মাকে হারিয়ে কান্নার পর গহীন বনে নিরুদ্দেশ সেই হাতি শাবক

|

কক্সবাজারের ঈদগাঁও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাইস্যার ঘোনা এলাকায় পড়েছিল মায়ের নিথর দেহ। মৃত মায়ের পাশে দেড় বছর বয়সী হাতি শাবকটি বারবার শুয়ে পড়ছিল। এমনকি কান্নাও করছিল।

হাতি শাবকটি মাকে ছোট্ট শুঁড় দিয়ে তুলতে চেষ্টা করে। চারপাশে বার বার ঘুরপাক খাচ্ছিল; পরে ব্যার্থ হয়ে গহীন অরণ্যে নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে সেই হাতি শাবকটি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বছর দেড়েক মায়ের সঙ্গে চলে প্রকৃতি চেনে সে হাতি শাবকটি। মাটিতে অসাড় পড়ে থাকা মাকে তুলতে চেষ্টা করে। এরপরও কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে মায়ের পাশে ছোট্ট হাতিটিও শুয়ে পড়ে। আবার শুঁড় দিয়ে স্পর্শ করে মাকে। এসময় তার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছিল। ছোট্ট হাতি শাবকের এই করুণ দৃশ্য উপস্থিত সবাইকে ব্যথিত করে তোলে।

কক্সবাজারের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও-উত্তর) মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, হাতিশাবককে বাঁশপাতা ও অন্য খাবারগুলো দিলে শাবকটি সেগুলো খায়। উপস্থিত চিকিৎসকরা শাবকটি নিজেকে সামলানোর মতো বয়স বহন করছে বলায় তাকে বনেই ফেরাতে চেষ্টা চলে। রাতে লোকজন চলে আসার পর হাতিশাবকটিও বনে চলে যায়। তবে সেখানে বনকর্মী ও ভিলেজারদের নজর রাখতে বলা হয়েছিল।

তিনি আরও বলেন, শনিবার বিকালে ঈদগাঁওর ফুলছড়ি রেঞ্জের রাজঘাট বিটের জঙ্গল খুটাখালী মৌজার কাইস্যার ঘোনা নামক এলাকায় মৃত মা হাতির সন্ধান পায় বন বিভাগ।

পরে প্রাণি সম্পদ অধিদফথরের চিকিৎসকসহ প্রতিনিধিরা ঘটনাস্থলে যান। ময়নাতদন্তের জন্য হাতির শরীরের ফুসফুস, হৃদপিণ্ডসহ শরীরের নানা অংশ নেয়া হয়। সেখানে যা দেখলাম মৃত হাতিটির ফুসফুসে পানি জমেছে।

ধারণা করা হচ্ছে কোনো কঠিন রোগে ভুগছিল হাতিটি। তার শরীরে গুলির চিহ্নের মতো চিহ্নগুলো গাছের গুড়ালির আঘাত হতে পারে। গুলির চিহ্ন ভিন্নতর হয়। তার শরীরের ক্ষতের চিহ্নগুলো থেকে জীবাণু অন্য প্রাণীদের গায়ে সংক্রমণ হতে পারে ভেবে রাত ৯টার দিকেই তাকে পাওয়া স্থানেই পুঁতে ফেলা হয়েছে।

তবে শনিবার শেষ রাতে অন্য হাতির পালের সঙ্গে বাচ্চা শাবকটিও মৃত হাতি পুঁতে ফেলা স্থানে এসে ঘুরে গেছে।

এর আগে বিকালে সদর উপজেলার ঈদগাঁর ইসলামাবাদ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাইস্যার ঘোনা এলাকায় এ মৃত হাতির সন্ধান পান রাবার বাগানের শ্রমিকরা।

রাত ১০টার দিকেও হাতি শাকবটিকে মায়ের লাশের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।

রাবার বাগানের শ্রমিকরা জানান, শনিবার সকাল থেকে মা হাতিটি অস্থির ছিল এবং বাচ্চা নিয়ে ছোটাছুটি করছিল। দুপুরের পর হাতিটিকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন শ্রমিকরা।

মৃত মায়ের পাশে এক বছর বয়সী হাতি শাবকটি বারবার শুয়ে পড়ছিল। এমনকি কান্নাও করছিল। মায়ের পাশে গিয়ে স্পর্শ করার দৃশ্য দেখে লোকজন আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে। এতে এলাকায় এক হৃদয় বিদারকদৃশ্যের অবতারণা হয়।

মা হাতিটির শরীরে বেশ কয়েকটি আঘাতের চিহ্ন ছিল। অসহ্য যন্ত্রণায় হাতিটির মৃত্যু হয়েছে।

এ ঘটনার দেখে রাবার শ্রমিকরা রাজঘাট বিট কর্মকর্তাকে জানালে বন বিভাগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান।

কক্সবাজারের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি হাতি শাবকটি মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। শাবকটি সেখান থেকে সরছিল না।

তবে ময়নাতদন্তের জন্য এরইমধ্যে প্রাণীসম্পদ অধিদফতরের চিকিৎসকরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply