স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জমি দখল করে ভূমি অফিসের দেয়াল নির্মাণ

|

পটুয়াখালী প্রতিনিধি:

পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার উলানিয়া বাজারের রতনদি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের জমি দখল করে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করছে স্থানীয় ভূমি অফিস।

যখন সংক্রমন প্রতিরোধসহ করোনাভাইরাস নিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা ঝুঁকি নিয়ে গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত ছুটে বেড়াচ্ছে ঠিক তখনি পটুয়াখালীতে ঘটলো কাণ্ড। এর ফলে স্বাস্থ্যবিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসনসহ তিনের দুই অংশ জমি বেদখল হতে চলেছে। যার প্রভাব পড়েছে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ কার্যক্রমেও।

ঘটনায় পটুয়াখালী স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে কয়েক দফা চিঠি চালাচালি করলেও বন্ধ হয়নি কাজ। বরং করোনা পরিস্থিতি উপেক্ষা করে কোনভাবেই নিম্নমানের নির্মান সামগ্রী ব্যবহার করে উন্নয়ন কাজ করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এঘটনায় স্থানীয় সাংসদকে লিখিতভাবে জানালেও কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। এঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে পটুয়াখালী-৩ আসনের সাংসদ এসএম শাহাজাদা সাজুও।

সাংসদ নেতা এ প্রসঙ্গে বলেন, স্থানীয়রা সম্মিলিতভাবে এই দখলের বিরুদ্ধে আমার কাছে অভিযোগ দিয়েছে। আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করে বিষয়টি যাচাই-বাচাই করে সুষ্ঠ সমাধানের জন্য বলেছি।

গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মুঃ মনিরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার উলানিয়া বন্দরের মধ্যে ১০৩ নং উলানিয়া রতনদি মৌজার ৭১১, ৯৮০ এবং ২৮২ নং দাগের উপর রতনদি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র অবস্থিত। স্বাধীনতার পূর্ব থেকেই এ অঞ্চলের অন্তত বিশ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা পেয়ে আসছে ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে।

মূলত উলানিয়া বাজারটি একটি বিশাল বন্দর হিসেবে পরিচিতি হওয়ায় অন্তত পাঁচটি ইউনিয়নের বিশ হাজার মানুষ ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সেবা উপর নির্ভর। দুইজন ডাক্তারসহ মোট ৫জন কর্মচারী নিয়মিতভাবে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে।

স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশেই রয়েছে স্থানীয় আটখালী ভূমি অফিস। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমদিকে ওই ভূমি অফিস বর্ধিতকরণের লক্ষ্যে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জমি দখলের চেষ্টা করলে জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয়দের বাধার মুখে সেই কাজ বন্ধ হয়। কিন্তু করোনা দুর্যোগ পরিস্থিতির সুযোগে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দুটি স্থাপনাসহ রেকর্ডিয় জমির অর্ধেকেরও বেশি দখল করে সীমানা প্রাচীর নির্মানের কার্যক্রম শুরু করে ভূমি অফিসের লোকজন।

স্বাস্থ্যকর্মীসহ স্থানীয়রা বার বার নিষেধ করলেও ভূমি অফিসের লোকজন কর্নপাত না করে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। স্থানীয় রতনদি তালতলি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা পরিষদ সদস্য মিজানুর রহমান, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি মোতাহার উদ্দিন, উলানিয়া বন্দর আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল কালাম সাধারণ সম্পাদক নজরুল শিকদার, নারী ইউপি সদস্য ইসমোত আরা বেগম ও ইউপি সদস্য জসিম উদ্দিনসহ একাধিক ব্যক্তিরা অভিযোগ করে বলেন, কোন নোটিশ ছাড়াই উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের দুই তৃতীয়াংশ জমি নিয়ে ভুমি অফিসের লোকজন সীমানা দেয়া শুরু করেছে। ফলে ভবিষ্যতে ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মকর্তাচারীর আবাসন সংকট দেখা দিতে পারে।

এ প্রসঙ্গে গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ মোঃ রফিকুর ইসলাম বলেন, উল্লেখিত জমিতে উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করছে এলজিইডি, উপজেলা প্রশসন নয়। আর উপজেলা প্রশাসন অন্যের জমি দখল করে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করছে না। এ ধরনের কোন বিষয় থাকলে কাগজপত্র যাছাই-বাছাই করে দেখা হবে।

সিভিল সার্জন মোহাম্মদ জাহাংগীর আলম শিপন বলেন, বিষয়টি শুনে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এছাড়াও লিখিতভাবে উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষ জানানো হয়েছে এবং জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক সুষ্ঠু সমাধান দেয়ার আশ্বাষ দিয়েছেন ব‌লেও তি‌নি জানান।

এছাড়াও দখলকৃত জমিতে ব্যক্তি মালিকাধীন জমি রয়েছে। স্থানীয়দের দাবী ওই অঞ্চলের দুই তৃতীয়াংশের মানুষ উলানিয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে চিকিৎসা নিয়ে থাকে। সরকারের চলমান উন্নয়নের ধারায় এই স্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রসারিত হবে। কিন্তু স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জমি দখলে চলে গেলে তা আর সম্ভব নয়।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply