শাক-সবজি রফতানি বেড়েছে শতভাগ

|

শাক-সবজি রফতানিতে নীরব বিপ্লব ঘটতে যাচ্ছে দেশে। প্রতিনিয়ত এ খাতে আয় বাড়ছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে শাক-সবজি রফতানিতে লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ১৩ কোটি মার্কিন ডলার। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরের সাত মাসে (জুলাই থেকে জানুয়ারি) রফতানি আয়ের লক্ষ্য ছিল ৭ কোটি ৫২ লাখ ডলার। কিন্তু এ সময় আয় এসেছে ১৩ কোটি ২৮ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেশি হয়েছে ৭৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই সময় আয় হয়েছিল ৬ কোটি ৭৮ লাখ ডলার। সে হিসাবে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় আয় বেশি হয়েছে ১০৫ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের সাত মাসেই শাক-সবজি রফতানি গত বছরের চেয়ে শতভাগ বেশি হয়েছে।

ইপিবি সূত্রে জানা গেছে, দেশ থেকে আলু, ধনিয়া পাতা, লাউপাতা, লাউ শাক, বরবটি, কাকরোল, করলা, ঝিঙে, লালশাক, বেগুন, টমেটো, পটোল, কচু, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, লাউ, পেঁপে, কলা, শসা, শিম, বাঁধা কপি, মরিচ, মুলাসহ অর্ধশতাধিক সবজি রফতানি হয়। এসব পণ্য সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, লন্ডন, কানাডা, দুবাই, ইতালিসহ ৫০টিরও বেশি দেশে রফতানি হয়। এ খাতে আন্তর্জাতিক বাজার আরও বাড়াতে কাজ করছে ইপিবি।

এক সময়ে দেশের কিছু নির্দিষ্ট এলাকা ও অঞ্চলেই সবজির চাষাবাদ হতো। মধ্য ও উত্তরাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যশোরেই শুধু সবজির চাষ করতেন কৃষকরা। অথচ বর্তমানে দেশের সব এলাকায় সারা বছরেই সবজির চাষ হচ্ছে। এখন ১ কোটি ৬২ লাখ কৃষক পরিবার সবজি চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছে। সারা দেশে ৬০ ধরনের ও ২০০ জাতের সবজি উৎপাদিত হচ্ছে। জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।

বাংলাদেশি পানে ব্যাকটেরিয়া শনাক্ত হওয়ায় ২০১৩ সালে তা রফতানি নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এছাড়া পোকামাকড় ও রোগবালাই এবং অতিমাত্রায় কীটনাশক ব্যবহারের কারণে বাংলাদেশ থেকে সবজি রফতানির ওপর বেশ কয়েক বছর ধরে নন-কমপ্লায়েন্স নোটিফিকেশন জারি করে ইইউ। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর আবারও ইউরোপের বাজারে সবজি পাঠানো শুরু করেছেন দেশের রফতানিকারকরা।

তারা বলছেন, দেশ থেকে সবজি রফতানির পরিমাণ বাড়াতে হলে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে বিশেষভাবে মনোযোগী হতে হবে। কীটনাশকমুক্ত সবজি উৎপাদনের মাধ্যমেই বিদ্যমান সংকট কাটানো সম্ভব হচ্ছে। এর ফলে ইউরোপীয় দেশগুলো এখন বাংলাদেশ থেকে সবজি আমদানিতে ঝুঁকেছেন নতুনভাবে। সবজি রফতানির ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা উচ্চ হারের বিমান ভাড়া। সবজি রফতানি বাড়াতে বিমান ভাড়া সহনশীল পর্যায়ে রাখতে হবে। প্রচলিত কৃষির বাইরে বিদেশি জাতের বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি, ফলমূল চাষ করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। এ কারণে সম্প্রতি একনেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সবজি রফতানির জন্য দুটি কার্গো বিমান কিনতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সবজি বিভিন্ন দেশে রফাতানি হচ্ছে। এখন কার্গো বিমান কেনার সময় এসেছে।

মৃত্তিকা সম্পদ ইন্সটিটিউটের পরিচালক বিধান কুমার ভাণ্ডার বলেন, মাটির মধ্যে যে জৈব সার আছে তা কাজে লাগিয়ে সবজি উৎপাদন করা যায়। সেক্ষেত্রে কোনো রাসায়নিক বা বিষ ব্যবহার করতে হয় না। আর এই পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে এখন বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন শুরু হয়েছে। এ পদ্ধতি আগামী দিনে আমরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মাধ্যমে আরও বেশি কৃষকের কাছে নিয়ে যেতে চাই।

ইন্সটিটিউটের খুলনা জেলা প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শচীন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ অনেক সহজ। তবে মাটির জৈবিক উর্বরতার দিকে লক্ষ্য দিতে হবে। তাই আমরা কৃষককে বলেছি, জমির ওপরের মাটি যেন কোনোভাবে নিচে পড়ে না যায়। কারণ মাটির ওপরেই সব আল্লাহর সৃষ্ট সার বিদ্যমান থাকে। আর এই পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে চাষাবাদ করলে কৃষকের খরচও কমে আসবে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply