পেঁয়াজের দাম পাইকারিতে কমলেও খুচরায় প্রভাব নেই

|

নতুন পেঁয়াজে ভরে গেছে বাজার। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করে সরবরাহ বাড়ানো হচ্ছে। এতে রাজধানীর পাইকারি বাজারে কমতে শুরু করেছে পেঁয়াজের ঝাঁজ। দুই দিনের ব্যবধানে কেজিতে সর্বোচ্চ ৯০ টাকা কমেছে।

তবে খুচরা বাজারে এর কোনো প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। বিক্রেতারা এখনও কারসাজি করে বাড়তি দরেই বিক্রি করছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে পুরনো দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২৩০-২৫০ টাকা। গত এক সপ্তাহ ধরে এই পেঁয়াজ একই দরে বিক্রি হচ্ছে। আর নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১২০-১৫০ টাকা। এছাড়া আমদানি করা পেঁয়াজ প্রতিকেজি বিক্রি হয়েছে ১০০-২০০ টাকা।

এদিন রাজধানীর পাইকারি বাজারে নতুন দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫৮ থেকে সর্বোচ্চ ৭০ টাকা। যা দুই দিন আগে বিক্রি হয় ১৪০ টাকা কেজি। এছাড়া আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৪০-৮৫ টাকা। যা দুই দিন আগে বিক্রি হয় ৭০-১৫০ টাকা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়-মিয়ানমার, মিসর ও চীন থেকে প্রতিদিনই পেঁয়াজ দেশে আসছে। বৃহস্পতিবারও প্রায় পাঁচ হাজার টন পেঁয়াজ বিভিন্ন বন্দর দিয়ে ছাড় হয়েছে। টিসিবির মাধ্যমে এখনও ৪৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, চলতি মৌসুমে দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে মুড়িকাটা পেঁয়াজসহ মাঝারি আকারের পেঁয়াজে বাজার ভরে গেছে। তারপরও গুটিকয়েক বিক্রেতার কাছে সাধারণ ভোক্তারা জিম্মি।

উল্লেখ্য, ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের পর থেকেই দেশে পেঁয়াজর দাম বাড়তে থাকে। রাজধানীর খুচরা বাজারে নিত্যদিনের এই পণ্যটির দাম সর্বোচ্চ ২৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। কোনো কোনো স্থানে পণ্যটি ৩০০ টাকায়ও বিক্রি হয়। দাম কমাতে সরকারের একাধিক সংস্থা বাজার তদারকি করে। যা এখন পর্যন্ত অব্যাহত আছে। আর সরবরাহ বাড়াতে বিমানে করেও পেঁয়াজ আনা হয়। তারপরও বাজারে এর প্রভাব নেই।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর শ্যামবাজারের কয়েকজন পেঁয়াজ আড়তদারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুরনো দেশি পেঁয়াজ আড়তে আর নেই। নতুন দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ অনেক বেড়েছে। প্রতিকেজি মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০-৮৫ টাকা।

যা দুই দিন আগে বিক্রি হয়েছে ১৪০-১৫০ টাকা। মিসরের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি। যা দুই দিন আগে বিক্রি হয়েছে ১১০ টাকা। চীনের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা। যা দুই দিন আগে বিক্রি হয়েছে ৭০ টাকা।

এদিকে এদিন রাজধানীর কারওয়ান বাজার, নয়াবাজার ও শান্তিনগর কাঁচাবাজারে খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ১৯০-২০০ টাকা। মিসরের পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ১৭০-১৮০ টাকা। চীন থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ১০০-১২০ টাকা। অর্থাৎ পাইকারি বাজারে দাম কমলেও খুচরা বাজারে বাড়তি দরেই বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ।

এ বিষয়ে শ্যামবাজারের পাইকারি পেঁয়াজ আড়তদার ও আমদানিকারক শংকরচন্দ্র ঘোষ জানান, পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। এতে করে দামও কমে গেছে। কিন্তু রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে বিক্রেতারা এখনও বেশি দরেই বিক্রি করছেন। তারা এখনও ভোক্তাকে পুঁজি করে অনৈতিকভাবে ব্যবসা করছেন; যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

জানতে চাইলে নয়াবাজারের খুচরা বিক্রেতা মো. জাহিদুল বলেন, ‘দেশে এখন পুরনো দেশি পেঁয়াজ নেই। যা কেনা ছিল তাই বিক্রি করছি। আর এই পেঁয়াজগুলো আগে বেশি দামে কেনা ছিল। যে কারণে এখনও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে নতুন পেঁয়াজ ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আমদানি করা পেঁয়াজ নতুন করে আর আনা হয়নি।

যে কারণে বেশি দরেই বিক্রি করতে হচ্ছে। নতুনভাবে আনার সময় কম দাম পেলে, খুচরাতেও দাম কমবে।’

একই যুক্তি দিয়ে কথা বলেছেন কারওয়ান বাজারের খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতা মো. সোনাই আলী। তিনি বলেন, ‘আমদানিকারকরা এতদিন বেশি দরে বিক্রি করেছে। সেখানে কিছু হয়নি। আর আমরা খুচরা বিক্রেতারা এখন বেশি দরে বিক্রি করলেই দোষ। পাইকারিতে দাম কমেছে তাতে আমাদের কি? বেশি দরে পেঁয়াজ আনা।

তাই বেশি দর দিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে।’ জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, বাজারে এখন পেঁয়াজের সরবরাহ ভালো। দামও কমতে শুরু করেছে। তবে যতটুকু জানতে পারলাম, পাইকারিতে কমলেও খুচরাতে এর কোনো প্রভাব নেই। তিনি বলেন, বাজারে খুচরা বিক্রেতাদের কারসাজির এখনও প্রবণতা রয়েছে।

যে কারণে তারা এখনও বাড়তি দরে বিক্রি করছে। এতে পেঁয়াজের দাম কমতে থাকলেও এর সুফল ভোক্তা পর্যায়ে পড়ছে না। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের পর পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। তবে এখনও যারা দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে, তাদের শাস্তির আওতায়া আনা হবে। আর বাজার তদারকির মাধ্যমে পাইকারি থেকে খুচরা পর্যায়ে দাম সমন্বয় করা হবে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply