কিউলেক্স মশার দাপটে নাকাল রাজধানীবাসী

|

‘করোনাভাইরাসের কারণে বাসায় বসে অফিসের কাজ করতে হচ্ছে। কিন্তু মশার উপদ্রবে বাসায় থাকা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। দিন-রাত কখনোই নিস্তার মিলছে না। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর স্প্রে করে, কয়েল জ্বালিয়েও নির্বিঘ্নে কিছু সময় পার করা যাচ্ছে না।’ কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর বছিলার স্কুল পাড়ার বাসিন্দা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ইমন হাসান। শুধু বছিলাই নয়, রাজধানীর সব এলাকায় বর্তমানে কিউলেক্স মশার দাপটে অতিষ্ঠ মানুষ। বিশেষ করে ঘনবসতি ও আবর্জনাপূর্ণ এলাকায় মশার উপদ্রব বেশি।

এমন পরিস্থিতিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন নগরবাসী। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) কঠোর সমালোচনা করছেন তারা। অনেকে দুই সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বে অবহেলাকে দায়ী করেছেন। রমজান আলী নামের ফেসবুক আইডিতে ১০ এপ্রিল মশার উপদ্রব সম্পর্কিত একটি পোস্ট করা হয়েছে। পুরান ঢাকার এই বাসিন্দা তার পোস্টে উল্লেখ করেন, ‘বাইরে করোনা, বাসায় মশা; কোথায় যাব আল্লাহ? এত মশা যে, বাসায় থাকাও কঠিন। কোনটার ভয় করব, মশা না করোনার।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভারের মধ্যেও মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে কার্যক্রম পরিচালনা করছে ডিএনসিসি এবং ডিএসসিসি। তবে অপরিষ্কার জলাধার, ডোবা-নালা, কার্পেটিং ড্রেন এবং ময়লা-আবর্জনার কারণেই কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তারা আরও জানান, ঢাকা ওয়াসার তত্ত্বাবধানে রয়েছে ২৬টি খাল। উন্মুক্ত খাল রয়েছে ৮২ কিলোমিটার। এছাড়া রয়েছে, ১০ কিলোমিটার বক্সকালভার্ট। এর বাইরে ডিএসসিসি এবং ডিএনসিসির প্রায় ৩০০ কিলোমিটার কার্পেটিং ড্রেন রয়েছে। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে প্রায় ১০ কিলোমিটার জলাশয় রয়েছে। এসব উৎস থেকেই কিউলেক্স মশার বংশ বৃদ্ধি হচ্ছে। দায়িত্বপ্রাপ্তরা কিউলেক্স মশার এসব প্রজননস্থান কালেভদ্রে পরিষ্কার করলেও কয়েকদিন পর আবার তা আবর্জনায় পূর্ণ হয়ে যায়।

ডিএনসিসি সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে মশক নিধন খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা। আর ৫৪টি ওয়ার্ডে ২৭০ জন স্থায়ী, ৫৪ মাস্টাররোলভিত্তিক এবং ৫৪০ জন আউট সোর্সিং মশক কর্মী রয়েছে। ওষুধ এবং যন্ত্রপাতি রয়েছে পর্যাপ্ত সংখ্যক। অন্যদিকে ডিএসসিসি সূত্র জানায়, মশক নিয়ন্ত্রণে ৪২৪ জন মশক কর্মী রয়েছে। এর বাইরে ৭৫০ জন কর্মীর নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. শরীফ আহমেদ বলেন, করোনাভাইরাসের এই দুর্যোগের মধ্যে আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মশক নিধনের লক্ষ্যে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এখন শুধু আমাদের জীবন দেয়াটা বাকি রয়েছে। এরপরও নগরবাসী নানারকম কথা বলছে, এতে আমাদের কষ্ট পাওয়া ছাড়া আর কিছুই করার নেই।

তিনি বলেন, আমাদের মশকনিধন কর্মীদের যাতায়াতের সুব্যবস্থা নেই। তারা অনেক দূর থেকে হেঁটে এসে যার যার এলাকার দায়িত্ব পালন করছেন। পুলিশ মশকনিধন কর্মীদের নানাভাবে হয়রানি করছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে মশক কর্মীদের ছাড়াতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাস সবাইকে তাড়া করে ফিরছে। এ অবস্থার মধ্যে মশক কর্মীদের বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করে কার্যক্রম চালিয়ে নিতে হচ্ছে। আমরা সর্বস্ব দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছি, এর বেশি কিছু করার নেই আমাদের।

এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. মোমিনুর রহমান মামুন বলেন, কিছুদিন আগে স্থানীয় সরকার বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীর সভাপতিত্বে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের একটি সভা হয়েছিল। ওই সভায় ঢাকা ওয়াসাকে তাদের খাল পরিষ্কার করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা কোনো খাল পরিষ্কার করেনি। এক্ষেত্রে সেখান থেকে মশার প্রজনন বাড়লে আমাদের কী করার আছে। তিনি বলেন, রোববার মিরপুরের সাংবাদিক কলোনী খাল, ইব্রাহীমপুর খাল এবং রূপনগর খাল পরিদর্শন করে দেখেছি আবর্জনায় পূর্ণ রয়েছে। দায়িত্ব না থাকা সত্ত্বেও কিছুদিন আগে ডিএনসিসি ওই খালগুলো পরিষ্কার করেছিল। কিন্তু আবারও এলাকাবাসী আবর্জনা দিয়ে খালগুলো পূর্ণ করে ফেলেছে। তিনি আরও বলেন, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। কিন্তু নগরবাসী ডোবা-নালা আবর্জনায় পূর্ণ করে ফেলায় কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা ওয়াসার পরিচালক এ কে এম সহিদ উদ্দিন বলেন, খাল এবং ড্রেন পরিষ্কারের ব্যাপারে ঢাকা ওয়াসা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তবে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এখনও কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। শুধু মেকানিক্যাল পদ্ধতিতে রাজধানীর রামচন্দ্রপুর খাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই খাল এবং ঢাকা ওয়াসার ড্রেনগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply