সদস্যসহ ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, গত এক সপ্তাহ আগে ভাইয়ের বাড়ি থেকে পায়ে হেটে রানীনগর মোল্লাপাড়ার একটি পুকুরপাড় দিয়ে মেয়ে জামাইকে সাথে নিয়ে বাড়িতে ফিরছিলেন শাশুড়ি। পথে একই গ্রামের শুকচাঁদ আলী, কামরুল ইসলাম, আতাহার হোসেন ও আলামিন নামে চার যুবক তাদের পথরোধ করে এবং ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে।

সেই চাঁদার টাকা না দিলে তাদের বিরুদ্ধে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ এনে জামাই-শাশুড়িকে বেঁধে রেখে শারীরিক নির্যাতন করে। এরপর গ্রাম্য সালিশে জামাই মেয়ের তালাক ও তাদের একঘরে করে দেয়া হয়। ভুক্তভোগী শাশুড়ির অভিযোগ, তার এক টুকরো জমি হাতিয়ে নিতে এলাকার মানুষজন তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করেছেন। তাদের অন্যায়ভাবে বিচার সালিশ করে একঘরে করে রেখেছে। তিনি এর বিচার দাবি করেন।

ভুক্তভোগী জামাই জানান, গ্রাম্য মাতব্বরদের হুমকি ও ভয়ভীতির কারণে সামাজিক বিচারে প্রতিবাদ করার সাহস পাননি তিনি। সামাজিক ফতোয়া দিয়ে তাদের ওপর অবিচার করা হয়েছে। ইমাম সাহেব ফতোয়া দিয়ে তার স্ত্রীকে আলাদা করে দিয়েছে। এখন বাড়ির বাহিরেও যেতে দিচ্ছে না। কার কাছে বিচার চাইবেন তা বুঝতেও পারছেন না।

ভুক্তভোগীর মেয়ে জানান, স্বামী সন্তান নিয়ে তাদের সুখের সংসার। কিন্তু তার মাকে ঘিরে মিথ্যা অভিযোগ এনে তার সংসার তছনছ করে দিচ্ছে গ্রামের কিছু মাতব্বর। তাদের চাহিদা মত চাঁদা দিলে আর এই বিচার হত না। ফতোয়ার কারণে হাটবাজারে কিংবা বাড়ির বাইরে পর্যন্ত বের হতে পারছে না তাঁরা। এই অন্যায় ফতোয়াবাজির সাথে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন তিনি।

চাঁদা দাবী করা দলের এক সদস্য বলেন, তাদের কোন ধরনের জোর করা হয়নি। ইসলামিক শরিয়ত মোতাবেক হুজুরের নির্দেশে তাদের তালাক করে দেওয়া হয়েছে।

ফতোয়া জারী করা রানীনগর মোল্লাপাড়া মসজিদের ইমাম বলেন, ইসলামী দৃষ্টিতে জামাই-শাশুড়ির মধ্যে অনৈতিক সম্পর্ক থাকলে স্ত্রী সম্পর্ক থাকে না। ইসলামের আইন হিসেবে তাদের বিরুদ্ধে ফতোয়া জারী করা হয়েছে। তাদের অনৈতিক সম্পর্ক নিজ চোখে দেখেছেন কিনা এমন প্রশ্নের কোন উল্টর দেননি তিনি।

গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোজাহারুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় ইতিমধ্যে ফতোয়াবাজ মাতবরদের মধ্যে ইউপি সদস্য মোসাব্বের আলীসহ ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে। ফতোয়াবাজদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply