মধ্যপ্রাচ্যকে সংঘাত থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করে গেছেন সুলতান কাবুস

|

(FILES) In this file photo taken on November 29, 2010, Oman’s Sultan Qaboos bin Said salutes at the start of a military parade at a stadium in Muscat on the occasion of the Sultanate's 40th National Day. - Sultan Qaboos, who ruled Oman for almost half a century, has died at the age of 79, the Omani news agency said January 11, 2020. Qaboos, the longest ruling Arab monarch, had been ill for some time and had been believed to be suffering from colon cancer. (Photo by MOHAMMED MAHJOUB / AFP)

ওমানের সদ্য প্রয়াত সুলতান কাবুস সাবেক আরব উপদ্বীপটিকে একটি পশ্চাৎপদ অবস্থা থেকে আধুনিক রাষ্ট্রে রূপ দিয়েছিলেন। নিজের সালতানাতকে তিনি যেমন আঞ্চলিক উত্তেজনা থেকে দূরে রাখছিলেন, তেমনি মধ্যপ্রাচ্যের বেশিরভাগ সংঘাতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ভূমিকা রেখে অঞ্চলটিকে সংঘাত থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করে গেছেন আজীবন।

আধুনিক আরব বিশ্বের দীর্ঘ সময়ের (৪৯ বছর) শাসক ছিলেন তিনি।

১৯৪০ সালের ১৮ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন কাবুস। দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রাদেশিক রাজধানী সালালাহে কয়েক বছরের পুরনো আল-সাঈদ রাজপরিবারে তার জন্ম।-খবর এএফপির

বয়স্ক ওমানিরা বলছেন, রাজধানী মাস্কাটে তখন কোনো বিদ্যুৎ কিংবা পয়োঃনিষ্কাষণ ছিল না। শহরের মধ্যযুগীয় ফটকগুলো সন্ধ্যার পরপরেই বন্ধ করে দেয়া হত।

পড়াশোনার জন্য ব্রিটেনে পাঠানো হয় তরুণ কাবুসকে। স্যান্ডহাস্ট রয়েল সামরিক অ্যাকাডেমি থেকে ১৯৬২ সালে স্নাতক ডিগ্রি নেন তিনি।

পরে ব্রিটিশ পদাতিক বাহিনীতে যোগ দিয়ে জার্মানিতে চলে যান। তার বাবা সুলতান সাঈদ বিন তাইমুরের কড়া নজরদারি থেকে বাঁচতে অনুকূল সময়ের অপেক্ষায় ছিলেন কাবুস।

প্রাসাদ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ১৯৭০ সালের ২৩ জুলাই বাবাকে সিংহাসনচ্যুত করেন তিনি। এরপর দেশের এক নতুন যুগের প্রতিশ্রুতি দেন।

হরমুজ প্রণালীর তীরে ও দুই চিরবৈরী ইরান-সৌদি আরবের মাঝে কৌশলগত অবস্থানে ওমান। কিন্তু দুই দেশের সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক ছিল কাবুসের।

ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্কের কারণে সামরিক প্রধানসহ পশ্চিমা ও আরব কূটনীতিকদের আবশ্যক বিরতিতে পরিণত হয়েছিল মাস্কাট।

সুলতানের প্রথম বিদেশ সফর ছিল ইরানে। বিচ্ছিন্ন দোফার অঞ্চলে উত্তরাধিকার সূত্রে বাবার কাছ থেকে পাওয়া মার্ক্সবাদী বিদ্রোহ দমনে সক্ষম হন তিনি। এতে ইরানের শাহ শাসক ও ব্রিটিশরা তাকে সহায়তা করে।

১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামী বিপ্লব সত্ত্বেও সেই সম্পর্ক টিকে আছে। ২০১৫ সালে পরমাণু চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে নেপথ্য যোগাযোগে ভূমিকা রেখেছে ওমান।

এছাড়া সৌদি আরব ছাড়াও আরব উপসাগরীয় বাকি ছয় দেশের সঙ্গে কাবুসের ভালো সম্পর্ক ছিল। তবে কোনো হস্তক্ষেপ করা যাবে না, এই নীতিতে তিনি অটল ছিলেন।

২০১৫ সালে ইয়েমেনের বিরুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটে অংশ নেয়নি ওমান। এতে নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে ইয়েমেনে যুদ্ধরত বিভিন্ন গোষ্ঠীদের মধ্যে বন্দিবিনিময়ে সহায়তা করতে পেরেছেন কাবুস।

ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ সামরিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে দেশটি। ২০১৮ সালের অক্টোবরে ইসলাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক করেন কাবুস। এতে দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ নিয়ে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল।

২০১১ সালের আরব বসন্তেও তাকে খুবই কম বিক্ষোভের মুখোমুখি হতে হয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগ মন্ত্রীদের বরখাস্ত করেই সেই অবস্থা মোকাবেলায় সক্ষম হন তিনি।

কিন্তু বিরোধীদের জন্য কোন জায়গা রাখেনি তার সরকার। স্বাধীন আজ্জাম পত্রিকা বন্ধ করে দিয়ে তার সম্পাদককে কারাগারে পাঠান।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply