বছরে রেমিটেন্স বেড়েছে ১০ শতাংশ

|

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের ওপর ভর করে রিজার্ভ বেড়েই চলেছে। এর ফলে গত আড়াই বছর পর বাংলাদেশ ব্যাংকে বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডার ফের বেড়ে ৩৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। প্রতি মাসে ৪ বিলিয়ন ডলার আমদানি খরচ হিসেবে এ রিজার্ভ দিয়ে ৮ মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। রোববার প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারি মাসে প্রবাসীরা প্রায় ১৪৫ কোটি ২০ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১০ শতাংশ বেশি। তবে চলতি বছরের জানুয়ারির চেয়ে ১১ শতাংশ কম। সব মিলে চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) দেশে প্রায় ১ হাজার ২৫০ কোটি ডলারের রেমিটেন্স এসেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২০ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, নগদ প্রণোদনার পাশাপাশি হুন্ডি প্রতিরোধে বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা পদক্ষেপ ও টাকার বিপরীতে ডলার কিছুটা শক্তিশালী হওয়ায় রেমিটেন্সের ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত রয়েছে। তবে জানুয়ারির তুলনায় ফেব্রুয়ারি মাসে রেমিটেন্স কমার কারণ হিসেবে তারা বলছেন, প্রতি বছরই ফেব্রুয়ারি মাসে রেমিটেন্স প্রবাহ কমে যায়। এর কারণ অন্যান্য মাসের তুলনায় ফেব্রুয়ারি মাসের দিনের সংখ্যা কম। এবারের ফেব্রুয়ারি মাস ছিল ২৯ দিনের। এর ওপর শেষ দুই দিন সরকারি ছুটি ছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, নগদ প্রণোদনা দেয়ার খবরে চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে বেশি বেশি রেমিটেন্স পাঠিয়ে আসছেন প্রবাসীরা। চলতি অর্থবছরের প্রতি মাসেই আগের অর্থবছরের একই মাসের চেয়ে অধিক হারে রেমিটেন্স বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে ১৫৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠান প্রবাসীরা; যা গত অর্থবছরের জুলাই মাসে ছিল ১৩১ কোটি ৮১ লাখ ডলার। এরপর গত আগস্টে ১৪৪ কোটি ৪৭ লাখ ডলারের রেমিটেন্স আসে; যা গত অর্থবছরের আগস্টে ছিল ১৪১ কোটি ১০ লাখ ডলার। সেপ্টেম্বরে আসে ১৪৭ কোটি ৬৯ লাখ ডলার, যা গত অর্থবছরের সেপ্টেম্বরে ছিল ১১৩ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। অক্টোবর মাসে আসে ১৬৩ কোটি ৯৬ লাখ ডলার, গত অর্থবছরের অক্টোবর মাসে এসেছিল ১১৩ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। নভেম্বর মাসে রেমিটেন্স এসেছে ১৫৫ কোটি ৫২ লাখ ডলার। এটি গত অর্থবছরের একই মাসের চেয়ে প্রায় ৩২ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের নভেম্বরে রেমিটেন্স এসেছিল ১১৮ কোটি ডলার। আর গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ১৬৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার রেমিটেন্স আসে, যা ছিল এক মাসের হিসাবে বাংলাদেশে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে দেশে রেমিটেন্স এসেছিল ১২০ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। এছাড়া চলতি বছরের জানুয়ারিতে ১৬৩ কোটি ৮৫ লাখ ডলারের রেমিটেন্স এসেছে, যা গত বছরের জানুয়ারির চেয়ে ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেশি ছিল। তবে এখন পর্যন্ত একক মাসে সর্বোচ্চ ১৭৪ কোটি ৮২ লাখ ডলার রেমিটেন্স আসে ২০১৯ সালের মে মাসে। সব মিলে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) এক হাজার ২৪৯ কোটি ৮৬ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২০ দশমিক ০৫ শতাংশ বেশি। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে রেমিটেন্সে প্রণোদনা দেয়ার ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে এজন্য ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গত ৬ আগস্টে বাংলাদেশ ব্যাংক এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা প্রকাশ করে। আর ২ অক্টোবর থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স পাঠালে তাৎক্ষণিক ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা কার্যকর হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, একক অর্থবছরে দেশে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬৪১ কোটি ৯৬ লাখ ডলারের রেমিটেন্স আসে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে। এর আগের অর্থবছরে রেমিটেন্স এসেছিল ১ হাজার ৪৯৮ কোটি ১৬ লাখ ডলার।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply