সামিরাকেই মাফ চাইতে হবে: শাবনূর

|

সামিরাকেই সরি বলতে হবে, মাফ চাইতে হবে বলে দাবি করেছেন অভিনেত্রী শাবনূর। নব্বইয়ের দশকের তুমুল জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেতা সালমান শাহর স্ত্রী ছিলেন সামিরা। এর আগে তিনি বলেন, কৃতকর্মের জন্য শাবনূরকে সরি বলতে হবে। সেটি এখন হোক কিংবা পরে– এই জীবনে কিংবা শেষ বিচারের দিনে।

জবাবে শাবনূর বলেন, আমি কেন সরি বলতে যাব। আমি কী করেছি যে সামিরা এ ধরনের কথা বলবে! এতটা ঔদ্ধত্যপূর্ণ কথা সামিরা কোনোভাবেই বলতে পারে না। এ ধরনের কথা বলার জন্য সামিরাকেই সরি বলতে হবে, মাফ চাইতে হবে।

সালমান শাহর মৃত্যুর প্রায় দুই দশক পর নতুন করে যেসব কথা উঠছে, তাতে বিরক্তির কথা জানিয়েছেন তার সহশিল্পী শাবনূর।

তিনি বলেন, শুনলাম ৫ সেপ্টেম্বর রাতে আমি সালমান শাহকে একাধিকবার ফোন করেছি। আমার ওপর রাগ করে ফোন ভেঙে ফেলেছে। আমাকে ঝাড়ি মেরেছে। বলেছে– শাবনূর, তুমি আর ফোন দিবা না। আমার উপহার দেয়া ফ্যান ভেঙে ফেলে। এত বছর তদন্তের পর এ ধরনের কথার মানে কী!

মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ঢালিউডের এক সময়কার সেরা নায়িকা শাবনূর বলেন, আমি যদি সালমানকে ফোন করে থাকি, নিশ্চয়ই কললিস্ট আছে। কথার রেকর্ডও আছে। তা হলে আমাকে শোনাক। তা হলেই তো সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে।

এই চিত্রনায়িকা আরও বলেন, সালমানের মা নীলা আন্টি ও স্ত্রী সামিরা সংবাদ সম্মেলন করে বলুক। তাদের স্বামী-স্ত্রী কী ঝগড়া হচ্ছে, তা তো আমার জানার কথা না। আমার দেখার বিষয়ও না।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে তুঙ্গস্পর্শী জনপ্রিয়তার মধ্যে ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ইস্কাটন রোডে নিজের বাসা থেকে সালমান শাহর (চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন) লাশ উদ্ধার করা হয়।

তখন ঘটনাটিকে আত্মহত্যা ধরে সেই সময় অপমৃত্যু মামলা হয়। তাতে আপত্তি জানায় সালমান শাহর পরিবার। ১৯৯৭ সালে সিআইডির তদন্ত প্রতিবেদনে ঘটনাটিকে ‘আত্মহত্যা’ উল্লেখ করা হয়। এর পর ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠানো হয়।

এর প্রায় ১২ বছর পর ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। এতেও সালমান শাহর মৃত্যুকে ‘অপমৃত্যু’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ২০১৫ সালের ১৯ এপ্রিল মহানগর দায়রা জজ আদালতে আবার রিভিশন আবেদন করেন সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী।

২০১৬ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ ৬-এর বিচারক ইমরুল কায়েস তা মঞ্জুর করে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন।

শাবনূর বলেন, সালমানকে যদি আমি পছন্দ করতাম, ভালোবাসতাম, তাকে তো মরতে দিতাম না। তাকে বাঁচিয়ে রাখতাম। সেও নিশ্চয়ই তার পছন্দের লোকের কাছেই চলে আসত।

‘এখন শুনছি একটা কাজের লোক কোথা থেকে এসেছে। সাক্ষী দিয়েছে। এমনও শুনছি, সালমান নাকি দুই স্ত্রী নিয়ে থাকতে চেয়েছিল।’

তার বিরুদ্ধে নানা অপবাদ দেয়া হচ্ছে জানিয়ে এই চলচ্চিত্র অভিনেত্রী জানান, আমি বলব– সালমান ও আমার যদি কোনো সম্পর্ক থাকত, তা হলে সামিরার উচিত ছিল আমাকে বলা। সে বলতে পারত, শাবনূর তুমি এটা করছ কেন? এত বছর তো সে এ ধরনের কথা বলেনি। এখন কেন এ কথা উঠছে?

‘তুমি আমার’ চলচ্চিত্রে জুটি হিসেবে অভিনয় শুরুর পর একসঙ্গে ১৪টি ছবিতে অভিনয় করেন সালমান শাবনূর।

শাবনূর বলেন, একসঙ্গে কাজ করেছি, দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছে, আড্ডা হয়েছে। ঘোরাঘুরির সময় সামিরাও সঙ্গে থাকত। সালমানও সামিরাকে সব জায়গায় নিয়ে যেত।

আমার মাকে বলত– আন্টি, আমার জানটাকে একটু দেখে রাইখেন। ছবিতে কাজ করতে গিয়ে দারুণ বন্ধুত্ব হয়েছে। ভাইবোনের সম্পর্ক ছিল। সালমানের মা নীলা আন্টিও সবসময় এমনটি বলতেন।

ফ্যান উপহার দেয়ার প্রসঙ্গে শাবনূর জানান, সালমান তখন অনেক বড় শিল্পী, অনেক জনপ্রিয়। আমিও কোনো অংশে কম ছিলাম না। এত বড় একজন শিল্পীকে আমি যদি কিছু উপহারও দিই, তা হলে তো বড় ধরনের কিছু দেব। গোল্ডের কিছু কিংবা ব্র্যান্ডের দামি ঘড়ি উপহার দেব। কারণ সালমান শাহ অনেক বড় একটা ব্যাপার। সবাই যে এখন বলছে, একটা কথাই বলব– শুধু একটা প্রমাণ দিক, আমার সঙ্গে সালমানের সম্পর্ক ছিল? মানুষের কথায় কিংবা কাজের লোকের কথা আমি মানব না।

তবে যতদিন এই জুটি একসঙ্গে কাজ করেছেন সালমানের হাতে কোনো ফোন দেখেননি বলে জানান এই অভিনেত্রী। তিনি বলেন, ডাবিংয়ের সময় নাকি আপত্তিকর অবস্থায় পাওয়া গেছে। যখন কোনো সিনেমার ডাবিং হয়, অনেক লোক ডাবিং ফ্লোরে থাকেন। সেখানে কি আপত্তিকর অবস্থায় দেখা যাবে? এটা তো কোনো কথাই হলো না। একজন সহশিল্পীর সঙ্গে কথা বললেই প্রেম হয়ে যায় নাকি। সামিরা যদি আমাকে সে রকম অবস্থায় দেখে, বলুক আমার সামনে এসে।

‘সামিরার কথা অনুসারে, সালমান মৃত্যুর আগে আরও দুবার আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন, তখনও কি সেটি আমার জন্য হয়েছিল?’ প্রশ্ন রাখেন শাবনূর। তিনি বলেন, আসলে সালমানের মৃত্যু কীভাবে হয়েছে, তা আমরা কেউই জানি না। আমি তো এখন বলব, আমাকে ফাঁসানোর জন্য ষড়যন্ত্র হচ্ছে। অন্য মানুষদের বাঁচাতে আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।

প্রসঙ্গত রুপালি পর্দার সালমান শাহর আনুষ্ঠানিক নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। সিলেটের জকিগঞ্জে নানাবাড়িতে ১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর তার জন্ম।

আদমজি ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ড. মালেকা সায়েন্স ইনস্টিটিউট থেকে গ্র্যাজুয়েশন করা ইমন ১৯৯২ সালে বিয়ে করেন বিউটি পার্লার ব্যবসায়ীর মেয়ে সামিরাকে। তখন তার বয়স ২২ বছর।

মঈনুল আহসান সাবেরের লেখা ধারাবাহিক নাটক ‘পাথর সময়’-এর একটি চরিত্র দিয়ে ইমনের অভিনয় ক্যারিয়ার শুরু। মাত্র সাড়ে পাঁচ বছরের চলচ্চিত্র-জীবনে ২৭টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করা সালমান শাহ ঢাকাই সিনেমার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন।

নব্বইয়ের দশকে যারা বয়সে ছিলেন কিশোর-তরুণ, তাদের অনেকের হৃদয়েই সালমান শাহ বাংলাদেশের ‘সেরা রোমান্টিক অভিনেতা’ হয়ে থাকবেন।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply