করোনার কথা বলে পুলিশের কাছে আটক হন যে চিকিৎসক

|

গত ৩০ ডিসেম্বরের কথা। চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে কর্মরত এক চিকিৎসক চীনা ম্যাসেজিং অ্যাপ ‘উই চ্যাটে’ তার মেডিকেল স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের গ্রুপে নতুন একটি ভাইরাস (পরবর্তীতে যেটি করোনাভাইরাস) সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করেন। গুজব ছড়ানোর অভিযোগে লি ওয়েনলিয়াং নামে ওই চিকিৎসককে পুলিশের হাতে আটক হতে হয়। পরবর্তীতে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা করতে গিয়ে ঘটনাচক্রে তিনি নিজেই এখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। হেনস্তার শিকার হওয়া সে চিকিৎসক এখন চীনের হিরো’র মর্যাদা পাচ্ছেন।

সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চিকিৎসক লি ওয়েনলিয়াং উইচ্যাটে সতর্ক করে জানান, উহানের সি-ফুড মার্কেট থেকে সার্স ভাইরাসের মতো রোগে আক্রান্ত হয়ে সাত ব্যক্তি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তাদের পৃথক স্থানে রেখে চিকিৎসা করা হচ্ছে। তারপর সেই মেসেজটি স্ক্রিনশট আকারে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। সেখানে তার নামটিও স্পষ্ট করে বোঝা যাচ্ছিল। এতে বিপদে পড়েন ৩৪ বছর বয়সী ওই চিকিৎসক। তার বিরুদ্ধে গুজব ছড়ানোর অভিযোগ আনে উহান পুলিশ।

লি বলেন, আমি একটা টেস্ট দেখে বুঝতে পারি এটি সার্স জাতীয় এক ধরনের ভাইরাস। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠীদের সতর্ক করতে আমি ওই মেসেজ লিখেছিলাম।

অনলাইনে গুজব ছড়ানো ও সামাজিক শৃঙ্খলা ব্যাহত করার অভিযোগে ৩ জানুয়ারি স্থানীয় পুলিশ তাকে থানায় তলব করে। তাকে কিছুক্ষণ আটক করে রাখা হয়। বেআইনি কাজের কথা স্বীকার করে এবং আর কোনো আইনবিরোধী কাজ না করার অঙ্গীকার করে পরে থানা থেকে বের হন লি।

ওই দিনই উহান মিউনিসিপাল হেলথ কমিশন থেকে এক জরুরি বার্তায় জানানো হয়, সি-ফুড মার্কেট থেকে আগত ওই সাত রোগীর অজ্ঞাত নিউমোনিয়া ছিল। একই সঙ্গে সতর্ক করে জানানো হয়, কোনো সংস্থা বা ব্যক্তি চিকিৎসার তথ্য কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া প্রকাশ করতে পারবেন না।

পুলিশের কাছ থেকে ছাড়া পেয়ে উহান সেন্ট্রাল হাসপাতালে কাজে ফেরেন লি। পরে ১০ জানুয়ারি নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এক রোগীর চিকিৎসা করার সময় তিনি এতে আক্রান্ত হন। জ্বর ও কাশি নিয়ে ১২ জানুয়ারি হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এমনকি তার বাবা-মায়ের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। তিনি এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

প্রথমদিকে এ ভাইরাসের কথা গোপন রাখার চেষ্টা করেছিল চীন। সেসময় যারাই এ বিষয়ে কিছু বলার চেষ্টা করেছেন, গুজব ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয় তাদের বিরুদ্ধে। পরে পরিস্থিতি হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায় বিশ্ববাসীকে এ ভাইরাসের কথা জানাতে বাধ্য হয় দেশটি।

গত ২০ জানুয়ারি চীন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে জরুরি অবস্থা জারি করে। এদিকে হাসাপাতাল থেকেই নিজের স্বাস্থ্যগত অবস্থা ও শারীরিক বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার কথা পোস্ট করেন চিকিৎসক লি। এগুলোতে প্রচুর সাড়া পড়ে যায়।

লি’র দায়িত্বশীলতার প্রতি নির্দেশ করে অনেকেই তাকে ‘হিরো’ বলে অভিহিত করেছেন। অনেকেই বলেন, সংক্রামক রোগের লক্ষণ দেখে সতর্ক করায় লি’কে ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে। এমন পরিস্থিতি হলে ভবিষ্যতে চিকিৎসকরা তথ্য জানাতে ভয় পাবেন। চীনে আরও নিরাপদ জনস্বাস্থ্যবান্ধব পরিবেশ দরকার।

সেদিনের সেই অপদস্থ হওয়া চিকিৎসক, নিজেই এখন রোগী। তবুও তিনিই এখন নায়ক।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply