তারাবি নামাজ সীমিত পরিসরে হওয়ায় পাবনায় মানবিক সংকটে হাফেজরা

|

প্রতীকী ছবি

তারাবি নামাজ মসজিদে না হওয়ায় পাবনায় মানবিক সংকট পড়েছে প্রায় ৫ হাজার হাফেজ ও কয়েক হাজার মাদরাসা ছাত্র। বন্ধ হয়ে গেছে মাদরাসা ও এতিমখানা।

এসব দ্বীনি প্রতিষ্ঠানে যাকাত ফান্ড গঠন না হওয়ায় পড়বে আর্থিক সংকটে। এজন্য সরকারিভাবে সহায়তা প্রদানের দাবি তাদের। অনেকেই এ মাসে তারাবির নামাজ আদায় করার জন্য মসজিদে যান বিশেষ করে খতম তারাবি পড়ার জন্য। কিন্তু এ বছর সেটা হবে না। ঘরে বসেই নামাজ আদায় করতে হবে। এই ভেবে অনেক মুসল্লি যেমন মনকষ্টে আছেন ঠিক তেমনি বড় মন কষ্টে আছেন পাবনার প্রায় ৫ হাজার কুরআনের হাফেজ এবং কয়েক হাজার মাদরাসার ছাত্র।

অসংখ্য হাফেজের পরিবারের সদস্যদের খরচের একটা বিশাল অংশ তাদের রোজগারের উপরে নির্ভরশীল। করোনার কারণে এবার তাদের রোজগারের কিছুটা ঘাটতি হওয়ায় চিন্তায় পড়ে গেছেন তারা। তাদের মতো অনেকেরই এখন করোনা এক দুশ্চিন্তার বড় কারণ হয়েছে দাঁড়িয়েছে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সূত্রে পাবনায় ৩ হাজার ৫৫ টি মসজিদ আছে। রমজান মাসে ২ জন করে কুরআনের হাফেজ তারাবির নামাজ পড়ান। যারা মসজিদে গিয়ে তারাবির নামাজ আদায় করেন এবং পাড়া মহল্লাবাসী ২৭ রমজানের আগে সে সকল হাফেজদের খুশি হয়ে একটা মোটা অংকের সম্মানী প্রদান করেন। গড়ে হিসাব করলে অনুমানিক টাকার পরিমাণ ৫০ লাখের মতো।

কিন্তু তারাবি বন্ধ হয় যাওয়ায় এবার সেটা হচ্ছে না। ফলে কুরআনের হাফেজরা বাৎসরিক একটি আয় থেকে বঞ্চিত হতে যাচ্ছেন। অনেক কুরআনের হাফেজ বছর ধরে অপেক্ষায় থাকেন এই আয়ের জন্য। এছাড়া জেলায় রয়েছে ১৮০টি মাদ্রাসা ও ৯০টি লিল্লাহ বোডিং। যেখানে থাকে এতিম ও অসহায়রা।

এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িতরা জানান, তাদের অবস্থা ভালো নয়। এই রমজান মাসে পাবনাসহ দেশের অনেক মাদরাসা, লিল্লা বোডিং ও এতিমখানা অপেক্ষায় থাকে বাৎসরিক একটা আয়ের জন্য। আমাদের দেশে রমজান মাসে ধর্মপ্রাণ মানুষ তাদের যাকাত ফিতরার বড় একটি অংশ এ সকল প্রতিষ্ঠানে দান করে থাকেন।

মাদরাসা, লিল্লা বোডিং এবং এতিমখানাগুলি তাদের বাৎসরিক একটি আয় থেকে বঞ্চিত হবে। কারণ অনুসন্ধানে জানা গেছে অনেকেই তাদের বাৎসরিক যাকাতের জন্য রেখে দেওয়া টাকা কারোনার কারণে ক্ষুধার্ত মানুষকে খাদ্য সরববাহের কাজে ব্যয় করে ফেলছেন। এর ফলে মাদরাসাগুলি বাৎসরিক আয় থেকে বঞ্চিত হবে। হাজার হাজার মাদরাসা ছাত্রের কয়েক মাসে ব্যয় চলে রমজান মাসের আয় থেকে। যেটা এ বছর এক রকম বন্ধ থাকবে।

কয়েকজন হাফেজের হাতে কথা হলে তারা জানান, মসজিদ লকডাউনের কথা উঠলে অনেকেই সৌদি আরবের সাথে তুলনা করেন। কিন্ত সেখানেতো মসজিদের খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিনদের পেটের বা পয়সার চিন্তা করতে হয় না। সরকারিভাবে সেখানে বন্দোবস্ত আছে। কিন্তু আমাদের দেশের বাস্তবতা তো ভিন্ন। আমাদের জেলা বা দেশের অধিকাংশ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, খাদেমরা অনেকটাই মুসল্লিদের দেয়া সম্মানীর উপর নির্ভরশীল।

এদিকে করোনার কারণে মসজিদে একসাথে অনেক লোকের নামাজ আদায়ের সরকারি বিধি সকলে মেনে চললেও মনে মনে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন অনেকেই। কারণ এলাকার মানুষ একসাথে নামাজ আদায় করবেন, একসাথে পুরো মাস তারাবির নামাজ আদায় করবেন এমনটাই সবার আশা। গ্রামের বেশিরভাগ মসজিদগুলোতে পাড়া মহল্লার মানুষেরা একসাথে বসে ইফতার গ্রহণ করার যে আনন্দ বা তৃপ্তি সেটি এবার হয়ে উঠছে না ভয়াবহ সর্বনাশা করোনার কারণে। এজন্য ভীষল মন খারাপ তাদের।

অবশ্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে মসজিদের মাদ্রসার হাফেজ, ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের দুর্দশার কথা স্বীকার করে জানানো হয় যে, জেলা প্রশাসনের সাথে সম্মিলিতভাবে তাদের পাশে থাকা হবে। সরকারিভাবে যে যাকাত উঠবে তার অর্ধেকটা দিয়ে তাদেরকে সহায়তা করার আপাতত ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিত্তশালীদেরও এসব হাফেজ ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের সহায়তায় এগিয়ে আসতে হবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন তাদের খোঁজখবর রাখছে। সরকারের যে কর্মপরিকল্পনা রয়েছে তাতে তারা বাদ যাবে না। সরকারিভাবে তাদের সহায়তার বিষয়টি নিয়ে চিন্তা চলছে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply