গোসলের গরম পানিই কাল হলো; আইসিইউতে শিশু সরৌশী

|

মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় শরীরে পোড়া নিয়ে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে শিশু সরৌশী। মাত্র ২ বছর ৪ মাস বয়সী শিশুটি না বুঝেই রান্নাঘরে ঢুকে পড়ে গোসলের জন্য রাখা গরম পানিতে শরীর পুড়ে ফেলেছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন তার শরীরের ৩৩ শতাংশ পুড়ে গেছে।

শিশুটির পিতা শেখ গোলামুন্নবী জায়েদ একজন গণমাধ্যমকর্মী। ঢাকায় থাকেন। স্ত্রী ওরিন নাশিদ ঋদি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তাই মেয়েকে নিয়ে তিনি চট্টগ্রামে থাকতেন। মেয়ের কাছে থাকার জন্য ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শেখ গোলামুন্নবীর চট্টগ্রাম অফিসে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এর মধ্যেই এই দুর্ঘটনা তাদের সব হিসেবকে এলোমেলো করে দিয়েছে।

আবেগাক্রান্ত বাবা ফেসবুকে লিখেছেন, মাত্র কথা বলা শিখেছে আমার মেয়েটা। ভাঙা ভাঙা শব্দে অনেক কথা বলে। এক, দুই, তিন গুনে। তারপর আমাকে বলতে হয়, আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি। মেয়েটি বাংলাদেশকে বলে ‘বান্দাদেশ’। বঙ্গবন্ধুকে বলে ‘বন্দবনু’। আমার মেয়ে জাতীয় সংগীতের প্রথম লাইন পারে। আমার ২ বছরের মেয়ে সারেগামা পারে সুরে। আমার মেয়ে গান গায়.. ‘বুলবুল পাখি ময়না টিয়ে’… আমার মেয়ে আরো কতো কতো গান ছড়া আমায় শোনায়!। নিজে নিজে শিখেছে। সালাম পারে কালেমা জানে।…

জানা গেছে, গত ২৪ জানুয়ারি বিকেলে সরৌশীর মা ঋদি মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় মায়ের অজান্তে রান্নাঘরে যায় সরৌশী। সেখানে রাখা গরম পানির গামলা নিয়ে খেলা করতে গেলে গরম পানি তার শরীরে এসে পড়ে। টের পেয়ে সাথে সাথেই তার মা শরীরে ঠাণ্ডা পানি ঢালে। কাপড় খুলতে গেলে তার সাথেই শিশুটির শরীরের চামড়া ওঠে আসে।

ঘটনার পর প্রথমে শিশুটিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে পরে গত রবিবার রাতে তাকে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করানো হয়। সরৌশী বর্তমানে চিকিত্সক প্রদীপ চন্দ্র দাসের অধীনে চিকিৎসাধীন।

সরৌশীর সবশেষ অবস্থা জানিয়ে মঙ্গলবার তার পিতা লিখেছেন, আমি বিশ্বাস করি আমার সরৌশী সম্পূর্ণ সুস্থ হবে, বড় হয়ে মানবিক বোধসম্পন্ন মানুষ হবে।

তিনি আরও লিখেছেন, জন্মের আগে আল্ট্রাসানোগ্রাফিতে দেখা যায় সরৌশীর গলায় নাড়ি পেঁচানো। ১২ দিন আগেই অপারেশন করতে হয়েছে। এরপর অসুস্থ হয়েছে অনেকবার। আমার মায়ের এবারের পরীক্ষাটা বেশ কঠিন। তাই এবার সবাই ওর সাথে। সবাই দোয়া করছেন। দোয়ারই আবেদন রাখছি। এবারের লড়াই আরো শক্তিশালী। ওর অনেক ধৈর্য্য আমার সরৌশীর। ও জিতবে। ইনশাআল্লাহ।

আকস্মিক দুর্ঘটনায় শিশু সরৌশীর এমন সংকটাপন্ন অবস্থায় আত্মীয়-স্বজন ও পরিবার পরিজনের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply