আমের মুুকুলে মৌ মৌ গন্ধ ছড়াচ্ছে চুয়াডাঙ্গা জেলাজুড়ে

|

আরিফুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গা
শীতের জড়তা কাটিয়ে আম গাছেও লেগেছে ফাগুনের ছোঁয়া। বেশ জোরেসোরেই মনে করিয়ে দিচ্ছে ঋতুরাজ বসন্ত এসে গেছে। গাছে গাছে মুকুলে ভরে গেছে চুয়াডাঙ্গার আম বাগানগুলো। মুকুলের মিষ্টি সুবাসে মোহময়ী চারদিক। চাষীরাও ব্যস্ত গাছের পরিচর্যায়। কোনভাবেই যাতে মুকুলে পোকামাকড় আঘাত আনতে না পারে তার জন্য গাছে গাছে দেওয়া হচ্ছে স্প্রে।

এবার আম চাষে কৃষি বিভাগের লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। তারা বলছেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গত বছরের মত এবারও বাম্পার ফলন হবে আমের।

ঋতু ও প্রকৃতির মধ্যে দারুণ বোঝাপড়াটা প্রকাশ পায় এই সময়েই। প্রকৃতির নতুন অবয়ব ও ঋতুর পালাক্রম পরিবর্তন এক অন্যরকম মিলন। এই মিলনে যেন চুয়াডাঙ্গার প্রকৃতি সেজেছে তার নিজস্ব মহিমায়। তাল মিলিয়ে বাদ যায়নি আমের গাছগুলোও। নিজেকে উজাড় করে বিলিয়ে দিচ্ছে তার সৌন্দর্য। ঘ্রাণে ঘ্রাণে বিমহিত করছে চারপাশ। যার প্রমাণ দিচ্ছে চুয়াডাঙ্গার আমবাগানগুলো।

দেখা যায় জেলার চারটি উপজেলায় আম গাছগুলো ভেঙে পড়ছে মুকুলের ভারে। বাড়ির আঙিনা থেকে বিস্তৃণ বাগান পর্যন্ত সব জায়গায় শোভা ছড়াচ্ছে আমের মুকুল। মৌ মৌ গন্ধে ভরিয়ে তুলছে চারিদিক। সেইসাথে বাধভাঙা মুকুলে খুশি আমচাষীরাও। মাঘের শেষভাগ থেকেই আম বাগান পরিচর্যা করতে ব্যস্ত রয়েছে কৃষকরা। এখন চলছে মুকুল ধরে রাখতে শেষ মুহুর্তের পরিচর্যা। আর কিছুদিন পরই দেখা মিলবে গুটি আমের।

কৃষকরা বলছেন, এবার বাগানে পর্যাপ্ত পরিমাণ আমের মুকুল এসেছে। অপেক্ষা শুধু আশানুরুপ ফলনের। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সর্বোচ্চ ফলন সম্ভব হবে আশাবাদ তাদের। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেলগাছী গ্রামের আম চাষী সুফিয়ান মন্ডল জানান, মাঘের শেষভাগ থেকেই তারা আম বাগান পরিচর্যা করতে ব্যস্ত রয়েছে। এবার তার বাগানে পর্যাপ্ত পরিমাণ আমের মুকুল এসেছে। অপেক্ষা শুধু আশানুরুপ ফলনের।

দীননাথপুর গ্রামের আম বাগান মালিক শমসের মালিথা জানান, এ বছর জেলার প্রতিটি এলাকায় প্রচুর পরিমাণ আমের মুকুল এসেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সর্বোচ্চ ফলন সম্ভব হবে। এজন্য তারাও পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র বলছে, চুয়াডাঙ্গার মাটি ও আবহাওয়া আম চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এ জেলাতে প্রতি বছর হিমসাগর, ফজলি, হাড়িভাঙা, ন্যংড়াসহ সব ধরণের আমই উৎপাদন হয়ে থাকে। মূলত রাজশাহী চাপাই জেলার পর এ জেলার আমের সুখ্যাতি আছে দেশজুড়েই। প্রতি বছর এ জেলার আম নিজস্ব চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকা, চিটাগাংসহ দেশের বড় বড় জেলাগুলোর চাহিদা পুরণ করা হয়। দেশের গন্ডি পেরিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও রফতানি হয়ে থাকে চুয়াডাঙ্গার আম।

কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাবের) চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি এ্যাড মানিক আকবরের মতে, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দ্রুত আম বাজারজাত করতে ক্ষতিকর কীটনাশকসহ রাসায়নিক দ্রব্য মেশানের প্রবণতা থাকে সব সময়। তার পরামর্শ এখন থেকে এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দরকার স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারী।

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তালহা জুবাইর মাশরুর জানান, রাজশাহী অঞ্চলের পরেই এ অঞ্চলের আম সুস্বাদু ও প্রসিদ্ধ। বিশেষ করে এখানকার হিমসাগর আমের বেশ সুনাম রয়েছে দেশজুড়েই। সেটি ধরে রাখতে এবারও বিষমুক্ত নিরাপদ আম উৎপাদনে কাজ করছে কৃষি বিভাগ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবু হাসান বলেন, গত বছর জেলাতে ১৮শ ৭৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছিল। চলতি বছর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে ১৯শ ৭৫ হেক্টর। লক্ষমাত্রা অতিক্রম করে আরও বেশি জমিতে আম চাষ হচ্ছে। মূলত আম চাষ লাভজনক হওয়াতে জেলার কৃষকরা ঝুঁকছেন আম চাষে।

এ বছর বিষ ও ফরমালিন মুক্ত আম উৎপাদনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার। তিনি জানিয়েছেন খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে। সেই কমিটি মাঠ পযায়ে তদারকি করবে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply