করোনার মধ্যে ইসলাম গ্রহণ করেছেন যে তিন তারকা

|

সারাবিশ্ব যখন অদৃশ্য শক্তি করোনাভাইরাসের আক্রমণে পুরোপুরি বিপর্যস্ত। ঠিক তখনই ছোট ছোট কিছু সংবাদ মুসলিম হিসেবে আমাদেরকে আপ্লুত করেছে।

তা হল, করোনার এ সময়ে বিভিন্ন দেশের একাধিক জনপ্রিয় মডেল, তারকা ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নিয়েছেন। শুধু ইসলাম গ্রহণ করেই তারা ক্ষান্ত হননি। জাঁকজমকভাবে তা তারা উদযাপনও করেছেন।

তাদের কেউ কেউ জীবনের প্রথম ইফতার, রমজানের অনুভূতিও মিডিয়াতে প্রকাশ করেছেন। আবার কেউ কেউ কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ করে ও সঙ্গীত গেয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছেন।

এদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন তানাশা দোনা। পুরো নাম তানাশা দোনা বারবিয়ারি অকেচ। মুসলিম হওয়ার পর তার নাম রাখেন আয়েশা।

তিনি কেনিয়ার জনপ্রিয় একজন রেডিও উপস্থাপক। উদ্যোক্তা ও মডেল। ‘ফর হার লাক্সারি হেয়ার’ নামক একটি হেয়ার ব্রান্ডের সিইও এবং ফাউন্ডার।

তানাশার জন্ম ১৯৯৫ সনের ৭ই জুলাই। তানাশা জন্মসূত্রে একজন কেনিয়ান নাগরিক। তাকে অনেকেই মজা করে অর্ধেক কেনিয়ান ও অর্ধেক ইতালিয়ানও বলে।

তার শৈশবের রঙিন দিনগুলো কাটে কেনিয়াতেই। এরপর ১১ বৎসর বয়সে বাবা মার সঙ্গে চলে যান ইতালিতে। সেখানে টুরিজম ম্যানেজমেন্ট ও ফরেন অ্যাফায়ার্স বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০ বৎসর বয়সে আবার চলে আসেন কেনিয়াতে।

ইংরেজি ভাষাতে তো পারদর্শিতা ছিলোই। এছাড়াও ফ্রান্স, স্পেনিশ, ওলন্দাজ ও সোয়াহিলি ভাষাও ভালভাবে রপ্ত করেছিলেন তানাশা।

তিনি অমুসলিম হলেও তার স্বামী একজন মুসলিম। তানজানিয়ার বিখ্যাত শিল্পী ও অভিনেতা ডায়মন্ড প্লাথনামজ। নাসিবু আব্দুল জুমা নামেও বেশ পরিচিত তিনি।

তানাশা তার ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে প্রথম জানিয়ে ছিলেন তার স্বামীর বোন ইসমাকে। গত ২৫ এ এপ্রিল সর্বপ্রথম তিনি তার ইসলাম গ্রহণের বিষয়টি বন্ধু মহলে প্রকাশ করেন। সেদিনই জীবনের প্রথম রোজাটি তিনি পূর্ণ করেন এবং KTN TV এর উপস্থাপক জামাল গাদ্দাফিসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ইফতার করেন।

জামাল গাদ্দাফি ইফতারের ছবিটি তার ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করার পর বিষয়টি ব্যপকভাবে মিডিয়াতে প্রচার হয়। এরপর এক টিভি প্রোগ্রামেও তিনি ইসলাম গ্রহণের বিষয়ে বিস্তারিত অনুভূতি পেশ করেন।

তানাশার ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে স্বামী ডায়মন্ড বলেন, আমি কখনো তাকে ইসলাম গ্রহণ করতে চাপ দেইনি তবে পরামর্শ দিয়েছিলাম। সে যদি তা গ্রহণ করতে চায় করবে। আমি তার জন্য দোয়া করব।

এরপর সে যখন ইসলাম গ্রহণ করল আমরা তখন কিগমা শহরে ছিলাম। যখনআমাকে এসে বলল যে, সে ইসলাম গ্রহণ করতে চায় তখন আমি বললাম ভালোভাবে জেনে-শুনে পরে আসো। এরপর সে চলে গেল।

কিছুক্ষণ পর আবার ফিরে এসে বলল আমি ভালোভাবে জেনে শুনেই নিজের ভেতর পরিবর্তন আনতে চাচ্ছি।

কোভিড-১৯ এর আক্রমনে সারাবিশ্বের অন্যান্য মানুষের মতো অস্ট্রিয়ার জনপ্রিয় রেসলিং তারকা উইলহেলমও লকডাউনে হয়ে যান ঘরবন্দী। ঘরবন্দী সময়টাকে তিনি অযথা বসে না থেকে শুরু করে দেন ইসলাম নিয়ে পড়াশুনা ও গবেষণা।

একপর্যায়ে তিনি নিজের বিবেকের সঙ্গে বুঝা পড়া করে গ্রহণও করে ফেলেন চির সত্য ধর্ম ইসলামকে।

শুধু তাই নয়। গত ১৬ এপ্রিল কালিমায়ে শাহাদাত পাঠ করে তার ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন।

ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে তার ইনস্টাগ্রাম পোস্টে বলেন, করোনার সংকট আমাকে আমার বিশ্বাস খুঁজে পেতে সাহায্য করেছে। ইসলাম বহু বছর ধরেই আমার মনোজগতের দখলে ছিল। যখনই আমার কঠিন সময় যাচ্ছিল তখনই ইসলামিক বিশ্বাস আমাকে প্রয়োজনীয় শক্তি দিয়েছে।

তিনি আরো বলেন,আমার ধর্মবিশ্বাস এখন যথেষ্ট শক্তিশালী। আমি আমার প্রকৃত ইশ্বরকে চিনতে পেরেছি। গর্বের সঙ্গে কালেমায়ে শাহাদাতও পাঠ করতে পেরেছি। হ্যাঁ,এখন থেকে আমি একজন মুসলিম।

ইলহেলমের ইসলাম গ্রহণের সংবাদ প্রচার হওয়ার পর অস্ট্রিয়ার মুসলিমসহ বিভিন্ন দেশের তার অসংখ্য ভক্তরা ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে সমর্থন ও অভ্যর্থনা জানিয়েছে। উইলহেলমও তার এক পোস্টে তাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

উইলহেলমের পূর্ণ নাম উইলহেলম ওট। মুসলিম হওয়ার পর নাম রাখেন খালিদ উইলহেলম ওট।

তিনি অস্ট্রিয়ার MMA (মিক্সড মার্শাল আর্ট) এর একজন জনপ্রিয় রেসলিং খেলোয়ার।

তার জন্ম ১৯৮২ সনে। পেশাদারিত্বের সঙ্গে তিনি রেসলিং শুরু করেন ২০০৮ সালে।

MMA( মিক্সড মার্শাল আর্ট) এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ৩৩ ম্যাচের ১৬টিতেই তিনি বিজয়ী হয়েছেন। মার্শাল আর্ট র্যাংকিংয়ে ৬১৫ জনের মধ্যেও হয়েছেন ৭৮তম।

এ কয়েকদিনের ব্যবধানে যে কয়েকজন তারকা ইসলাম গ্রণের সংবাদ প্রকাশ করেছেন তাদের আরেকজন হলেন লিসা মার্সেদেজ।

তিনি বৃটিশ জ্যামাইকার একজন প্রসিদ্ধ নৃত্যশিল্পী। ইসলাম গ্রহণের দুই মাস পর গত মাসের ৩ তারিখে ‘শাহাদা’ নামে একটি সঙ্গীত ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করে তার ইসলাম গ্রহণের বিষয়টি প্রকাশ করেন।

লিসার জন্ম জ্যামাইকার কিংস্টন শহরে। জন্মসুত্রে একজন খৃস্টান। তার মার সঙ্গে বাবার সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পর তার বাবার কাছেই সে বড় হতে থাকেন। ১৬ বৎসর বয়সে তার বাবা মারা যাওয়ার সে চলে যান লন্ডনে। সেখানে অনেক মুসলিমদের সাথে গাঢ় বন্ধুত্ব তৈরী হয়ে।

২০১৪ সনে তার ‘লেটস গেট মাতাল’ প্রকাশ হওয়ার পর ডিজে জগতে সে প্রসিদ্ধি লাভ করে।

তার ইসলাম গ্রহণ ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি গবেষণা করে দেখেছি, ইশ্বরের নিকটবর্তী হওয়ার জন্য এটিই একমাত্র সঠিক ধর্ম।

তিনি আরো বলেন, আমি একজন নৃত্যশিল্পী। আগে হট পোশাক পরতাম। এখন যেখানে সম্ভব হয় স্কার্ফ পরার চেষ্টা করি। তবে নিজেকে আগের তুলনায় আরো বেশি ঢেকে রাখি। আমি এখনো প্রতিনিয়ত শিখছি। পুরোপুরি ফিরে আসতে আরো কিছুদিন সময় লাগবে।

ইসলাম গ্রহণের পর ভক্তদের সমর্থন পেয়ে তিনি দারুণ খুশি। শাহাদা গানটি রিলিজের পর এক ফেইক অ্যাকাউন্ট থেকে মৃত্যুর হুমকিও পান তিনি।

তথ্যসূত্র: অল আফ্রিকা ডটকম, কেটিএন টিভি


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply