বঙ্গবন্ধু মানে একজন ন্যায়, সাম্য ও মর্যাদার রক্ষাকর্তা: নরেন্দ্র মোদি

|

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

মঙ্গলবার রাতে নয়াদিল্লি প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন থেকে ভিডিও বার্তায় এ অভিনন্দন জানান মোদি।

ভাষণের শুরুতেই নমস্কার দিয়ে নরেন্দ্র মোদি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সমগ্র বাংলাদেশকে ১৩০ কোটি ভারতীয় ভাই-বন্ধুদের পক্ষ থেকে অনেক অনেক অভিনন্দন ও শুভ কামনা জানান।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বক্তব্য হুবহু তুলে ধরা হল-

নমস্কার!

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সমগ্র বাংলাদেশকে আমাদের ১৩০ কোটি ভারতীয় ভাই-বন্ধুদের পক্ষ থেকে অনেক অনেক অভিনন্দন ও শুভ কামনা।

বন্ধুগণ, শেখ হাসিনাজী আমাকে ব্যক্তিগতভাবে এই ঐতিহাসিক সমারোহে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কিন্তু করোনাভাইরাসজনিত কারণে আমার পক্ষে অংশগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। পরে শেখ হাসিনাজী নিজেই একটি বিকল্প প্রস্তাব দেন এবং সে কারণে আমি এই ভিডিওর মাধ্যমে আপনার সঙ্গে সংযুক্ত হচ্ছি।

বন্ধুগণ,

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গত শতাব্দীর মহান ব্যক্তিত্বদের মধ্যে অন্যতম। তার সমগ্র জীবন আমাদের সবার জন্য অনেক বড় প্রেরণা। বঙ্গবন্ধু মানে—

একজন সাহসী নেতা

একজন দৃঢ়চেতা মানুষ

একজন ঋষিতুল্য শান্তিদূত

একজন ন্যায়, সাম্য ও মর্যাদার রক্ষাকর্তা

একজন পাশবিকতাবিরোধী এবং যে কোনো জোরজুলুমের বিরুদ্ধে একজন ঢাল।
তার এই গুণাবলী সে সময় লক্ষ লক্ষ তরুণকে বাংলাদেশের মুক্তির জন্য সমস্ত প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে নতুন শক্তি দিয়েছিল। আজ আমার খুব ভালো লাগে, যখন দেখি যে বাংলাদেশের মানুষ তাদের প্রিয় দেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলায়’ রূপান্তরিত করার জন্য দিন-রাত কাজ করে চলেছেন।

বন্ধুগণ, বঙ্গবন্ধুর জীবন একবিংশ শতাব্দীর বিশ্বের জন্য এক মহান বার্তা। আমরা সবাই ভালো করে জানি, কীভাবে একটি নিপীড়ক ও দমনকারী সরকার সমস্ত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ উপেক্ষা করে ‘বাংলা ভূমির’ ওপর অবিচারের রাজত্ব চালিয়ে জনগণের সর্বনাশ করেছিল। সে সময় যে ধ্বংসলীলা ও গণহত্যা হয়েছিল, সেই অবস্থা থেকে বাংলাদেশকে বের করে এনে একটি ইতিবাচক ও প্রগতিশীল সমাজে পরিণত করার জন্য তিনি তার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত উৎসর্গ করেছিলেন।

তিনি বিশ্বাস করতেন যে, ঘৃণা এবং নেতিবাচকতা কখনই কোনো দেশের উন্নয়নের ভিত্তি হতে পারে না। কিন্তু তার এই ধারণা এবং প্রচেষ্টা কিছু লোক পছন্দ করেনি এবং আমাদের কাছ থেকে বঙ্গবন্ধুকে কেড়ে নেয়া হয়েছিল। বাংলাদেশ এবং আমরা সবাই ভাগ্যবান যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা ঈশ্বরের আশীর্বাদে রক্ষা পেয়েছিলেন। নয়তো সহিংসতা এবং ঘৃণার সমর্থকরা চেষ্টার কোনো কমতি রাখেনি।

আতংক ও সহিংসতাকে রাজনীতি এবং কূটনীতির হাতিয়ার করে তোলা কীভাবে একটি সমাজ ও জাতিকে ধ্বংস করে দেয় তা আমরা দেখতে পাচ্ছি। সন্ত্রাস ও সহিংসতার সমর্থকরা আজ কোথায়, কীভাবে আছে এবং বাংলাদেশ কোনো উচ্চতায় আছে এটাও বিশ্ববাসী দেখতে পাচ্ছে।

বন্ধুগণ, বঙ্গবন্ধুর অনুপ্রেরণায় এবং শেখ হাসিনাজীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ যেভাবে অন্তর্ভুক্তিকরণ এবং উন্নয়নমুখী নীতিমালা অনুসরণ করে এগিয়ে চলছে তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। অর্থনীতি থেকে শুরু করে অন্যান্য সামাজিক সূচক, যেমন- ক্রীড়াক্ষেত্র কিংবা দক্ষতা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারী ক্ষমতায়ন, মাইক্রো ফিনান্সের মতো অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব উন্নতি করেছে।

আমি আনন্দিত যে, গত ৫-৬ বছরে ভারত এবং বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটি সোনালী অধ্যায় রচনা করেছে এবং আমাদের অংশীদারিত্বকে নতুন মাত্রা এবং দিশা দিয়েছে। উভয় দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান আস্থার কারণেই আমরা স্থল ও সমুদ্রসীমানার মতো জটিল সমস্যাগুলো সহজে সমাধান করতে সক্ষম হয়েছি।

আজকে, বাংলাদেশ কেবল দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার নয়, উন্নয়ন অংশীদারও। ভারতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ বাড়িঘর এবং কারখানা আলোকিত করছে।

বন্ধুরা, ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইনের মাধ্যমে আমাদের সম্পর্কে একটি নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। সড়ক, রেল, বিমান, জলপথ বা ইন্টারনেট এমন অনেক ক্ষেত্রে আমাদের সহযোগিতা দুই দেশের মানুষকে আরও বেশি সংযুক্ত করছে।

বন্ধুগণ, আমাদের যৌথ ঐতিহ্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, লালন শাহ, জীবনানন্দ দাশ এবং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মতো মনীষীরা। বঙ্গবন্ধুর উত্তরাধিকার ও অনুপ্রেরণা আমাদের এই ঐতিহ্যকে আরও বিস্তৃত করেছে। তার আদর্শ ও মূল্যবোধের সঙ্গে ভারত সর্বদা সংযুক্ত ছিল। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার গভীর সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে এই এই অভিন্ন ঐতিহ্যের ভিত্তিতে। আমাদের এই ঐতিহ্য, আত্মিক বন্ধন, বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথ, এই দশকেও দুই দেশের অংশীদারিত্ব, অগ্রগতি এবং সমৃদ্ধির এক শক্তিশালী ভিত্তি।

আগামী বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ হবে এবং তার পরের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে ভারতের স্বাধীনতার ৭৫তম বার্ষিকী। আমার বিশ্বাস যে, এই দু’টি মাইলফলক কেবল ভারত এবং বাংলাদেশের উন্নয়নকেই নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে না, দু’দেশের বন্ধনকেও জোরদার করবে।

আবারও সমগ্র বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের শুভেচ্ছা জানাই।

জয় বাংলা, জয় হিন্দ।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply