বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন ছিল মোহাম্মদ নাসিমের

|

বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন ছিল মোহাম্মদ নাসিমের

রাজপথে বরাবরই সোচ্চার ছিলেন মোহাম্মদ নাসিম।

মৃত্যুর সাথে লড়াই চালিয়ে চলে গেলেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এ সদস্য। তার পিতা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর, ৭৫ এ জেলখানায় হত্যাকাণ্ডের স্বীকার জাতীয় চার নেতার অন্যতম ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী। মনসুর আলী মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত বাংলাদেশের প্রথম সরকারের অর্থমন্ত্রী এবং স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন।

রাজনৈতিক পরিবারের মধ্যে বেড়ে ওঠা মোহাম্মদ নাসিম ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি দেশের ঐতিহ্যবাহী ও বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যের দায়িত্বে ছিলেন।

মোহাম্মদ নাসিমের জন্ম ১৯৪৮ সালের ২ এপ্রিল সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর উপজেলায়। তার বাবা শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং মাতা আমেনা মনসুর। শিক্ষাজীবনে মোহাম্মদ নাসিম জগন্নাথ কলেজ (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

রাজনৈতিক জীবনে মোহাম্মদ নাসিম বিভিন্ন সরকারের সময় জেল, জুলুম ও নির্যাতন ভোগ করেছেন। তিনি পাকিস্তানের স্বৈরশাসন. নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলনসহ স্বাধীন বাংলাদেশে সবে সামরিক ও স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে রাজপথের সক্রিয় ও অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। তিনি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। দেশের সব অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি ছিলেন অগ্র সৈনিক।

জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মোহাম্মদ নাসিম সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদে বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন এবং আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন । ২০০১ সালের পর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারবিরোধী আন্দোলনে তিনি বার বার রাজপথে পুলিশের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

মোহাম্মদ নাসিম ছাত্রজীবনে বামপন্থি ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের নেতা ছিলেন।  পরবর্তীতে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। মোহাম্মদ নাসিম ৮০ দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন। সেই সময় তিনি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের মুখপাত্রের দায়িত্বও সামলে এসেছেন তিনি।

মোহাম্মদ নাসিম ১৯৮৬ প্রথম জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মোহাম্মদ নাসিম। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের নির্বাচনে তিনি সিরাজগঞ্জ-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি ওই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। রাজপথের পাশাপাশি জাতীয় সংসদেও ছিল তার সরব উপস্থিতি ৷ ২০১২ সালে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে তিনি দলের সভাপতিমণ্ডলির সদস্যের দায়িত্ব পান।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে মোহাম্মদ নাসিম স্বরাষ্ট্র, গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি গঠিত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন এবং তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময় থেকেই তিনি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ১৪ দলকে বর্তমানে সংগঠিত রাখার ক্ষেত্রে তার বড় ভূমিকা রয়েছে ৷

সমাজকল্যাণমূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সাথেও যুক্ত জড়িত ছিলেন মোহাম্মদ নাসিম। ঢাকাসহ নিজ এলাকা সিরাজগঞ্জে বেশকিছু শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন তিনি।

মোহাম্মদ নাসিম স্ত্রী, তিন সন্তান ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার স্ত্রীর নাম লায়লা আরজুমান্দ। মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে তানভীর শাকিল জয়ও রাজনীতিতে সক্রিয়। ২০০৮ সালে সিরাজগঞ্জ-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply