করোনায় ২ লাখ প্রাণহানির আশঙ্কা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার: ঝুঁকিতে আফ্রিকা মহাদেশ

|

একের পর এক দেশ-মহাদেশ বিধ্বস্ত করে ছুটে চলছে বিশ্বঘাতী করোনাভাইরাস। আফ্রিকা মহাদেশে এর থাবা পড়েছে অনেক আগেই। এবার এ মহাদেশের দেশগুলোকে তছনছ করে দিতে পারে এ ভাইরাসটি।

এমন আশঙ্কা করছে খোদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, করোনাভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে মহামারির প্রথম বছরে আফ্রিকায় ২ কোটি ৯০ লাখ থেকে ৪ কোটি ৪০ লাখ মানুষ আক্রান্ত হতে পারেন।

এর মধ্যে ৮৩ হাজার থেকে ১ লাখ ৯০ হাজার মানুষের মৃত্যু হতে পারে। এ মহাদেশের বহু দেশ দুর্বল স্বাস্থ্যসেবা ও দারিদ্র্যের কারণে এখনই করোনার কাছে নাস্তানাবুদ। এখানকার দেশগুলোতে এক লাখ লোকের জন্য মাত্র ১টি আইসিইউ ও ১টি ভেন্টিলেটর রয়েছে। ভবিষ্যতে করোনা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিলে দেশগুলোতে মানবিক বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে বিশ্বজুড়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩৯ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমিত হয়েছেন ৯৬ হাজারের বেশি মানুষ, যা আগের দিন ছিল ৯৫ হাজারের উপরে। বিশ্বে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২ লাখ ৭১ হাজার, এরমধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন সাড়ে ৫ হাজার। খবর বিবিসি, এএফপি ও রয়টার্সসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের।

শুক্রবার ওয়ার্ল্ডওমিটারসের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আফ্রিকা মহাদেশের ৫৬টি দেশ ও অঞ্চলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৫ হাজার ৩৬৪ জন। মৃত্যু ২ হাজার ৮৩ জনের। এর মধ্যে ১২টি দেশে সংক্রমিতের সংখ্যা এক হাজারের উপরে। তিন হাজারের উপরে ছয়টি দেশে। একশ’র বেশি প্রাণহানি হয়েছে ছয়টি দেশে।

এরমধ্যে আলজেরিয়া ও মিসরে যথাক্রমে ৪৮৩ ও ৪৮২ জন মারা গেছেন। তবে সংক্রমিতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি দক্ষিণ আফ্রিকায়, ৮ হাজার ২৩২ জন। দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে ১৬১ জনের, গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৮ জন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আক্রান্ত মিসরে। দেশটিতে ৭ হাজার ৯৮১ জন আক্রান্ত হয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ১৩ জন।

মরক্কোতে আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজার ৫৪৮ জন। দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে ১৮৩ জনের, গত ২৪ ঘণ্টায় কেউ মারা যাননি। আলজেরিয়ায় আক্রান্ত ৫ হাজার ১৮২ জন। দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৭ জনের। এরপর নাইজেরিয়ায় আক্রান্ত ৩ হাজার ৫২৬, মৃত্যু ১০৭; ঘানায় আক্রান্ত ৩ হাজার ৯১ জন, মৃত্যু ১৮; আইভরি কোস্টে আক্রান্ত ১ হাজার ৫১৭ জন, মৃত্যু ২০ হাজার; সেনেগালে আক্রান্ত ১ হাজার ৪৯২, মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের।

বৃহস্পতিবার এক টেলিকনফারেন্সে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে একটি সমীক্ষা তুলে ধরেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আফ্রিকার প্রধান মাৎশিদিসো মোয়েতি। তিনি বলেন, মহামারীর বিস্তার ঠেকানোর কোনো উদ্যোগ না নেয়া হলে এ মহাদেশে পরিস্থিতি কেমন হতে পারে, সেই পূর্বাভাস এখানে দেয়া হয়েছে। আমাদের সৌভাগ্য, পরিস্থিতি এখনও সেরকম নয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওই সমীক্ষা করা হয়েছে আফ্রিকা মহাদেশের ৪৭টি দেশের তথ্যের ভিত্তিতে। এসব দেশের মোট জনসংখ্যা প্রায় একশ’ কোটি। মাৎশিদিসো মোয়েতি বলেন, এ অঞ্চলের সরকারগুলো উদ্যোগী না হলে কোভিড-১৯ আগামী কয়েক বছরের জন্য আমাদের জীবনের অংশ হয়ে উঠতে পারে। আমাদের নিয়মিত পরীক্ষা করাতে হবে, সংক্রমণের উৎস খুঁজে বের করতে হবে এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

আফ্রিকায় ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার পরে। সেখানে সংক্রমণের হার এখন পর্যন্ত অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে কম। কিন্তু সেখানেও সংকট দীর্ঘায়িত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দারিদ্র্যতা ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবের কারণে বিশেষজ্ঞরা বরাবরই আফ্রিকার ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করে আসছেন। এ মহাদেশে প্রতি এক লাখ লোকের জন্য একটি আইসিইউ শয্যা এবং একটি ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা আছে।

মহামারীর বিস্তার ঠেকাতে অধিকাংশ দেশই জনসমাগম ও চলাফেরায় বিভিন্ন ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। কোথাও কোথাও নেয়া হয়েছে কারফিউর মতো কঠোর ব্যবস্থা। তবে চলতি সপ্তাহ থেকেই বিভিন্ন দেশে বিধিনিষেধ তুলে নেয়া শুরু হয়েছে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply