ভুলক্রমে ‘নগদ’-এ আসা সহায়তার অর্থ প্রকৃত ব্যক্তির কাছে ফিরিয়ে দিলেন ছাত্রলীগ নেতা

|

ফোন নম্বরের একটি ডিজিট ভুল হওয়ায় করোনাভাইরাস মহামারি পরিস্থিতিতে দুর্দশাগ্রস্থ দরিদ্র লাকি আক্তারের টাকা ভুলক্রমে ঢুকে পড়ে ছাত্রলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেনের ‘নগদ’ অ্যাকাউন্টে। সরকারের উচ্চ মহলের সহযোগিতা নিয়ে প্রকৃত সুবিধাভোগীকে খুঁজে বের করে সে টাকা পৌঁছে দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন দেলোয়ার।

দেলোয়ার হোসেন সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও দোয়ারাবাজার সরকারি ডিগ্রি কলেজের আহ্বায়ক। জানা গেছে, গত ২৫ মে ভুলক্রমে সরকারের মানবিক সহায়তার টাকা আড়াই হাজার টাকা ছাত্রলীগ কর্মী দেলোয়ারের মোবাইলের ‘নগদ’ অ্যাকাউন্টে চলে যায়। নিজের নাম সরকারের এই তালিকায় নেই। তাই টাকা পাওয়ার পর থেকে প্রকৃত পাওনাদারকে খুঁজতে শুরু করেন ছাত্রলীগ কর্মী দেলোয়ার। প্রথমে তিনি এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে কথা বলেন। প্রকৃত পাওনাদারকে খুঁজে বের করতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয়কে জানানোর পাশাপাশি দেলোয়ার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে ঠিকানা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউসের সহযোগিতা চেয়ে ইমেইল করেন।

ড. আহমদ কায়কাউস ইমেইল পেয়ে তাৎক্ষণিক সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেন। তিনি সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার নেওয়ার নির্দেশ দেন এবং সরকারের এই মানবিক সহায়তার টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত আনেন এবং প্রকৃত পাওনাদার লাকি আক্তারকে খুঁজে বের করে তার কাছে টাকা পৌঁছে দেন।

দেলোয়ার হোসেন জানান, এভাবে অ্যাকাউন্টে টাকা আসার পর থেকে আমি প্রকৃত পাওনাদারকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মহোদয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মহোদয় এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের আন্তরিকতায় দ্রুততম সময়ে প্রকৃত পাওনাদারকে খুঁজে বের টাকাটা পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয়েছে। টাকার পরিমাণটা খুব বেশি নয়। কিন্তু আমার মাথায় শুধু কাজ করেছে যিনি সরকারের মানবিক সহায়তার প্রকৃত হকদার তার কাছে টাকাটা পৌঁছে দিতে হবে। তার কাছে হয়তো টাকাটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

এ প্রসঙ্গে সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া সুলতানা জানান, দোয়ারাবাজার উপজেলার বাসিন্দা দেলোয়ার বিষয়টি জানানোর পর আমি খুঁজে বের করার উদ্যোগ নেই। আমার উপজেলার তালিকায় খুঁজে প্রকৃত পাওনাদারকে খুঁজে পাইনি। পরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহযোগিতা নিয়ে প্রকৃত পাওনাদার লাকি আক্তারকে খুঁজে বের করা হয়। লাকি আক্তার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বাসিন্দা।

তিনি বলেন, আমাদের যাচাই প্রক্রিয়ার চলমান থাকার সময়ের মধ্যে দেলোয়ার হোসেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মহোদয়কেও জানিয়েছেন। পরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সাইফুল ইসলামের সহযোগিতায় দেলোয়ার হোসেন সরকারি কোষাগারে টাকা ফেরত দেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরকারের মানবিক সহায়তার আড়াই হাজার টাকা প্রকৃত পাওনাদার লাকি আক্তারকে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

মোবাইল নম্বরের একটি ডিজিটে ৫ এর পরিবর্তে টাইপিং ভুলে ৭ হওয়ায় এই ভুলটি হয়েছে বলে জানান সোনিয়া সুলতানা। দেলোয়ারের প্রশংসা করে তিনি বলেন, আমাদের আগামীর সুন্দর বাংলাদেশের জন্য এ রকম প্রতিশ্রুতিবদ্ধ দায়িত্বশীল ছেলেমেয়ে প্রয়োজন।

উল্লেখ্য, করোনা মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা করে ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা মানবিক সহায়তা দিচ্ছে সরকার। তালিকাভুক্তদের মধ্যে মোবাইল ব্যাংকিং পরিসেবার নগদ, বিকাশ, রকেট, এবং শিউরক্যাশের মাধ্যমে সুবিধাভোগীদের হিসাবে সরাসরি এ নগদ অর্থ পাঠানো হয়।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply