শহীদ ড. জোহা দিবস আজ

|

ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ ড. মুহম্মদ শামসুজ্জোহার শাহাদাত দিবস আজ। ১৯৬৯ সালের এ দিনে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে তাকে হত্যা করে। দিনটিকে প্রতি বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ‘শিক্ষক দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে। আজও নেয়া হয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচি।

’৬৯-এ সারা পূর্ব পাকিস্তান যখন পাকিস্তানের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণআন্দোলনে উত্তাল তখন ১৭ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসন রাজশাহী শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে সব ধরনের মিছিল-মিটিং নিষিদ্ধ করে। প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ মুক্তিকামী জনতা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে শোভাযাত্রা বের করে। তা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষের বাসভবনের সামনে পৌঁছলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে।

পরদিন সকাল থেকেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা। বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ১৪৪ ধারা ভঙ্গের প্রস্তুতি নেন। বিপরীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা দিয়ে সেখানে অবস্থান নেয় সশস্ত্র বাহিনী। তবে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা সীমানা প্রাচীর টপকে বের হওয়া শুরু করে। শিক্ষকেরা ফটকে দায়িত্বরত প্রহরীকে ফটক খুলে দেয়ার নির্দেশ দেন। প্রধান ফটক সংলগ্ন ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে তখন ছাত্র-জনতার ঢল। ছাত্ররা পাকবাহিনীর পার্ক করা একটি গাড়িতে আগুন দেয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ড. জোহা সেনা অফিসারদের সঙ্গে কথা বলার জন্য এগিয়ে যান, যেন সেনাবাহিনী কোনো উসকানিমূলক পদক্ষেপ না নেয়। ‘একটা গুলিও যদি লাগে তা আমার বুকে লাগবে’- জানিয়ে এগোতে থাকেন তিনি। সেনাবাহিনী গুলি করতে উদ্যত হলে ড. শামসুজ্জোহা বলেন, ‘প্লিজ, ডোন্ট ফায়ার, প্লিজ, ডোন্ট ফায়ার; দে আর স্টুডেন্টস। দে আর আওয়ার চাইল্ডস।’ কিন্তু ‘ফায়ার’ আদেশে মুহূর্তেই শুরু হয় এলোপাতাড়ি গুলি। গুলিবিদ্ধ হন ড. জোহা। সে অবস্থায়ই বেয়নেট দিয়ে তাকে খোঁচাতে লাগল সৈন্যরা। ভাঙতে লাগল হাড়। অন্য শিক্ষকেরা যখন এ দৃশ্য দেখে হতভম্ব, সেনাবাহিনীর একটি দল এগিয়ে এসে গ্রেফতার করলেন তাদের। হানাদার বাহিনী ড. জোহার প্রায়নিথর দেহ মিনিউসিপ্যালিটির বারান্দায় নিয়ে ফেলে রাখে। বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত তিনি এভাবে রইলেন। ৪টার দিকে সার্জিক্যাল বেডে নেয়া হলে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

১৯৩৪ সালের ১ মে পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুরের বাঁকুড়ায় জন্মগ্রহণ করেন ড. জোহা। বাঁকুড়া জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক ও বাঁকুড়া ক্রিশ্চিয়ান কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় আসেন বাংলাদেশে। ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ থেকে অনার্স ও ১৯৫৪ সালে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। কর্মজীবনের শুরুতে ড. জোহা পাকিস্তানের অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরিতে সহকারী পরিচালক হিসেবে এবং পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএসসি (স্পেশাল) ডিগ্রি, ইমপেরিয়াল কলেজের এআরসিএস ডিগ্রি লাভ করেছেন ড. জোহা।

১৯৫৯ সালের ৪ আগস্ট পশ্চিম পাকিস্তানের ওয়াহ ক্যান্টনমেন্টে সহকারী পরিচালক পদে যোগ দেন কৃতী বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ। ১৯৬১ সালের ১১ জুন ঢাকার গাজীপুরের গজারিয়া গ্রামের হায়াত আলী খানের মেয়ে নিলুফা বেগমকে বিয়ে করেন। তিনি ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত শাহ মখদুম হলের আবাসিক শিক্ষক ছিলেন। ১৯৬৮ সালে নরওয়ের অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর গবেষণার জন্য যান। ফিরে এসে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান। ১৯৬৮ সালের ১৫ এপ্রিল ড. শামসুজ্জোহা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply