আফগান যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের কত খরচ হয়েছে?

|

দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে চলা আফগান যুদ্ধের অবসানে তালেবানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেয়ার বিষয়ে কাতারের মধ্যস্থতায় শনিবার এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

চুক্তি অনুযায়ী ১৪ মাসের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে নিজেদের সেনা সরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে রাজি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো জোট।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রায়ই বলেন যে, দীর্ঘদিন ধরে চলা যুদ্ধ শেষ করে মার্কিন সেনাদের ঘরে ফিরিয়ে আনতে আগ্রহী তিনি। ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে সহিংসতা বন্ধের ঘোষণা দেন।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ নেতারা ২০ সপ্তাহের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে ৫ হাজার ৪০০ সেনা সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি একটি পরিসংখ্যানে দেখিয়েছে যে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত আফগানিস্তানে কী পরিমাণ ব্যয় করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

২০১১ সাল থেকেই শান্তি চুক্তিতে আসার ব্যাপারে দোহায় বৈঠক করে আসছেন তালেবান নেতারা। ২০১৩ সালে দোহায় তালেবানের একটি কার্যালয়ও খোলা হয়। যদিও পরে সেটি বন্ধ হয়ে যায়।

২০১৮ সালের ডিসেম্বরে তালেবান নেতারা ঘোষণা দেন, শান্তি আনার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন তাঁরা। কিন্তু শুরু থেকেই আফগান সরকারের সঙ্গে বৈঠকে বসতে অনীহা জানিয়ে আসছিলেন তাঁরা। আফগান সরকারকে ‘যুক্তরাষ্ট্রের হাতের পুতুল’ বলেও অভিহিত করেন তালেবান নেতারা।

২০০১ সালে টুইন টাওয়ারে আত্মঘাতী হামলার পর আফগানিস্তানে সেনা মোতায়েন করে যুক্তরাষ্ট্র। প্রায় ১৯ বছর ধরে আফগানিস্তানে চলমান সহিংসতায় প্রায় আড়াই হাজার মার্কিন সেনা নিহত হন। এখনো আফগানিস্তানে প্রায় ১২ হাজার মার্কিন সেনা মোতায়েন আছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের হিসাব মতে, ২০০১ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আফগানিস্তানে মার্কিন সামরিক ব্যয় হয়েছে ৭৭৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

হিসাব বলছে, ২০১০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে দেশটিতে এক লাখ মার্কিন সেনা ছিল, যার কারণে বছরে যুদ্ধের ব্যয় ১০০ বিলিয়ন ডলার বেড়ে দাঁড়ায়।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের সৈন্যদের সরাসরি সামরিক অভিযান থেকে সরিয়ে আফগান বাহিনীকে প্রশিক্ষণে বেশি মনোনিবেশ করার পর ব্যয় বেশ কমে আসে।

২০১৬ থেকে ২০১৮ সালে বার্ষিক ব্যয় নেমে দাঁড়ায় ৪০ বিলিয়ন ডলার। ২০১৯ সালে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হিসাবে জানা যায়, এ বছর ব্যয় হয়েছে ৩৮ বিলিয়ন ডলার।

এছাড়া মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগ যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি এবং অন্য সরকারি সংস্থাগুলোর সাথে মিলে ৪৪ বিলিয়ন ডলার বিভিন্ন ধরণের পুননির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় করেছে।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী সব মিলিয়ে ২০০১ সালে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ৮২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হয়েছে।

ব্রাউন ইউনিভার্সিটির কষ্ট অব ওয়্যার বা যুদ্ধ প্রকল্পের ব্যয় প্রজেক্ট নামে এক স্বতন্ত্র গবেষণায় দাবি করা হয়, আফগান যুদ্ধে ব্যয়ের যে সরকারি হিসাব দেখানো হয়েছে তাতে যথেষ্ট কম দেখানো হয়েছে।

এতে বলা হয় যে, আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের জন্য কংগ্রেস এক ট্রিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ তহবিল অনুমোদন করেছে।

এই প্রকল্পের সহ-পরিচালক নেটা ক্রফোর্ড বলেন, এই ব্যয়ের মধ্যে যুদ্ধ ফেরত সেনাদের জন্য করা ব্যয়, যুদ্ধ সম্পর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য সরকারের বিভিন্ন বিভাগে যে অর্থ ব্যয় করা হয়েছে এবং সংঘর্ষে অর্থায়নের জন্য নেয়া ঋণের সুদকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

তিনি বলেন, সব কিছু যোগ করা হলে ব্যয় অন্তত দুই ট্রিলিয়ন ডলারে গিয়ে দাঁড়াবে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply