সরকারি চাকরিজীবী করোনায় মারা গেলে পাবেন সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা

|

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসনসহ নানা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে তাদের কেউ আক্রান্ত হলে ক্ষতিপূরণ বাবদ অর্থ দেবে সরকার। বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

পরিপত্রে বলা হয়েছে, এসব অর্থ দেয়া হবে গ্রেডভেদে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সেবা প্রদানে সরাসরি কর্মরত ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ এ সংক্রান্ত সরকার ঘোষিত নির্দেশনা বাস্তবায়নে মাঠ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী ও প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য কর্মচারী দায়িত্ব পালনকালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে ক্ষতিপূরণ বাবদ সরাসরি আর্থিক সুবিধা প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

এক্ষেত্রে কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হলে গ্রেডভেদে পাঁচ থেকে ১০ লাখ টাকা পাবেন। আর সরকারি কোনো কর্মকর্তা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে এর পাঁচগুণ আর্থিক সহায়তা পাবেন।

এছাড়া ‘২০১৫ এর বেতনস্কেল অনুযায়ী ১৫-৩০তম গ্রেডের কেউ আক্রান্ত হলে তিনি ক্ষতিপূরণ পাবেন পাঁচ লাখ টাকা, আর মারা গেলে পাবেন ২৫ লাখ টাকা। ১০-১৪তম গ্রেডের কেউ আক্রান্ত হলে পাবেন সাড়ে সাত লাখ টাকা এবং আর মারা গেলে পাবেন সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা। এছাড়া প্রথম-নবম গ্রেডের কেউ আক্রান্ত হলে পাবেন ১০ লাখ টাকা এবং মারা গেলে পাবেন ৫০ লাখ টাকা।’

পরিপত্রে আরও বলা হয়, ক্ষতিপূরণের আওতায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সেবা প্রদানে সরাসরি কর্মরত চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যসেবাকর্মী, ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে লকডাউন ও সরকার ঘোষিত নির্দেশনা বাস্তবায়নে নিয়োজিত মাঠপ্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী এবং প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এ সুবিধা পাওয়ার যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন।

ক্ষতিপূরণের টাকা পেতে যে পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে

-করোনাভাইরাস পজিটিভের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যসেবাকর্মীসহ মাঠপ্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী এবং প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারী করোনাভাইরাস পজিটিভের প্রমাণক বা মেডিকেল রিপোর্টসহ স্ব-স্ব নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের নিকট নির্দিষ্ট ফরমে ক্ষতিপূরণের দাবিনামা পেশ করবেন।

-করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ফরমে মৃত্যুবরণকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্ত্রী/স্বামী/সন্তান এবং অবিবাহিতদের ক্ষেত্রে বাবা/মা ক্ষতিপূরণের দাবি-সংবলিত আবেদন নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের নিকট পেশ করবেন।

-আবেদনকারীর নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ আবেদনপত্রসমূহ যাচাই-বাছাই করে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় বা বিভাগের মাধ্যমে অর্থ বিভাগে প্রস্তাব পাঠাবে।

-প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত কর্মচারীগণ কেবলমাত্র এ ক্ষতিপূরণ পাওয়ার যোগ্য হবেন।

-করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এবং করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণের জন্য ক্ষতিপূরণ বাবদ ব্যয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সৃজনকৃত খাতে করোনা (কোভিচ-১৯) সংক্রান্ত স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় ক্ষতিপূরণ বরাদ্দকৃত অর্থ হতে নির্বাহ করা হবে। অর্থ বিভাগ ক্ষতিপূরণের আবেদনপ্রাপ্তির পর ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রদানের সরকারি আদেশ জারি করবে।

-এ ক্ষতিপূরণ বর্তমান প্রচলিত অন্য যেকোনো প্রজ্ঞাপন/আদেশে বর্ণিত কর্মকালীন মৃত্যুবরণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য আর্থিক সহায়তা বা অনুদানের অতিরিক্ত হিসেবে প্রদেয় হবে। চলতি বছরের ১ এপ্রিল হতে এ পরিপত্রের নির্দেশনা কার্যকর হবে।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশেনের হিসাবে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সারাদেশে ২১৫ জন চিকিৎসক, ৬৬ জন নার্স ও ১৮৮ স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। ইতিমধ্যেই করোনায় আক্রান্তদের সেবা দিতে গিয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দিনের মৃত্যু হয়েছে। তার পরিবারও এর আওতায় আসবে।

এদিকে দেশে করেনাভাইরাস মোকাবেলায় দুই হাজার চিকিৎসক ও ৬ হাজার নার্স নিয়োগ দেয়ার কথা জানিয়েছে সরকার। এদিন দুপুরে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিদিনের স্বাস্থ্য বুলেটিনে এ কথা জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করেছি বেশ কিছু হাসপাতালে রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে আমাদের চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন। এর জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করি এবং তাদের সুস্থতা কামনা করি। এ অবস্থায় যেহেতু নতুন নতুন হাসপাতাল করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য প্রস্তুত করছি এবং বেশ কিছু চিকিৎসকদের কোয়ারেন্টিনে যেতে হয়েছে, তাই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নতুন দুই হাজার চিকিৎসক এবং ছয় হাজার নার্স আমরা নিয়োগের ব্যবস্থা করছি। আমরা আশা করি এই নিয়োগের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা আরও জোরদার হবে।’


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply