করোনা এখন প্রধান শত্রু

|

ইব্রাহিম খলিল:

১৮৬০ দশকে জাপানে “শিনসেনগুমি” নামে একটি সশস্ত্র নিরাপত্তা বাহিনী ছিল। এই সামুরাই গ্রুপটি তাদের নিজস্ব দর্শন লালন করতো। এই গ্রুপটি একটি মটো মেনে চলতো আর সেটা হলো “Aku Soku Zan” (悪即斬), মানে “Slay evil immediately”. অর্থাৎ শত্রুকে তৎক্ষণাৎ শেষ করে দাও।

আমাদের কলরবের শহরে এখন যুদ্ধের সুনসান নীরবতা। যেন একটা বড় গোপন যুদ্ধ চলছে চারপাশে, তার নিস্তব্দতা সবখানে। হ্যাঁ, একটা যুদ্ধ চলছে বিশ্বব্যাপী একটা ক্ষুদ্র কিন্তু ক্ষমতাধর ভাইরাসের বিরুদ্ধে। এখানে আমাদের প্রধান শত্রু করোনাভাইরাস। এই শত্রু ইতিমধ্যে মরণঘাতী হয়ে আমাদের অনিশ্চয়তার খাদের কিনারে নিয়ে গেছে। আমরা আতঙ্ক নামক জামাটা সবসময় গায়ে নিয়ে ঘুরছি। তবে এই শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধটা যতটা না সমন্বিত তার চেয়ে বেশি আমাদের একা একার। এই প্রধান শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের জাপানের শিনসেনগুমির মতো মটো মানসে ধারণ করতে হবে। শত্রুকে তৎক্ষনাৎ শেষ করে দাওয়া। এই শেষ করার একমাত্র উপায় প্রতিরোধ করা। সর্বাত্মক পরিচ্ছন্নভাবে থেকে একা লড়ে যাওয়া।

মানব সভ্যতা তার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে কিনা কখনো সেটা ইতিহাস সাক্ষ্য দিবে একদিন। তবে পুরো বিশ্ব হতভম্ব হয়ে একটা ক্ষুদ্র ভাইরাসের কৃতিকলাপ হা হয়ে দেখছে। আক্রান্ত হয়ে হাজার হাজার মানুষ মরে যাচ্ছে। লাশের মিছিলের পাশে মানুষের এমন অসহায় চাহনি মৃত্যুর মতোই যন্ত্রণাময়। অথচ জ্ঞান বিজ্ঞান প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় কতো উচ্চ শিখরে মানুষ। কিন্তু কোনো প্রতিকার কাজে না, কিছুই তেমন কাজে আসছে না, কিছুই থামাতে পারছে না লাশের মিছিলকে।

বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ও প্রভাবশালী রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে সমৃদ্ধ শহর নিউইয়র্কের হ্যানহাটানে একটি চার্চের সামনে ক্ষুধার্ত মানুষ লাইন দিচ্ছে। এই ছবি “নিউইয়র্ক টাইমস” ২৬ মার্চ প্রকাশ করে। মার্চের প্রথম সপ্তাহেও যুক্তরাষ্ট্র তাদের এমন নিঃস্ব দশার কথা ভুলেও কল্পনা করেনি। দেখলে মনে হবে ২য় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী কোনো শহরের দৃশ্য।

মানুষ কি হেরে যাচ্ছে? কিন্তু মানুষতো হারতে পারে না। মহাবিশ্বের সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণীটি মুখ থুবড়ে পড়ে যেতে পারে না। মানুষকে বিজয়ী হতে হবে। হ্যাঁ, মানুষ শেষ পর্যন্ত জিতবে, জিততে হবে। এটাই নিয়ম। মানুষ হারতে পারে না।

আরেকটু অপেক্ষা, মানুষ থুবড়ানো মুখ থেকে আবার ঘুরে দাঁড়াবে। আবার কোনো বিপ্লবের মতো দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার পরিণতি থেকে জেগে উঠবে। একটু ধৈর্য্য আর একটু সাবধানতা। এই দুঃসময় কেটে যাবে অচিরেই। ভ্যাক্সিনের সুখবর দিবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। মানুষ প্রাণ খুলে হাসবে। বাবা তার সন্তানকে নিয়ে আবার রাস্তায় হেঁটে বেড়াবে নির্ভয়ে। তরুণ প্রেমিক প্রেমিকা পাশাপাশি পার্কে বসে খুনসুটি করতে করতে করোনা নিয়ে টিটকারি মারবে। নব্য কবি, সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে এক বসায় লিখে ফেলবে করোনা নিয়ে একটা রোমাঞ্চিত কবিতা। করোনার ঠোঁটে খেতে চাইবে রক্তাক্ত চুম্বন। আরেকটু অপেক্ষা, জাস্ট আরেকটু সময়।

মানুষ বুক ভরে নিশ্বাস নেবে আতঙ্কের জামাটা ছুড়ে ফেলে। শ্রমিক আবার হাসিমুখে ঘেমে জবুথবু হয়ে কাজ করবে। আবার দুমুঠো ভাতের যোগান হবে নিশ্চিন্তে। ভিক্ষুক আবার নির্ভরতা ভিক্ষা চাইবে কোলাহল-ভিড়ে। এ শহরটা আবার জেগে উঠবে, আলোর ঝলকানিতে আবার ব্যস্ত হবে মুখরতায়। গায়ে গা লাগিয়ে লোকাল বাসে চড়তে চড়তে মানুষ করোনাকে ভুলে যাবে। কেবল আর কটা দিন।

তবে তার আগে কেবল এই প্রধান শত্রুর বিরুদ্ধে পরিচ্ছন্নতা, সাবধানতা নিয়ে একা একা লড়াইটা চালিয়ে যেতে হবে। জয় আমাদের হবেই, ইনশাআল্লাহ।

লেখক:রিপোর্টার, যমুনা টেলিভিশন।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply