পুরি বিক্রেতা থেকে কোটিপতি ক্রিকেটার; বললেন, টাকা পয়সা কিছু না

|

এক সময় পানি পুরি বিক্রি করতো ছেলেটি। এ দিয়েই পেট চালাতো। তবে, তার ধ্যান জ্ঞান ছিল ক্রিকেট। মানুষ চাইলে কী না হয়? সেই ছেলেটিই এখন আইপিএলের বদৌলতে কোটিপতি। জীবনের এই টার্নিং পয়েন্টে এসেও তার সরল উপলদ্ধি, টাকা পয়সা বড় কিছু না। এটি সাফল্যের উপজাত (বাই প্রোডাক্ট) মাত্র!

বলা হচ্ছে, রাজস্থান র‍য়্যালসের নতুন রিক্রুট যশস্বী জসওয়ালের কথা। ২ কোটি ৪০ লাখ রুপি দিয়ে মুম্বাইয়ের এই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানকে কিনেছে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। ২০ লাখ টাকা বেস প্রাইসের এই ক্রিকেটারকে কিনে চমক দিল আইপিএলের প্রথমবারের চ্যাম্পিয়নরা।

অথচ বছর দুয়েক আগেও যশস্বীর জীবনটা ছিল অন্যরকম। ছিলেন প্রচণ্ড আর্থিক অনটনে। উত্তরপ্রদেশ থেকে চলে যান মুম্বাইয়ে। রাস্তায় পানি পুরি বিক্রি করে জীবন চালাতেন। কিন্তু ক্রিকেটের প্রতি তীব্র আকর্ষণ কাজ করতো তার মধ্যে। সুযোগ পেলেই ছুটে যেতেন মাঠে। মাথা গোঁজার ঠাঁই বলতে মুম্বাইয়ের আজাদ ময়দানে মুসলিম ইউনাইটেড ক্লাব তাবুতে কোনরকমে দিন গুজরান। একসময় নজরে পড়েন কোচ জেওলা সিংয়ের। ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন পূরণের সুযোগ মেলে।

তবে পানি পুরি বিক্রি বন্ধ হয়নি। মাঝেমাঝে সতীর্থরাও পানি পুরি কিনতে যেতেন তার কাছে। যশস্বী জানান, রামলীলার সময় ফুচকা বিক্রি করে ভালোই অর্থ উপার্জন হতো। তবে আমি চাইতাম আমার সতীর্থরা যেন আমার কাছে ফুচকা না খেতে আসে; কিন্তু কখনও কখনও তারা আসত। যদিও ওদের কাছে ফুচকা বিক্রি করতে খুব খারাপ লাগতো আমার।

ক্রিকেটার হিসেবে কঠোর পরিশ্রমের সুফল পান যশস্বী। চলতি বছরের শুরুর দিকে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে ৪টি হাফ সেঞ্চুরি, বিজয় হাজারে ওয়ানডে ট্রফিতে ২২৪ রান ও ৮ উইকেট নিয়ে পাদপ্রদীপের আলোয় আসেন তিনি। এরপর অক্টোবরে বিজয় হাজারে ট্রফিতে ঝাড়খন্ডের বিরুদ্ধে ১৫৪ বলে ২০৩ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলেন। এতে ছিল ১৭টি চার ও ১২টি ছক্কা।

২০২০’র আইপিএল নিলাম যেন খোলনলচে পাল্টে দিলো তার জীবন। এখন পুরো পাড়ার মানুষকে বিনামূল্যে পানি পুরি খাওয়াতে পারবেন যশস্বী। কোটি টাকায় রাজস্থান রয়্যালস কিনে নিয়েছে সতেরো বছর বয়সী এই ক্রিকেটারকে। বছরখানেক আগেও পানি পুরি বিক্রি করে চলা ছেলেটিকে জস বাটলারের ওপেনিং পার্টনার হিসেবে দেখলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

কোটিপতি হয়েও গাড়ি বাড়ির দিকে কোনো ঝোঁক নেই তার। সমস্ত টাকা জমা দিয়েছেন কোচ জেওলা সিংয়ের হাতে। বলেছেন, তিনি আমাকে আশ্রয় দিয়েছেন, পরিচর্যা করেছেন। সমস্ত অর্থ তার হাতে তুলে দিবো। তিনিই ঠিক করবেন এগুলো দিয়ে আমি কী করবো।

জীবনের কঠিন দিনগুলোর দিকে ফিরে তাকিয়ে যশস্বীর সাফ কথা, টাকা পয়সা বড় কিছু না। যেকোনো সাফল্যের জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। আর সাফল্য এলে উপজাত হিসেবে অর্থও আসবে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply