অন্য ব্যাংকের এটিএম সেবায় ফি লাগবে না

|

মহামারী করোনায় ব্যাংক সেবা সহজ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই অংশ হিসেবে ডেবিট কার্ড ব্যবহারকারীকে বিশেষ ছাড় দিয়েছে কয়েকটি বাণিজ্যিক ব্যাংক। আগে এক ব্যাংকের কার্ড দিয়ে অন্য ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে প্রতি লেনদেনে ১৫ টাকা কেটে রাখা হতো। এখন তা করা হবে না। অর্থাৎ এ ধরনের কোনো লেনদেনে ফি আদায় করবে না ব্যাংক। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত প্রচারণা চালাচ্ছে বেশ কিছু ব্যাংক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামী ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) আবু রেজা মো. ইয়াহিয়া বলেন, এ নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন সে নির্দেশনা পরিপালন করছে ব্যাংকগুলো।

তবে ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবুল কাশেম মো. শিরিন জানান, এ ধরনের নির্দেশনা বাংলাদেশ ব্যাংক দিয়েছে বলে আমার জানা নেই। কোনো ব্যাংক করলে তা নিজস্ব উদ্যোগেই করছে। ডাচ্ বাংলার পর্যাপ্ত এটিএম বুথ আছে। আমাদের এ সুবিধা দেয়ার প্রয়োজন নেই। যেসব ব্যাংকের এটিএম বুথ কম, সেসব ব্যাংক হয়তো গ্রাহকের পক্ষে ভর্তুকি দেবে।

শনিবার ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড (ইউসিবিএল) গ্রাহকদের পাঠানো ক্ষুদে বার্তায় জানায়, বর্তমানে তাদের কার্ড হোল্ডারদের অন্য ব্যাংকের এটিএম (অটোমেটেড টেলারিং মেশিন) বুথ ব্যবহার করলে কানো ফি দিতে হবে না। এছাড়া ইউসিবির শাখায় চার্জ ছাড়াই অনলাইন সেবা প্রদান করা হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, এক ব্যাংকের কার্ড দিয়ে অন্য ব্যাংকের এটিএম বুথ ব্যবহার করে টাকা তুললে প্রতিবার লেনদেনের জন্য গ্রাহককে (এটিএম কার্ডধারী) ভ্যাটসহ সর্বোচ্চ ১৫ টাকা করে দিতে হয়। আর পাঁচ টাকা দেয় কার্ড ইস্যুকারী ব্যাংক। আর গ্রাহক যদি তার ব্যাংক হিসাবের সংক্ষিপ্ত বিবরণী বা স্থিতি নিতে চান তার জন্য ভ্যাটসহ অতিরিক্ত আরও পাঁচ টাকা চার্জ কাটা হয়।

জানতে চাইলে শফিকুল ইসলাম নামের এক গ্রাহক জানান, অত্যন্ত ভালো পদক্ষেপ নিয়েছে ইউসিবি। এটা সব ব্যাংকের করা উচিত।

দেশব্যাপী সব ব্যাংকের নেটওয়ার্কে এটিএম চার্জ ফ্রি করার প্রচারণা চালাচ্ছে প্রথম প্রজন্মের এবি ব্যাংকও। করোনাভাইরাসের মহামারী পরিস্থিতিতে এ উদ্যোগ নিয়েছে ব্যাংকটি। এছাড়া আমানত সংগ্রহে অভিনব পদ্ধতি অবলম্বন করছে এবি ব্যাংক। কেউ আমানত রাখতে চাইলে তার অফিস বা বাসা থেকে ব্যাংকের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় টাকা নিয়ে আসবে। এ পদ্ধতিতে সর্বনিু ১ লাখ থেকে তার ওপরে যে কোনো অঙ্কের টাকা জমা রাখতে পারবে।

এছাড়া সিটি ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক এবং এনআরবি ব্যাংকও উল্লেখিত সুবিধা দেয়ার কথা নিজ নিজ ফেসবুক পেজে প্রকাশ করেছে।

জানা গেছে, প্রয়োজনের তাগিদে এখন কার্ডভিত্তিক লেনদেন বাড়ছে। এক ব্যাংকের গ্রাহক অন্য ব্যাংকের এটিএম বুথ ব্যবহার করছেন আগের চেয়ে বেশি। কেনাকাটার বিল পরিশোধের ক্ষেত্রেও এক ব্যাংকের গ্রাহক আরেক ব্যাংকের পয়েন্ট অব সেলস বা পস ব্যবহার করছেন। আন্তঃব্যাংক ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবা ব্যবহার করেও লেনদেন করছেন অনেকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এনপিএসবির আওতায় রয়েছে ৫১টি ব্যাংকের এটিএম বুথ। আর পসে সংযুক্ত রয়েছে ৫০টি ব্যাংক। এছাড়া আন্তঃব্যাংক ইন্টারনেট ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ২১টি ব্যাংকের মধ্যে লেনদেন করা যায়। সারা দেশে ব্যাংকগুলোর এটিএম বুথ রয়েছে ১০ হাজার ৭২২টি। আর পস টার্মিনাল রয়েছে প্রায় ৫৩ হাজার। সব ব্যাংকের এক কোটি ৫৮ লাখ ডেবিট কার্ড, ১২ লাখ ক্রেডিট কার্ড ও ২ লাখ ৭৭ হাজার প্রিপেইড কার্ড রয়েছে।

এদিকে বিশ্বব্যাপী মাহামারী করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে অনলাইনে লেনদেন উৎসাহিত করতে বিশেষ ছাড় ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ও ওষুধ ক্রয়ে কোনো ধরনের ফি না কাটার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি (পি-টু-পি) লেনদেনে (যে কোনো চ্যানেলে) এ নির্দেশনা মানতে হবে। একই সঙ্গে লেনদেনের সীমা ৭৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে দুই লাখ করা হয়েছে। এছাড়া দৈনিক এক হাজার টাকা ক্যাশ আউট সম্পূর্ণ চার্জবিহীন রাখতে বলা হয়েছে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply