খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ

|

খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার দুপুরে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ খালেদার জিয়ার স্বাস্থ্য প্রতিবেদন বিবেচনায় নিয়ে এ বিষয়ে আদেশ দেন। আদালত বলেন, বিএসএমএমইউ তে খালেদার চিকিৎসা সম্ভব। তিনি সম্মতি প্রদান করলে মেডিকেল বোর্ডই সিদ্ধান্ত নিয়ে তাকে উন্নত চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নিক।

আদালত বলেন, বিএসএমএমইউ খালেদা জিয়ার চিকিৎসা করতে সক্ষম নয়, এমন কথা বলেনি। তার উন্নত চিকিৎসার বিষয়ে মেডিকেল বোর্ডের মাধ্যমেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

এর আগে, আজ বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি শুরু হয়। শুনানি শেষে খালেদা জিয়ার আইনজীবী আগামী রোববার আদেশের দিন ধার্যের জন্য আদালতকে অনুরোধ করেন। তারা বলেন, একটা সাপ্লিমেন্টারি দিতে চাই। তবে আদালত বলেন, এখন কোনো সাপ্লিমেন্টারি দেয়ার সুযোগ নেই।

একইসাথে জামিন বিষয়ে আজই আদেশ দেয়া হবে বলে জানান আদালত। তার আগে, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার মেডিকেল রিপোর্ট হাইকোর্ট বেঞ্চে দাখিল করা হয়। বিএসএমএমইউ’র অধীনে উন্নত চিকিৎসায় খালেদা জিয়া অনুমতি দেননি বলে জানানো হয় মেডিকেল রিপোর্টে।

রিপোর্টে বলা হয়, খালেদা জিয়ার ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, অ্যাজমা, ব্যাকপেইন ও আর্থ্রাইটিজের সমস্যা রয়েছে। তবে ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কিন্তু আর্থ্রাইটিজ ও ব্যাকপেইনের চিকিৎসার জন্য যেসব মেডিসিন পুশ করা দরকার, যেই বেটার ট্রিটমেন্ট দরকার তার জন্য খালেদা জিয়া অনুমতি দেননি। এতে করে উন্নত চিকিৎসা দেয়া যাচ্ছে না। এ সময় আদালত বলেন, আমরা এখন আদেশ দেব।

এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী আ্যডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, মাই লর্ড, আমাদের একটু আবেদন রয়েছে। তিনি কেন অনুমতি দেননি, তা জানা দরকার। আমরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে চাই। আমরা তার কাছে জানব, কেন তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন না।

জবাবে আদালত বলেন, এটা আমরা দিতে পারি না। এটার কোনো সুযোগ নেই। আমরা আদেশ দিচ্ছি।

এ সময় জয়নুল আবেদীন বলেন, মাই লর্ড, এক্ষুনি আদেশ দেবেন না। আমাদের জানা দরকার কেন তিনি চিকিৎসা নেবেন না। প্লিজ, আমাদের অনুমতি দেন।

জবাবে আদালত বলেন, এটা আমরা দিতে পারব না। আমরা আদেশ দেব।

তখন জয়নুল আবেদীন বলেন, আমাদের সম্পূরক আবেদনটি দিতে দেন। তার পর শুনে আদেশ দেন। আমাদের কোনো আপত্তি নেই।

এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম দাঁড়িয়ে বলেন, খালেদা জিয়ার এই রোগগুলো দীর্ঘদিন ধরেই আছে। যখন কোনো বন্দি কারাগারে থাকেন, তখন সরকারেরও তার বিষয়ে উদ্বেগ থাকে। এ পর্যায়ে কোনো সম্পূরক আবেদন দেয়ারও সুযোগ নেই।

এ সময় খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, মাই লর্ড, যেই মেডিসিন পুশ করার কথা বলা হচ্ছে, তা বিদেশি ওষুধ। তা পুশ করার পর কী রিঅ্যাকশন হবে, সেটা দেখা দরকার।

আদালত বলেন, তিনি কি এক্সপার্ট? তিনি কি ডাক্তার? তিনি কীভাবে বুঝবেন?

আদালত বলেন, আমরাও চিকিৎসার জন্য দরকার হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ডাক্তারদের কনসার্ন নিয়ে চিকিৎসা করি। আমাদের একজন বিচারপতি প্যারালাইজড হয়ে গেছেন। তিনিও চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে গেছেন। কিন্তু যাওয়ার আগে ঢাকা মেডিকেলের ডাক্তারের কনসার্ন নিয়ে গেছেন।

এ সময় মওদুদ আহমদ বলেন, মাই লর্ড, খালেদা জিয়ার সঙ্গে আমাদের দেখা করে জানার দরকার।

জবাবে আদালত বলেন, আপনারা কি ডাক্তার? আপনারা ট্রিটমেন্টের কী বুঝবেন?

এ সময় অপর আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, আমাদের বারবার আপনাদের কাছেই আসতে হয়। আমাদের সবকিছু বন্ধ করবেন না। আমাদের একটু অনুমতি দেন। আর এ বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী রোববার দিন ধার্য রাখেন।

আদালত বলেন, আমাদের একটি প্ল্যান রয়েছে। কোর্টের নিজস্ব প্ল্যান থাকে। সেই অনুযায়ী কোর্ট চলে।

জয়নুল আবেদীন বলেন, মাই লর্ড, এইটুকু কনসিডার করেন। আপনাদের কাছে বারবার আসতে হয়। আগামী রোববার আদেশের জন্য দিন রাখেন।

এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, মেডিকেল বোর্ড রিপোর্ট দিয়েছে। তিনি (খালেদা জিয়া) যদি চিকিৎসার অনুমতি না দেন, তাহলে মেডিকেল বোর্ডের কী করার আছে? উনার সমস্যাগুলো নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

এ সময় আদালত বলেন, ব্যাকপেইন ও আর্থ্রাইটিসের সমস্যা রয়েছে। ঠিক আছে আমরা আদেশ দিই।

পরে আবার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, মাই লর্ড, দুপুর ২টা রাখেন। পরে আদালত জামিনের আদেশের জন্য দুপুর ২টায় সময় দেন।

গত বছরের ১২ ডিসেম্বর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসনের আবেদন নাকচ করেন আপিল বিভাগ। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া দুই বছর ধরে কারাবন্দি। শারীরিক অসুস্থতা বেড়ে গেলে গত বছরের এপ্রিলে চিকিৎসার জন্য তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply