অসুস্থ কিম, কে হচ্ছেন কোরিয়ার পরবর্তী নেতা!

|

কিম জং উন

উত্তর কোরিয়ার সুপ্রিম নেতা কিম জং-উনের অপারেশনের পরে অবস্থা আশঙ্কাজনক। তবে নিরপেক্ষ কোনো মাধ্যম থেকে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায় নি। এই খবর সঠিক হতেও পারে আবার নাও পারে। তবে অতি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় ইভেন্টে তার অনুপস্থিতি পরিস্থিতি ভালোর দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে না। এ অবস্থায় তার শুভ কামনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

যদি কিম গুরুত্বর অসুস্থই হয়ে থাকেন এবং মারা যান তাহলে পারমাণবিক শক্তিধর আড়াই কোটি মানুষের দেশটির নিয়ন্ত্রণ থাকবে কার হাতে তা নিয়ে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। পারমাণবিক শক্তিধর এই দেশটিকে বিশ্বের অনেক পরাশক্তিই সমীহ করে চলে। সে ক্ষেত্রে পুরো বিশ্বেকে বগলদাবা করে রাখার মতো আর কে আছেন!

এছাড়া, গত ৭০ বছর উত্তর কোরিয়া শাসন করছে একই পরিবার। ফলে কিম জং-উন যদি মারা যান, তাহলে এই পরিবার থেকেই কেউ মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেন। আর কে হতে পারেন তিনি?

এ অবস্থায় যদি কিম জং উনের অবস্থার অবনতি ঘটে, যদি তিনি মারা যান, তাহলে উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতায় তার বোনের সম্ভাবনার বিষয়ে জোর দিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার সেজং ইন্সটিটিউটের বিশ্লেষক চেওং সেওং-চ্যাং। তিনি বলেন, তার মধ্যে রয়েছে ‘রয়েল ব্লাড’। আর উত্তর কোরিয়া বংশানুক্রমিক রাজনীতির। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন যখন উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন, তখন তার পাশে ছিলেন তার বোন কিম ইয়ো জং। ফলে অনেক পর্যবেক্ষক তখন থেকেই তাকে উত্তর কোরিয়ায় তার ভাইয়ের পরে দ্বিতীয় শীর্ষ কর্মকর্তা হিসেবে বিবেচনা করে আসছেন।

তবে উত্তর কোরিয়ার শাসন ক্ষমতায় বাধা রয়েছে কিম ইয়ো জংয়ের জন্য। ২০১৭ সালে ব্লুমবার্গ একটি রিপোর্টে বলেছিল, উত্তর কোরিয়ার রাজনীতি হলো পুরুষের আধিপত্যমুলক, পক্ষপাতী নেতৃত্বের। ফলে একজন যোগ্য উত্তরসুরি হিসেবে ওই রিপোর্টে কিম ইয়ো জংকে দূরে সরিয়ে রাখে।

বাকি থাকেন কিম জং উনের বড় ও সৎভাই কিম জং নাম। তিনি বসবাস করছিলেন ম্যাকাউয়ে। এছাড়া, কিম জং উনের আরেকজন বড় ভাই আছেন। তার নাম কিম জং চোল। তবে তার রাজনীতিতে কোন আগ্রহ নেই বলে অবিহিত করা হয়। তিনি খুবই ভাল একজন গীটার বাদক। কিন্তু শেষ মূহুর্তে রাজনীতিতে অংশ নিতে পারেন বলেও অনেকে মনে করছেন।

ভাই-বোন বাদ দিয়ে কিমের রয়েছে কয়েকটি সন্তান, তবে তারা কেউ রাজনীতি করার মতো প্রাপ্ত বয়স্ক নয়। এর বাইরে কিমের ৬৫ বছর বয়সী কিম পিয়ং ইল নামে এক আঙ্কেল আছেন। তিনি কয়েক দশক ইউরোপে কূটনীতিকের দায়িত্ব পালন শেষে গত নভেম্বরে দেশে ফিরেছেন। কিন্তু ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে দূরে ছিলেন অনেক সময়।

তাহলে কি পরিবারের বাইরে ঘনিষ্ঠ কেউ আছেন ক্ষমতা নেয়ার মতো?

চোই রিওং হাই যিনি ক্ষমতাসীন পরিবারকে কয়েক দশক ধরে সেবা দিয়ে আসছেন। তিনি গত বছর সুপ্রিম পিপলস এসেম্বলির প্রেসিডিয়ামের প্রেসিডেন্ট হন। এর মধ্য দিয়ে তিনি নিজেকে রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ের একজন করে তোলেন। তবে তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ যে রক্তের সম্পর্ক সেটা নেই কিম জং উনের।

তাহলে কি ঘটবে?

রাজপরিবারের প্রতি আনুগত্যশীল সিনিয়র ব্যক্তিদের নিয়ে সমন্বিত নেতৃত্ব গড়ে উঠবে! আর তাতে নেতৃত্বে থাকবেন কিম জং উনের বোন কিম ইয়ো জং, যদিও তিনি নারী। আবার কেউ কেউ আশঙ্কা করেন, কিম জং উন মারা গেলে উত্তর কোরিয়ায় ক্ষমতা নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দিতে পারে। যদি তাই হয়, তাহলে ওই অঞ্চলের জন্য এটা হতে পারে বিপজ্জনক। এছাড়া পারমাণবিক অস্ত্রগুলো পড়ে যেতে পারে ভুল হাতে।

তবে এসবই নির্ভর করছে কিম জং উনের শারীরিক সুস্থতার ওপর। তিনি এখনও যুবক। তিনি যদি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেন তাহলে আগামী ১০ বছর দিব্যি ক্ষমতায় থাকতে পারবেন।

উল্লেখ্য, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের হার্টে অপারেশন করানো হয়েছে। এরপর তিনি রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ের বাইরে একটি ভিলায় অবস্থান করছেন। এর পর সিএনএন যুক্তরাষ্ট্রের অজ্ঞাত এক কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে রিপোর্ট করে যে, উত্তর কোরিয়ার সুপ্রিম নেতার অবস্থা মারাত্মক। আশঙ্কার মাত্রা বাড়ে ১৫ই এপ্রিল, উত্তর কোরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা কিম ইল সাংয়ের জন্মদিনে কিমের অনুপিস্থতি। সেখানে উত্তর কোরিয়ার বর্তমান নেতার উপস্থিতি যেন বাধ্যতামূলক। কিন্তু সেই অনুষ্ঠানে ছিলেন না কিম জং উন। তবে সব জায়গায় তার পোস্টার দেখা যায়, বিষয়টি অস্বাভাবিক।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply