প্রসূতি মাকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটে বেড়ালো পুলিশ; জীবন বাঁচলো নবজাতকের

|

পুলিশের মানবিকতায় বেঁচে মা-সন্তান

পুলিশের মানবিকতায় বেঁচে গেল মা ও সন্তান।

শরীয়তপুর প্রতিনিধি:

করোনা মহামারি মানুষের মাঝে তৈরি করেছে আতঙ্ক। অনেক সময়, সহজাত মানবিক আচরণই যেন ভুলে বসছেন অনেকে। তবে, সবক্ষেত্রে চিত্রটা এমন নয়। এর মাঝেও কিছু কিছু উদ্যোগ মানুষের মনে দাগ কেটে দিচ্ছে। তেমনি একটি উদ্যোগ দেখা গেলো শরীয়তপুরে। করোনাকালে সম্মুখযোদ্ধার ভূমিকায় আত্মনিয়োগ করা পুলিশ বাহিনীর তৎপরতায় বেঁচে গেলো মানসিক ভারসাম্যহীন এক প্রসূতি মায়ের জীবন। সেই নারীকে নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছুটে বেড়ালো বাহিনীর সদস্যরা। তাদের তৎপরতায় শেষ পর্যন্ত সুস্থভাবেই পৃথিবীর মুখ দেখলো ফুটফুটে এক নবজাতক। আগমনী কান্নায় জানান দিলো অস্তিত্ব আর তাতেই যেন প্রাণ জুড়ালো পুলিশ সদস্যদের।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ডে মানসিক ভারসাম্যহীন এক মায়ের পাশে শুয়ে আছে ফুটফুটে এক শিশু। শনিবার রাত পৌনে ১২ টার দিকে জন্ম নেয় শিশুটি। শিশুটির যত্নে চিকিৎসক আর সেবিকাদের চেয়ে পুলিশের তৎপরতা কোনো অংশে কম নয়।

জানতে চাইলে নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান জানান, মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারীকে গতকাল উদ্ধার করার সময় তিনি বলেছিলেন, আমার কি বাবু হবে? সেকি আমাকে মা বলে ডাকবে? তার এই আকুতি আমাদের মনে বেশ নাড়া দিয়েছিল। সবকিছু ভুলে তার এই মনোবাসনাকে পূরণের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করি। অবশেষে তার সে আশা পূরণ হয়েছে। আমাদেরও বেশ আনন্দ লাগছে।

জানা যায়, শনিবার বিকেলে নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর বাজারে রাস্তার পাশে প্রসব বেদনায় ছটফট করছিলেন এক নারী। উৎসুক জনতা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন কিন্তু করোনা আতঙ্কে কেউই এগিয়ে আসেনি। স্থানীয় কেউ ফোন দিয়ে বিষয়টি জানায় নড়িয়া থানা পুলিশকে। নড়িয়া থানা থেকে ছুটে আসেন ওসি হাফিজুর রহমান ও ভোজেশ্বর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য। নিজেদের সুরক্ষিত করে যন্ত্রণায় কাতর ওই নারীকে উদ্ধার করে নিকটস্থ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি মাতৃসদনে নিয়ে যান তারা। সেখানে পরিস্থিতির উন্নতি না হলে পুলিশের সহযোগিতায় অ্যাম্বুলেন্সে করে ওই নারীকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। ভর্তি করানো হয় প্রসূতি ওয়ার্ডে।

রাত পৌনে ১২ টার দিকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্ম নেয় ফুটফুটে এক কন্যা শিশু। ওই শিশু ও নারীর শারীরিক অবস্থা জানতে কথা হয় সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার মনির আহমেদের সাথে। তিনি জানান, শনিবার রাতে নড়িয়া থানার পুলিশ মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারীকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এখন মা ও সন্তান দুজনেই ভালো আছেন‌। মা মানসিক রোগী। তাই ওই নারী ও তার শিশুটিকে নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় আছি। বিষয়টি পুলিশ প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত মা ও শিশুকে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালেই রাখা হবে।

ভোজেশ্বর বাজারের ব্যবসায়ী শহিদুল সিকদার বলেন, করোনা আতঙ্কে অনেকেই অমানবিক হয়ে উঠেছেন। কিন্তু আমরা দেখছি এ সময়ে পুলিশ আরো মানবিক হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে। আজ যদি ওই নারীকে সঠিক সময় উদ্ধার করে চিকিৎসা না দেওয়া হতো তাহলে হয়তো মা ও শিশু দুজনেই এ পৃথিবী থেকে বিদায় নিতো। পুলিশের এমন কাজের জন্য আমরা তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।

পুলিশ সুপার এস এম আশরাফউজ্জামান বলেন, উদ্ধার করা থেকে এখন পর্যন্ত পুলিশ সদস্যরা মা ও শিশুর খোঁজখবর রাখছেন। যেহেতু মা ভারসাম্যহীন তাই শিশু সন্তানটির কথা ভেবে নিঃসন্তান কোনো পরিবারের কাছে আইনগত ব্যবস্থার মাধ্যমে হস্তান্তর করা যায় কিনা সেটা নিয়ে কাজ চলছে। পাশাপাশি, ওই ভারসাম্যহীন নারীকে চিকিৎসার জন্য যদি মানসিক হাসপাতালে পাঠানোর প্রয়োজন হয় তাহলে পুলিশের ব্যবস্থায় পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply