তামিমের রেকর্ডের দিনে বাংলাদেশের রেকর্ড ভাঙা ৩২২

|

রেকর্ড গড়ে সমালোচনার জবাব দিলেন তামিম ইকবাল। আর তাতে মাত্র এক ম্যাচ আগেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ দলীয় রানের রেকর্ড ভেঙেছে টাইগাররা। এই ম্যাচে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৮ উইকেটে ৩২২ রান। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে গড়া তার সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের রেকর্ড ভেঙে ১৫৮ রান করেছেন তামিম। আগের রেকর্ডটি ছিল ১৫৪ রানের।

মঙ্গলবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। প্রথম ম্যাচেও টস জেতেন তিনি। প্রথম ওয়ানডেতে দাপুটে জয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে টাইগাররা। দ্বিতীয় ওয়ানডে জিতে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিততে চান তারা। সেই লক্ষ্যে শুরুটা দারুণ করেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। উদ্বোধনী জুটিতে ৩৮ রান তোলেন তারা।

এ পথে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দেশের হয়ে ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি রান করার রেকর্ড গড়েন তামিম। টপকে যান বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে। নিষেধাজ্ঞার কারণে আপাতত খেলার বাইরে তিনি। সাকিব জিম্বাবুইয়ানদের বিপক্ষে ৪২ ইনিংসে করেন ১৪০৪। ৪০ ইনিংসে তাকে ছাড়ান তামিম।
মঙ্গলবার ১৩৯৮ রান নিয়ে খেলা শুরু করেন তিনি।

তামিমের কীর্তির পরই দুর্ভাগ্যক্রমে রানআউট হয়ে ফেরেন লিটন। তামিমের ড্রাইভ ঠিকমতো ফেরাতে পারেননি বোলার কার্ল মুম্বা। তার হাতে লেগে বল আঘাত হানে স্টাম্পে। বেশ কিছুটা এগিয়ে থাকা লিটন চেষ্টা করেও সময়মতো ক্রিজে ফিরতে পারেননি। প্রথম ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান এদিন দুই অংকের ঘরও স্পর্শ করতে পারেননি (৯)। সেই রেশ না কাটতেই তামিমের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির শিকার হয়ে রানআউটে কাটা পড়েন নাজমুল হোসেন শান্ত।

তবে স্বচ্ছন্দে খেলে যান তামিম। ব্যাটে ছোটান স্ট্রোকের ফুলঝুরি। ছন্দময় ব্যাটিয়ে ফিফটি তুলে নেন তিনি। এ নিয়ে ৮ মাস এবং ৭ ম্যাচ পর হাফসেঞ্চুরি পান তিনি। বাঁহাতি ওপেনার সবশেষ অর্ধশত করেন ২০১৯ সালের ২০ জুন, নটিংহ্যামে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপের ম্যাচে।

এর আগে খানিক ব্যবধানে দ্রুত ২ উইকেট হারিয়ে একটু চাপে পড়ে বাংলাদেশ। সেই অবস্থায় ক্রিজে এসে দলের হাল ধরেন নির্ভরতার প্রতীক মুশফিকুর রহিম। তামিমকে যোগ্য সহযোদ্ধার সমর্থন দেন তিনি। এক পর্যায়ে দারুণ মেলবন্ধন গড়ে ওঠে দুজনের মধ্যে। উভয়ই রানের নহর ছোটান। তাতে হু হু করে বাড়ে দলীয় রান। কিন্তু হঠাৎ ছন্দপতন। অপ্রয়োজনীয় শট খেলতে গিয়ে উইসলি মাধেভেরের শিকার হয়ে ফেরেন মুশি। ফেরার আগে অবশ্য ক্যারিয়ারে ৩৮তম হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। ৫০ বলে ৬ চারে ৫৫ রান করেন মিস্টার ডিপেন্ডবল।

তবে একপ্রান্ত আগলে রাখেন তামিম। লম্বা সময় পর সূচনা থেকেই সাবলীল ব্যাটিং করেন তিনি। ছোটান স্ট্রোকের ফুলঝুরি। খেলেন সব নান্দনিক শট। অনুমিতভাবেই ইতিহাস গড়েন ড্যাশিং ওপেনার। স্পর্শ করেন বহুল প্রত্যাশিত ও কাঙ্ক্ষিত মাইলফলক।

প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ওয়ানডেতে ৭০০০ রানের অভিজাত ক্লাবে পৌঁছান তামিম। ২০৬ ম্যাচে এ কীর্তি গড়েন তিনি। বাংলাদেশের হয়ে দ্রুততম ৩, ৫ ও ৬ হাজার রানের মাইলস্টোনও স্পর্শ করেন দেশসেরা ওপেনার। সমান ম্যাচ খেলে ৬৩২৩ রান নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। পরের স্থানে রয়েছেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল মুশফিকুর রহিম। তার রান ৬১৭৪।

এখানেই থেমে থাকেননি তামিম। আজ যে তার জবাব দেয়ার দিন। ধীরে ধীরে সেঞ্চুরির পথে এগিয়ে যান তিনি। ১০৬ বলে তুলে নেন ক্যারিয়ারের ১২তম তিন অংক ছোঁয়া ইনিংস। ১৯ মাস ও ২৩ ম্যাচ পর তিন অংকের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করেন তিনি।

তামিমকে যথার্থ সঙ্গ দেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু আচমকা থেমে যান মাহমুদউল্লাহ। ফিফটি থেকে মাত্র ৯ রান দূরে থাকতে টিসুমার বলে তার বাউন্ডারি পার হতে চলা শট অসাধারণ দক্ষতায় ক্যাচ বানান মাধেভেরে। এতে ভাঙে ১০২ বলে ১০৬ রানের জুটি।

রিয়াদ ফিরে গেলেও ব্যাটকে তলোয়ার বানিয়ে জিম্বাবুয়ে বোলারদের কচুকাটা করেন তামিম। খেলেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় দেড়শ ছোঁয়া ইনিংস। কার্ল মুম্বার বলে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ আউট হয়ে ফেরার পথে করেন ১৩৬ বলে ১৫৮ রান। ২০ চার ও ৩ ছক্কায় এ মহাকাব্যিক ইনিংস সাজান তিনি। এটিই তার ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড এটি। তামিমের পর একে একে বিদায় নেন মিরাজ, মাশরাফী, তাইজুলও। কিন্তু অপর প্রান্তে থাকা মোহাম্মদ মিথুনের ১৮ বলে ৩২ রানের ক্যামিওতে ঠিকই আগের ম্যাচের রেকর্ড ভেঙেছে টাইগাররা। ৩টি চারের পাশাপাশি একটি অনবদ্য ছক্কা হাকান মিথুন।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply