লিবিয়ায় নিহতদের ৫ জন ভৈরবের; জিম্মিকারীদের চাপে টাকা চেয়ে ফোন দিয়েছিলেন কয়েকজন

|

নিহত আলী, মাহবুব, আকাশ, সোহাগ ও মামুন (বা থেকে)

ভৈরব প্রতিনিধি:

লিবিয়ায় মানব পাচারকারীদের গুলিতে নিহত ২৬ জনের ভেতরে ভৈরবের ৫ জন রয়েছেন বলে তাদের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া আরও ১ জন গুরুতর আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

বৃহস্পতিবার লিবিয়ায় মর্মান্তিক এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ঘটনায় বাংলাদেশি ২৬ জন ও আফ্রিকার ৪ জন মৃত্যুবরণ করেন এবং কয়েকজন গুরুতর আহত হন। আহতরা লিবিয়ার ত্রিপলির একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

নিহতদের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাতে তারা ঘটনার খবর পান। নিহতরা লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন। সেখানে গিয়ে মানবপাচারীকারীদের হাতে বন্দি হন। তাদের অনেকেই বাড়ি-ঘর, জমি বিক্রি করে লিবিয়া যান ইতালি যাওয়ার জন্য। এখন লাশের অপেক্ষায় রয়েছে পরিবারের সদস্যরা।

ভৈরবে নিহদের মধ্যে রয়েছে উপজেলার রসুলপুর গ্রামের মেহের আলীর ছেলে মোঃ আকাশ (২৬), মৌটুপী গ্রামের আবদুল আলীর ছেলে মোঃ সোহাগ (২০), আকবরনগর গ্রামের জিন্নত আলীর ছেলে মাহবুব (২১), সম্ভুপুর গ্রামের লিয়াকত আলীর ছেলে মোঃ মামুন (২৩), একই এলাকা সম্ভুপুর গ্রামের মুসলিম মিয়ার ছেলে মোঃ আলী (২৪)। এছাড়া সম্ভুপুর গ্রামের আঃ সাত্তার মিয়ার ছেলে মোঃ জানু মিয়া (২৭) গুরুতর আহত হয়ে ত্রিপলির হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

জানা গেছে, নিহতরা প্রত্যেকে বাড়িঘর জমিজমা বিক্রি করে ৫/৬ লাখ টাকা দালালকে দিয়ে লিবিয়ায় যান। কথা ছিল লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর তাদেরকে পরে সুবিধাজনক সময়ে সাগর পাড়ি দিয়ে অবৈধ পথে ইতালি পাঠানো হবে। কিন্ত তারা লিবিয়ায় পৌঁছালে সেখানে একটি দালাল চক্র একটি গুদামে বন্দি করে আরও টাকা দাবি করে। এদের মধ্য দুই একজন লিবিয়ায় কয়েকমাস কাজও করেছে। প্রবাসে যাওয়া সবাই দরিদ্র পরিবারের হওয়ায় কেউ পাচারকারীদের দাবি অনুযায়ী টাকা বাড়ি থেকে দিতে পারেননি। তাদের গুদামে বন্দি রেখে তিন বেলা খাবারও দেয়নি পাচারকারীরা। সেইসাথে চলে অমানবিক নির্যাতন।

এরই মধ্য পাচারকারীরা কয়েকজনকে চাপ সৃষ্টি করে বাড়িতে যোগাযোগ করতে বাধ্য করে। সেসময়ে ভুক্তভোগীরা জানান, টাকা না দিলে সবাইকে মেরে ফেলা হবে। এসব নিয়ে গত বুধবার তারা পাচারকারী দলের একজনকে মারধর করেন ও তার মৃত্যু হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে লিবিয়ার মানবপাচারকারী চক্রের সদস্যরা বৃহস্পতিবার ওই গুদামে এসে নির্বিচারে গুলি চালালে ৩০ জন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হন। খবর পেয়ে লিবিয়ার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।

নিহত আকাশের বাবা মেহের আলী মিয়া বলেন, জমি বিক্রি করে ছেলেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা খরচ করে লিবিয়া পাঠিয়েছি। সেখানে গিয়ে ইতালি যেতে ছেলেকে আরও ৭৫ হাজার টাকা পাঠাই। তারপরও ছেলের মৃত্যুর খবর আসে।

সোহাগের মা কাজল বেগম জানান, তিনি ছেলেকে ৫ লাখ টাকা খরচ করে লিবিয়া পাঠান। কথা ছিলো সেখান থেকে ইতালি পাঠানো হবে সোহাগকে।

নিহতদের পরিবার আরও জানায়, তারা আরও টাকা যোগাড় করে পাঠানোর প্রস্ততি নিচ্ছিল। আবার অনেকের পরিবার টাকা দিতে অপারগতা জানিয়েছিল। এরই মধ্য পাচারকারীরা তাদেরকে গুলি করে হত্যা করেছে। সরকারের প্রতি নিহতদের পরিবারের দাবি, তাদের সন্তানদের লাশ দেখতে চায় তারা। ঘটনার বিচারের ব্যবস্থা করে লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করার দাবিও জানান তারা।

এ বিষয়ে ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ শাহিন জানান, ঘটনার খবর পাওয়া মাত্র নিহতদের ঠিকানা ও পরিচয় সংগ্রহ করতে পুলিশ মাঠে নেমেছে। এছাড়া পুলিশের পক্ষ থেকে ঘটনাটি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের কোনো নির্দেশনা আসলে আমরা সে অনুযায়ী কাজ করবো।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার লুবনা ফারজানা জানান, ঘটনার খবর পেয়ে আমি প্রতিটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে বলেছি খোঁজ খবর নিয়ে নাম ঠিকানা সংগ্রহ করতে। সরকার থেকে কোনো নির্দেশনা আসলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply