করোনা টিকা কি দরিদ্র দেশগুলোর মানুষ পাবে?

|

বৈশ্বিক সংকট সৃস্টিকারী করোনাভাইরাসের টিকা আবিস্কারের জন্য এখন পর্যন্ত কাজ করছে মোট ৪৪টি প্রকল্প। বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানী এবং গবেষকরা কাজ কের চলেছেন। তাদের ভেতরেই একজন কেইট ব্রোডেরিক। এই অনুজীব জিন বিজ্ঞানীর দেয়া তথ্যে এক বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি। সেখানে উঠে এসেছে এক প্রশ্ন। সেটা হলো করোনা টিকা আবিষ্কার হলে কি দরিদ্র দেশগুলোর মানুষ পাবে?

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়- যুক্তরাষ্ট্রের একটি বায়োটেকনোলজি কোম্পানি আশা করছে এ বছরের ডিসেম্বর মাস নাগাদ তারা ‌‌‌কোভিড-নাইনটিনের টিকার দশ লাখ ডোজ তৈরি করতে পারবে। কিন্তু এই টিকা কোথায় পাওয়া যাবে, কাদের দেয়া হবে?

টিকার মজুতদারি: ইনোভিওর মত কোম্পানি যে টিকা তৈরি করার চেষ্টা করছে সেসব টিকা ধনী দেশগুলো মজুতদারী করার চেষ্টা করবে কিনা এখনই সেরকম একটা উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

হেপাটাইটিস বি টিকা নিয়ে বৈষম্য: টিকার ক্ষেত্রে এই বৈষম্যের সবচাইতে বড় উদাহরণ হচ্ছে হেপাটাইটিস-বি টিকা। বিশ্ব লিভার বা যকৃতের ক্যান্সারেরর সবচেয়ে বড় কারণ হেপাটাইটিস-বি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে এটি এইচআইভির চেয়ে ৫০ গুণ বেশি সংক্রামক।

২০১৫ সালে বিশ্বে হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ছিল ২৫ কোটি ৭০ লাখ। ১৯৮২ সালে ধনীদেশগুলোতে এই ভাইরাসের টিকা চলে আসে। কিন্তু ২০০০ সাল পর্যন্ত গরীব দেশগুলোর দশ শতাংশের কম মানুষকে এই টিকা দেয়া গেছে।

দুই ধরণের বাস্তবতা: কিন্তু বাস্তবে পরিস্থিতি আসলে দুই ধরণের। একটা উদাহারণ হচ্ছে গারডাসিল বলে একটি টিকা। মার্কিন ল্যাবরেটরি মেরেক এটি উদ্ভাবন করে ২০০৭ সালে। হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) মোকাবেলায় তৈরি টিকাটি মার্কিন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পায় ২০১৪ সালে।

বিশ্বে সার্ভিক্যাল ক্যান্সারের (জরায়ুমুখ ক্যান্সার) জন্য মূলত দায়ী এই এইচপিভি। কিন্তু বিশ্বের স্বল্পোন্নত মাত্র ১৯টি দেশে এই এইচপিভির টিকা পাওয়া যায়। অথচ বিশ্ব জরায়ুমুখ ক্যান্সারে যত মৃত্যু ঘটে, তার ৮৫ শতাংশই উন্নয়নশীল দেশে।

কেন এই সংকট? সেটা বুঝতে হলে আমাদের টিকা নিয়ে যে বাণিজ্য চলে বিশ্বজুড়ে, সেটা জানতে হবে।

টিকা থেকে মুনাফা: ঔষধ কোম্পানিগুলোর নিত্যদিনের যে ব্যবসা-বাণিজ্য, টিকা তার প্রধান অংশ নয়। বিশ্বের ঔষধের বাজার প্রায় ১ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলারের (২০১৮ সালের পরিসংখ্যান)। এর মধ্যে টিকা কেনা-বেচা হয় মাত্র ৪০ বিলিয়ন ডলারের।

ঔষধ তৈরির চেয়ে টিকা তৈরির আর্থিক ঝুঁকি কেন বেশি, সেটা এই পরিসংখ্যান থেকেই পরিস্কার বোঝা যায়। টিকার গবেষণা এবং তারপর সেটি তৈরি করা বেশ খরচ সাপেক্ষ। আর টিকা বাজারে ছাড়ার আগে এটি নিয়ে যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে হয়, সেটির নিয়ম-কানুন বেশ কড়া।

মুক্তবাজার নিয়ে উদ্বেগ: কাজেই ধনী দেশগুলোতে টিকা নিয়ে মুনাফার ভালো সুযোগ আছে। বিশেষ করে টিকা নিয়ে গবেষণা এবং এটি তৈরির প্রাথমিক খরচ তুলে আনতে।

ব্রিটেনের এসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের হিসেবে একটা নতুন টিকা তৈরিতে প্রায় ১৮০ কোটি ডলার পর্যন্ত খরচ পড়ে। “যদি আমরা বিষয়টি বাজারের ওপর ছেড়ে দেই, তাহলে কোভিড-নাইনটিনের টিকা কেবল ধনী দেশের মানুষেরাই পাবে”- বলছেন লণ্ডন স্কুল অব হাইজিন এন্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের অধ্যাপক মার্ক জিট।

“এর আগে অনেক টিকা নিয়ে আমরা এরকম ঘটতে দেখেছি। কিন্তু এবার যদি এরকম কিছু ঘটে, সেটা হবে অনেক বড় এক ট্র্যাজেডি।”

ঐকমত্য: ইনোভিও যদি কোভিড-নাইনটিনের টিকা উদ্ভাবনে সফল হয়, এটির লাখ লাখ ডোজ তৈরির জন্য তাদের বড় কোন ঔষধ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছাতে হবে। গত কয়েক বছরে অনেক ঔষধ কোম্পানি প্রকাশ্য অঙ্গীকার করেছে যে তারা সবাই যাতে টিকা পায় সেই লক্ষ্যে কাজ করবে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply