শরীয়তপুরে ৩ প্রবাসীকে অর্থদণ্ড; মূল্য বেশি নেয়ায় ১৫ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

|

কাজী মনিরুজ্জামান, শরীয়তপুর:
হোম কোয়ারেন্টাইন না মানায় শরীয়তপুরে ৩ জন প্রবাসীকে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মূল্য তালিকার চেয়ে বেশি দাম নেয়ায় ১৫টি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে ভ্রাম্যমান আদালত জরিমানা করেছেন। জেলা আওয়ামীলীগের উদ্যোগে সচেতনতামূলক মাইকিং করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার কনেশ্বর গ্রামের প্রবাসী সেলিম ঢালিকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সরকারের নির্দেশনা অমান্য করায় ডামুড্যা উপজেলার সহকারী ভূমি কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মামুন শুক্রবার ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে তাকে অর্থদণ্ড
প্রদান করেন।

ভেদরগঞ্জ উপজেলার ইকরকান্দি গ্রামের মালয়শিয়া প্রবাসী আব্দুল মতিন মাদবরকে ৫ হাজার টাকা এবং নারায়নপুর ইউনিয়নের দুবাই প্রবাসী মোশারফর হোসেনকে ২০ হাজার টাকা জরিমান করেছেন ভেদরগঞ্জের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শংকর চন্দ্র বৈদ্য। এছাড়া ওই তিন জন প্রবাসীর হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা হয়েছেঅ।

শীবচরের ন্যায় শরীয়তপুরও লকডাউনের আওতায়া আনা হবে এমন গুজবে জেলা জুড়েই বিপণিগুলোতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন মানুষ। এ সুযোগে বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে পণ্যের দাম। চলছে প্রশাসনের অভিযানও। শুক্রবার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ১৫টি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে ২ লাখ ৯৭ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জেলার গোসাইরহাট উপজেলার দাসের জঙ্গল বাজারে অভিযান চালিয়ে ৫টি আড়ৎকে ৩০ হাজার টাকা করে মোট ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আলমগীর হোসেন।

ডামুড্যা উপজেলা বাজারে অভিযান পরিচালনা করে ২টি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে ১৫ হাজার টাকা জরিমান করেন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মামুন। ভেদরগঞ্জ উপজেলা বাজারে ১টি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে ১৭ হাজার টাকা জরিমানা করেন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শংকর চন্দ্র বৈদ্য, সদর উপজেলায় ৪ টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৪ হাজার ৫শ টাকা জরিমান করনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহাবুর রহমান শেখ, নড়িয়া উপজেলার ৩ টি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে ৫১ হাজার টাকা জরিমান করেন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল।

এছাড়া জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কর্মকর্তা সুজন কাজী নেতৃত্বে নড়িয়া উপজেলা অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় ৮টি প্রতিষ্ঠানকে ১৬ হাজার টাকা জরিমান করা হয়।

আংগারিয়া বাজারের ব্যবসায়ী বলেন, এ জেলায় প্রবাসীর সংখ্যা বেশি থাকায় বাইরে থেকে পণ্য নিয়ে আসতে চায় না। তাই কিছুটা দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। পণ্যের সংকট নেই সব ধরনের পণ্যই পর্যাপ্ত রয়েছে। অযথা মানুষ বেশি বেশি কেনাকাটা করছেন।

জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন, গুজব ছড়িয়ে পণ্যের দাম বৃদ্ধি করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যারা এমন কাজ করছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আর যেসব প্রবাসী শরীয়তপুর এসেছেন তাদের ১৪ দিন হোম কোয়ারেনটাইন বাধ্যতামূলক। কেউ এটা অমান্য করলেই “ সংক্রামক রোগ নিরোধ” আইনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সবাইকে আইন মেনে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছে জেলা প্রশাসক।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় এখনও অসচেতনভাবেই চলছে শরীয়তপুরের মানুষ। জনসমাগম হয় এমন স্থানে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে। হ্যান্ডশেক, কোলাকুলি আবার সেই হাতেই খাওয়া দাওয়া করছেন তারা। এসবের ওপর প্রচারণা থাকলেও এমন ওপেন চিত্র করোনা ঝুঁকিতে থাকা শরীয়তপুর জুড়েই। এমন চিত্র সবেচেয়ে বেশি দেখা গেছে নড়িয়া উপজেলায়। ইতালি প্রবাসী অধ্যুষিত এই উপজেলার মানুষ এখনও অসচেতন। গেল তিন দিনে নড়িয়ায় প্রবাসী এসেছেন ১ হাজার ৮৩ জন। তাই করোনার বড় ঝুঁকিতে রয়েছে নড়িয়া।

করোনা নিয়ে স্থানীয় সাংসদ ও পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম বলেন, শুধু আমি নই স্বাস্থ্য মন্ত্রী, মন্ত্রীপরিষদ এমনকি প্রধানমন্ত্রী নড়িয়া সম্পর্কে খোঁজ খবর রাখছেন। কারণ সবেচেয়ে বেশি ইতালি প্রবাসী রয়েছে নড়িয়ায়। তাই করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের উপকরণসহ এটা সনাক্তের কীট নড়িয়া তথা শরীয়তপুরে দ্রুত সময়ের মধ্যে চলে আসবে। সবাইকে নিয়ম মেনে শিষ্টাচার অনুযায়ী চলার পরামর্শ দিয়েছেন মন্ত্রী।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত বিভিন্ন দেশ থেকে শরীয়তপুরে ফিরেছেন এমন ৪০১ জন প্রবাসীর তথ্য পেয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এদের মধ্যে ২৯৭ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। আজ নতুন করে যুক্ত হয়েছেন ৩৭ এবং ২৩ জনের হোম কোয়ারেন্টাইন শেষ হয়েছে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply