মাদ্রাসার অফিস সহকারীকে জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তা, ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেফতার

|

বরিশাল ব্যুরো:

উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় একটি মাদ্রাসার অফিস সহকারীকে জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তার ঘটনায় এক ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার পৃথক স্থান থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এর আগে দুপুরে ৯ জনকে আসামি করে মেহেন্দিগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন হেনস্তার শিকার উপজেলার দড়িচর খাজুরিয়া দাখিল মাদ্রাসার অফিস সহকারী শহিদুল ইসলাম আলাউদ্দিন।

গ্রেফতার হওয়া ওই ৩ জন হলেন, দরিচর খাজুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়ী, সাবেক মেম্বার সত্তার সিকদার ও স্থানীয় বজলু আকন।

বরিশাল জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাইমুল হক জানান, মাদ্রাসার অফিস সহকারী শহিদুল ইসলামের গলায় জুতা পরানোর একটি ভিডিও গতকাল বুধবার রাতে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। বিষয়টি নজরে আসার পরপরই ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযানে নামে পুলিশ।

গোপন খবরের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার বিকেলে মুলাদী উপজেলায় অভিযান চালিয়ে দরিচর খাজুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়ী ও সাবেক মেম্বার সত্তার সিকদারকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে দরিচর খাজুরিয়া থেকে গ্রেফতার হয় বজলু আকন নামে একজনকে।

হেনস্তার শিকার মাদ্রাসার অফিস সহকারী শহিদুল ইসলাম আলাউদ্দিন জানান, শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা তাদের নিজ মোবাইল নম্বরে আসে। ২০১৯ সালে উপবৃত্তির তালিকা পাঠানোর সময় এক ছাত্রী মাদ্রাসায় না আসায়, নিজের একটি মোবাইল নম্বর দিয়ে দেন তিনি। কিন্তু দীর্ঘ দিন ব্যবহার না করায় নম্বরটি বন্ধ হয়ে যায়। এরই মধ্যে ওই ছাত্রীর এক বছরের উপবৃত্তির ১৮শ’ টাকা বন্ধ মোবাইল নম্বরে জমা হয়। কিছু দিন আগে বন্ধ নম্বরটি সচল করে উপবৃত্তির টাকা দেখতে পান তিনি। ওই টাকা ছাত্রীর পরিবারকে বুঝিয়ে দেয়ার আগেই গেল ৩০ মে তাকে মারধর করে সিম কার্ডটি নিয়ে যায় ছাত্রীর খালু সাবেক ইউপি মেম্বার সত্তার সিকদার। এসময় তার ছেলেকেও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ আলাউদ্দিনের।

তিনি বলেন, ৩০ মে বিষয়টি মিমাংসা হয়ে গেলেও বুধবার দুপুরে তাকে ইউনিয়ন পরিষদে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চেয়ারম্যানসহ কয়েকজন তার উপর নির্যাতন চালায় এবং তারা তার গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয়।

গ্রেফতার হওয়ার আগে দরিচর খাজুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়ী জানান, আলাউদ্দিন হুজুর উপবৃত্তির ৪৮শ’ টাকা আত্মসাৎ করেছে। এছাড়াও ইন্সুরেন্স করিয়ে দেয়ার কথা বলে মানুষের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করারও অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের বিষয়ে সালিশ বৈঠক হয় ইউনিয়ন পরিষদে। এসময় মেম্বার শফি দেওয়ান, ফিরোজ, বজলু আকনসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে তাকে উপবৃত্তির টাকা ফেরত দিতে বলা হয়। না দিতে পারলে জুতার মালা পরানোর সিদ্ধান্ত হয়। এসময় স্বেচ্ছায় জুতার মালা পরতে রাজি হয় আলাউদ্দিন।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply