করোনাভাইরাস পরিস্থিতি: নিজেকে প্রফুল্ল রাখবেন যেভাবে

|

আশা জাহিদ:

করোনাভাইরাসের কারণে আমাদের সবার মনের মধ্যেই এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। একদিকে যেমন ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তায় থাকছি আমরা, তেমনি কীভাবে সেইসব সমস্যা নিয়ে সমাধান করবো তা নিয়ে নেই আমাদের কোনও পরিষ্কার ধারণা নেই বলা যায়। যে কারণে অনেকেই মনের সমস্যায় ভুগছি, যা হয়তো কাউকে বলতেই পারছি না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানাচ্ছে, করোনাভাইরাসের কারণে সারা পৃথিবীতেই সাধারণ মানুষের বিভিন্ন মানসিক সমস্যা নিয়ে সংকট দেখা যাচ্ছে। মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়টি করোনাভাইরাসের কারণে নানামুখী প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছে। একটু সচেতনতাই পারে আমাদের করোনাভাইরাস পরিস্থিতির এই সময়ে নিজেদেরকে স্থির রাখতে। নিজেকে নিজের সঙ্গে সংযুক্ত রাখতে চলুন জেনে নেই এমনই কয়েকটি উপায়ের কথা।

সচেতন থাকছেন না?
করোনাভাইরাসের কারণে পরিস্থিতি যাই হোক না কেন সব সময় ইতিবাচকভাবে নিজের সঙ্গে নিজের বোঝাপড়া তৈরি করুন। সমস্যা আর আতঙ্ক আমাদের নিত্যদিনের ঘটনা। কোন ঘটনা যেন আমাদের আতঙ্কিত করতে না পারে সে বিষয়ে আমাদের খেয়াল রাখা উচিত। আমরা নিজেরা যদি আতঙ্কিত হই, তাহলে আমাদের পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কিত হবেন। আতঙ্ক কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রতিদিনকার জীবনে একটু ইতিবাচক পরিবর্তন আনুন। প্রার্থনা করুন। নিজেকে সময় দিন। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলুন। ঘরের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে গুরুত্ব দেয়া, বই পড়ার মতো কাজগুলোর দিকে আমরা এখন গুরুত্ব দিতে পারি।

মনের যত্ন নিচ্ছেন না?
করোনাভাইরাসের কারণে নানা রকমের সংবাদ আমাদের মনকে অস্থির করে তোলে। অনেক সময় অনেক মিথ্যা ও ভুয়া খবরের কারণে আমরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হই। করোনাভাইরাসের কারণে তৈরি হওয়া এই সংকটকালীন সময়ে মনের যত্ন নিন। মনোযোগিতা বা মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন কিংবা যোগ ব্যায়ামের মতো ইতিবাচক বিষয়গুলো ঘরে বসে চর্চা করুন। যেই কাজগুলো করার মাধ্যমে মনের উন্নয়ন করা সম্ভব সে বিষয়গুলোর দিকে জোর দিন। আপনার পরিবারের সদস্যদের দিকে খেয়াল রাখুন। তাদের মনের অবস্থা সম্পর্কে বোঝার চেষ্টা করুন। তাদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনুন।

পরিকল্পনা নিচ্ছেন না?
একরকম একটি অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকছি আমরা। কখন লকডাউন শেষ হবে, কখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে- সে বিষয়ে সম্পর্কে আমরা জানি না। কী হবে-কী না হবে, এই অংক মেলাতে আমরা প্রতিদিন হতাশ হয়ে যাচ্ছি। করোনাভাইরাসের কারণে পরিবেশ ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক নেই। এ সময়টাতে নিজের আর্থিক সক্ষমতা, পরিবারের নিরাপত্তা, ভবিষ্যতের চাকরির অবস্থান ইত্যাদি বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করুন। ভবিষ্যতে কী হতে পারে, কী না হতে পারে, কীভাবে বিপদ থেকে নিজেকে উদ্ধার করবেন এবং নিজের পরিবারকে রক্ষা করবেন সে বিষয়গুলো কাগজে লিখে রাখুন। প্রয়োজনে পরিবারের অন্যান্য সদস্য ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের মাধ্যমে সংকটকালীন সমস্যার সমাধান কেমন হতে পারে, কীভাবে সমাধান করতে পারেন সে বিষয়গুলো কাগজে লিখে ফেলুন।

সব সম্পর্ককে সম্মান দিচ্ছেন কি?
আপৎকালীন মুহূর্তে আমরা নিজেরা যেমন অস্থির থাকি, তেমনি অন্যদের সাথে মনোমালিন্য ও রাগারাগির ঘটনা ঘটে। এ সময় নিজেকে সম্মান দিতে শিখুন। নিজের চারপাশের মানুষকে সম্মান দিন। তাদের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা রাখুন। তাদের পাশে সহায়ক হিসেবে নিজের অবস্থান তৈরি করুন। প্রত্যেকটি সম্পর্ক উন্নয়নের দিকে জোর দিন। অফিসের সহকর্মী, পরিবারের অন্যান্য সদস্য, গ্রামের বাড়িতে যারা থাকছেন তাদের খোঁজ খবর নিন।

আসক্তির দিকে খেয়াল রাখছেন না?
যেহেতু এ সময়টাতে আমরা ঘরে থাকছি, আমাদের কিছু আসক্তির সম্ভাবনা দেখা যায়। মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটে আমাদের আসক্ত হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। ছোট শিশুরা বাড়িতে যারা থাকছে তাদের টেলিভিশন নির্ভরতা বাড়ছে। কোনোভাবেই যেন টেলিভিশন-মোবাইল ফোন-ইন্টারনেট আসক্তি হিসেবে তৈরি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। প্রয়োজনে পরিবারের সদস্যদের সাথে গল্প করুন। বই পড়ুন। পারিবারিক আবহকে সংযুক্ত করে এমন খেলার দিকে মনোযোগ দিন।

শরীরের যত্ন নিচ্ছেন না?
এই আপৎকালীন সময়ে আমরা সবাই কোনও না কোনও কারণে হতাশাগ্রস্ত। হতাশার কারণে নিজের শরীরের যেন ক্ষতি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। পুষ্টিকর খাবারের দিকে জোর দিন। তিন বেলা নিয়মিত খাবারের দিকে নজর দিন। পরিমাণ মতো পানি পানের চেষ্টা করুন। নিয়মিত ঘুম ও পরিমিত ঘুমের দিকে খেয়াল রাখুন। রাত জাগার অভ্যাস পরিহার করার চেষ্টা করুন। নিজের চারপাশের খেয়াল রাখুন। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে খেয়াল রাখুন। শিশুদের সুস্থতা দিকে খেয়াল রাখুন।

খুব জলদি ভালো কিছু হবে আপনার জীবনে- এমনটা বিশ্বাস করা শুরু করুন। পরিবেশ পরিস্থিতি ইতিবাচকভাবে বদলে যাবে, সবার জীবন আবারও স্বাভাবিক হয়ে উঠবে এই প্রার্থনা ও প্রত্যাশা করুন।

লেখক: কমিউনিটি কাউন্সেলর, মনের বন্ধু- মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply