‘মাসুদ রানা’র স্রষ্টা কাজী আনোয়ার হোসেন, বেশিরভাগ বইয়ের লেখক শেখ আবদুল হাকিম

|

'মাসুদ রানা'র স্রষ্টা কাজী আনোয়ার হোসেন, বেশিরভাগ বইয়ের লেখক শেখ আবদুল হাকিম

বামে কাজী আনোয়ার হোসেন, ডানে শেখ আবদুল হাকিম। ছবি- সংগৃহীত।

বাংলাদেশের বই পড়ুয়াদের কাছে তুমুল জনপ্রিয় অ্যাডভেঞ্চার সিরিজ ‘মাসুদ রানা’। বিখ্যাত সিরিজটির স্রষ্টা জনপ্রিয় প্রকাশনা সংস্থা ‘সেবা প্রকাশনী’র স্বত্বাধিকারী কাজী আনোয়ার হোসেন। মাসুদ রানার লেখক হিসেবেও সিরিজের প্রতিটি বইয়ে তার নামই যেতো। কিন্তু লেখক শেখ আবদুল হাকিম নিজেকে এই সিরিজের অধিকাংশ বইয়ের লেখক হিসেবে দাবি করেন। পাঠক মহলে বিষয়টি নিয়ে আলোড়ন তৈরি হলেও এটি বহুদিন অমীমাংসিত ছিল। এরপর দীর্ঘ প্রায় এক বছরের আইনি লড়াই শেষে রোববার বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস এই মামলার রায় দিয়েছে। তাতে, শেখ আবদুল হাকিমের পক্ষে রায় এলো। এর ফলে, মাসুদ রানা সিরিজের ২৬০টি বই ও কুয়াশা সিরিজের ৫০টি বইয়ের লেখক হিসেবে কপিরাইট স্বত্ব পেতে যাচ্ছেন শেখ আবদুল হাকিম। অর্থাৎ ‘মাসুদ রানা’র অধিকাংশ বইয়ের লেখক কাজী আনোয়ার হোসেন নন, শেখ আবদুল হাকিম।

১৯৬৬ সালে ‘ধ্বংস পাহাড়’ নামক বইটি দিয়ে মাসুদ রানা সিরিজের যাত্রা শুরু হয়েছিল। এই সিরিজের স্রষ্টা হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন কাজী আনোয়ার হোসেন। মাসুদ রানা সিরিজের এ পর্যন্ত বই বেরিয়েছে ৪৬০টিরও বেশি।

বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের রেজিস্ট্রার জাফর রাজা চৌধুরী যমুনা নিউজকে জানান, এক বছরেরও বেশি সময় ধরে মাসুদ রানার স্বত্ব নিয়ে মামলা লড়ছিলেন শেখ আব্দুল হাকিম। বিষয়টি বেশ জটিল। কাজী আনোয়ার হোসেন সাহেবের পক্ষে তার আইনজীবী দাবি করেন শেখ আবদুল হাকিম সেবা প্রকাশনীর কর্মচারী ছিলেন, তাই তিনি মালিকপক্ষের হয়ে যে কাজ করবেন সেটির স্বত্বও মালিকপক্ষেরই থাকবে। কিন্তু ‘কর্মচারী’ দাবির স্বপক্ষে তারা কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি। অন্যদিকে, শেখ আবদুল হাকিম তার দাবির স্বপক্ষে পর্যাপ্ত প্রমাণ হাজির করেছেন। এখানে লেখকের মর্যাদার বিষয়টিও জড়িত। আমরা খ্যাতিমান কয়েকজন লেখক, প্রকাশকের মতামত নিয়েছি। যাদের মধ্যে ছিলেন লেখক বুলবুল চৌধুরী ও শওকত হোসেন, প্রখ্যাত শিল্পী হাশেম খান এবং সেবা প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক ইসরাইল হোসেন খান। তাদের  লিখিত মতামতের ওপর ভিত্তি করেই রোববার রায় দেওয়া হয়েছে। যার ফলে শেখ আবদুল হাকিম দাবিকৃত মাসুদ রানা সিরিজের ২৬০টি এবং কুয়াশা সিরিজের ৫০টি বইয়ের লেখক হিসেবে কপিরাইট স্বত্ব পেতে যাচ্ছেন।

কপিরাইট অন্তর্ভুক্তির কারণে এখন শেখ আবদুল হাকিমকে প্রতিটি বইয়ের জন্য আলাদা করে আবেদন করতে হবে। এরপর প্রতিটি বইয়ের লেখক হিসেবে তার নাম যাওয়ার পাশাপাশি, কপিরাইটও তার হয়ে যাবে। এরপর গ্রন্থস্বত্বের রয়্যালটি বাবদ তিনি তার প্রাপ্য সম্মানীর জন্য আবেদন করতে পারবেন।

নতুন কোনো প্রকাশনা সংস্থা থেকে শেখ আবদুল হাকিম ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের বইগুলো পুনর্মুদ্রণ করতে পারবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে জাফর রাজা চৌধুরী জানান, তিনি সেটা পারবেন তবে ‘মাসুদ রানা’র স্রষ্টা কিন্তু কাজী আনোয়ার হোসেন। ফলে সেই সিরিজের নাম ব্যবহার করতে তার অনুমতি লাগবে। বিষয়টা কিছুটা জটিল।

এর আগে, ২০১৯ সালের ২৯ জুলাই ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের ২৬০টি এবং ‘কুয়াশা’ সিরিজের ৫০টি বইয়ের গ্রন্থস্বত্ব দাবি করে সেবা প্রকাশনীর সত্ত্বাধিকারী কাজী আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ কপিরাইট আইনের ৭১ ও ৮৯ ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগ কপিরাইট অফিসে দাখিল করেন শেখ আবদুল হাকিম।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply