সময়ের সাথে জটিল হচ্ছে করোনার চরিত্র, সাথে নতুন উপসর্গ

|

করোনা সংকট প্রতিদিনই প্রকট আকার ধারণ করছে। সময় যতো গড়াচ্ছে যেন আরও জটিল হচ্ছে ভাইরাসটির চরিত্র। পশ্চিমা চিকিৎসকরা বলছেন, নতুন নতুন উপসর্গ দেখা যাচ্ছে সংক্রমণের। যাতে সবশেষ সংযোজন রক্ত জমাট বাঁধা। বিভ্রান্তি বাড়ছে চিকিৎসা নিয়েও।

এতদিন ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধকসহ পুরনো কিছু ওষুধে সাফল্যের দাবি করা হলেও এখন সেসবে সন্দেহ প্রকাশ করছেন চিকিৎসকরা। এমনকি কিছু ওষুধে হিতে বিপরীত হওয়ার সতর্কতা দিয়েছেন তারা। হাঁচি-কাশি-জ্বর-সর্দি দিয়ে শুরু হলেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ এখন অনেকগুলো। মহামারির চার মাসে ভাইরাসটির রুপ পাল্টানোর সাথে সাথে যোগ হয়েছে ডায়রিয়া, স্বাদের অনুভূতি চলে যাওয়াসহ আরও কিছু উপসর্গ। তালিকায় সবশেষ সংযোজন- রোগীর রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়া।

নিউইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের নিউরোসার্জন ড. জে মোকো বলছেন, করোনা আক্রান্তদের অনেকেরই কিডনি, মস্তিষ্কের মতো অঙ্গপ্রত্যঙ্গে রক্ত জমাট বাঁধছে। আরও উদ্বেগের বিষয় হলো শুরুতে করোনার বলি বয়স্ক ব্যক্তিরা হলেও, এই নতুন ধরনের রোগীদের বেশিরভাগই তরুণ।

তিনি জানান, এই রোগে যে পরিমাণ রক্ত জমাট বাঁধছে তা ভীষণ উদ্বেগজনক। এটা আর শুধু ফুসফুসের রোগ নেই। পরিস্থিতির কারণে এখন করোনার চিকিৎসায় শুরুতেই রক্তের ঘনত্ব কমানোর হাই ডোজের ওষুধ দিচ্ছি। কাজও হচ্ছে। কিন্তু এ ধরনের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে জটিল রোগীদের ক্ষেত্রে আমরা নিরুপায়।

দেশটির সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. ক্যাথরিন পলস জানান, করোনার উৎস-চিকিৎসা সবই অজানা। তাই চিকিৎসাবিজ্ঞানে বিদ্যমান পদ্ধতি আর এক বা বিভিন্ন ওষুধের সমন্বিত প্রয়োগে চলছে চিকিৎসার চেষ্টা। প্রয়োগ করা হচ্ছে ইবোলা, এইচআইভি থেকে শুরু করে শতবছর আগের অ্যান্টিম্যালেরিয়াল ড্রাগসহ নানা রোগের নানা ওষুধ।

তিনি বলেন, রেমডাসিভিয়ার অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ। এর কাজই হলো মানবদেহে ক্ষতিকর ভাইরাস রুখে দেয়া। এরকম একেকটি অ্যান্টিভাইরাল একেকটি ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করে। রোগীর উপসর্গ এবং ভাইরাস কতোটা ছড়িয়েছে, তার ওপর নির্ভর করে তার দেহে কোন অ্যান্টিভাইরাল কী মাত্রায় প্রয়োগ করা হবে।

ব্রিটেনের চিফ মেডিকেল অ্যাডভাইজার ক্রিস হুইটি বলেন, করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় রেমডাসিভিয়ার, হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ও এজিথ্রোমাইসিন কিছুটা সাফল্য মিললেও ব্যর্থতার নজিরও ঢের। তাই মহামারির চার মাসেও এসব ওষুধের কোনোটিকেই করোনার চিকিৎসায় শতভাগ কার্যকর বা অকার্যকর।

তিনি আরও জানান, অতীতে অনেক মহামারিই প্রতিষেধক ছাড়া নিয়ন্ত্রণে আনার উদাহরণ আছে। যেমন এইডস। রোগটির জন্য দায়ী এইচআইভি আক্রান্তের চিকিৎসায় ভিন্ন ভিন্ন বা কয়েক ধরনের ওষুধ ব্যবহার করে সাফল্য পেয়েছি। করোনার চিকিৎসাতেও একই কৌশল অবলম্বন করা হলেও সুনির্দিষ্ট ফল এখনও পাইনি।

মহামারির শুরুতে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনকে ‘গেম চেঞ্জার’ বলেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে গবেষণা বলছে, এটার সাফল্য কম। হিতে বিপরীতও হচ্ছে কিছু ক্ষেত্রে। অন্যদিকে রেমডাসিভিয়ারকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কার্যকর বলছেন কেউ কেউ।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply